আর্থিক সমস্যা আড়াল করতে মেসিকে ‘ধুম্রজাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে বার্সেলোনা

মেসির বার্সেলোনায় প্রত্যাবর্তন কি আসলেই ঘটবে?রয়টার্স

লিওনেল মেসি কি বার্সেলোনায় ফিরবেন? বার্সেলোনা সমর্থকদের কাছে এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সমর্থকদের যে দলটি মেসির বার্সায় ফেরা দেখছেন না, সে দলে যোগ হলো বেশ শক্তিশালী এক নাম—জউমে লপিস।

ভদ্রলোকের পরিচয় আগে দেওয়া যাক। তিনি অর্থনীতির অধ্যাপক এবং বার্সেলোনার সাবেক পরামর্শকমণ্ডলীর সদস্য। বর্তমান সভাপতি হোয়ান লাপোর্তার সঙ্গে ব্যবস্থাপনার কাজও করেছেন। তাঁর বিশ্বাস, মেসি বার্সায় ফিরবেন না। আর্জেন্টাইন তারকার ক্যাম্প ন্যুতে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে বার্সা নাকি ইচ্ছা করেই এই ধুম্রজাল তৈরি করেছে। কারণ, তাতে ক্লাবের আর্থিকসহ অন্যান্য সমস্যা যে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।

কাতারে গত ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, মেসির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করবে পিএসজি। কিন্তু এত দিন গড়িয়েও তা আলোর মুখ দেখেনি এবং পিএসজিতে এটাই মেসির শেষ মৌসুম বলেও মনে করা হচ্ছে।

ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলো এর আগে কয়েকবার জানিয়েছে, প্যারিসে আর মন টিকছে না মেসির। তা ছাড়া বার্সার পক্ষ থেকেও গত মাসে জানানো হয়, মেসিকে ক্যাম্প ন্যুতে ফেরাতে পিএসজির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তখনই আশাটা জেগে উঠেছে বার্সার সমর্থকদের মধ্যে। সাম্প্রতিক সময়ে সে আশা আরও ডালপালা মেলেছে।

কারণ, লা লিগা সভাপতি থেকে স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি লুইস রুবিয়ালাসও জানিয়েছেন, মেসি বার্সায় ফিরলে তাঁকে স্বাগত জানানো হবে। লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস মেসির ফেরার প্রক্রিয়াকে ‘জটিল’ বললেও আশার কথাও কিন্তু বলেছিলেন।

পিএসজির জার্সিতে সময়টা খুব স্বস্তির যাচ্ছে না মেসির
রয়টার্স

কিন্তু বাস্তবতাটা বিবিসিতে ব্যাখ্যা করেছেন স্প্যানিশ ক্রীড়া সাংবাদিক ও বিশ্লেষক গিয়েম বালেগ। তিনি নিজের কলামে লেখেন, খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক হিসেবে বার্সেলোনার বর্তমান খরচ ৬০ কোটি ইউরো। এই অঙ্কটা ২০ কোটি ইউরো কমিয়ে ৪০ কোটিতে নামিয়ে আনার আগে মেসিকে কেনার জন্য পিএসজিতে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবও দিতে পারবে না বার্সা। এমনকি মেসিকে ফেরানো দূর অস্ত, আগামী মৌসুমের জন্য গাভি, রোনার্ড আরাউহো, মার্কোস আলোনসোদেরও নিবন্ধন করাতে পারবে না বার্সা। নতুন খেলোয়াড় কেনা তো আরও দূরের বিষয়।

এবার জউমে লপিসের প্রসঙ্গে ফেরা যাক। সংবাদমাধ্যম গোল ডটকম মেসির বার্সায় ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। বার্সার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থাকে ‘নাটকীয়’ বলেই মনে করেন লপিস। এখন ‘এস্পাই বার্সা’ প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত ক্যাম্প ন্যুরের কর্মকর্তারা। এটি ক্যাম্প ন্যু সংস্কারের প্রজেক্ট, বার্সা যাকে বিশ্বমানের ‘স্পোর্টস হাব’ বানাতে চায় আর সে জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থও অনুমোদন করিয়ে নিয়েছে।

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’য় এ বিষয়ে লপিসের মন্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে, ‘তারা (বার্সা) যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি অবৈধ। এই পুরো এস্পাই বার্সা প্রজেক্টের জন্য ১৫০ কোটি ইউরো পাস করানো হয়েছে এবং এই টাকা কিন্তু শুধু স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য নয়। অথচ তারা দাবি করছে প্রজেক্ট মাত্র ২০ কোটি ইউরোর! বার্সা এই মুহূর্তে এস্পাই বার্সা প্রজেক্ট সফল করতে মরিয়া।’

অর্থনৈতিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে বার্সা এরই মধ্যে কয়েকটি ‘লেভার’ ব্যবহার করেছে। লেভার একটা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ক্লাবের বিভিন্ন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির আংশিক বা পুরোটা বিক্রি করে ত্বরিত অর্থ জোগাড় করা হয় দেনা শোধ করা ও অন্যান্য দায় মেটানোর জন্য। মেসির বার্সায় ফেরার সম্ভাবনার আলোচনা তুলে বার্সা এটাকে ‘আরেকটি লেভার’ হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে বলে মনে করেন লপিস।

মেসির পরবর্তী গন্তব্য কোথায়?
রয়টার্স

আর্জেন্টাইনের ক্যাম্প ন্যুতে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে লপিস স্পষ্টই বলেছেন, ‘সে আসবে না। ক্লাবের সমস্যা আড়াল করতে এটা আরেকটি ধুম্রজাল।’ অর্থাৎ বার্সা এখন এস্পাই প্রজেক্ট নিয়েই বেশি ব্যস্ত। আর মেসিকে ফেরানোর প্রসঙ্গটা তোলা হয়েছে অর্থনৈতিক সব সমস্যা আড়াল করতে, এমনটাই মনে করেন লপিস।
সময় হলেই বোঝা যাবে, কোন পক্ষের দাবি সঠিক।