২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

জার্মানিকে ১৯৯০ বিশ্বকাপ জেতানো ব্রেমা আর নেই

আন্দ্রেয়াস ব্রেমা (১৯৬০–২০২৪)রয়টার্স

জার্মানির হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ৮৬টি। নানা পজিশনে খেললেও মূলত রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হওয়ায় নামের পাশে ৮ গোল বেশ মানানসই। আর এই ৮ গোলের মধ্যে ৫টিই বিশ্বকাপে। আন্দ্রেয়াস ব্রেমাকে তাই বড় ম্যাচের পারফরমার হিসেবে মনে রেখেছে জার্মান ফুটবল।

বিশেষ করে ১৯৯০ বিশ্বকাপ ফাইনাল। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে গোলশূন্য ছিল তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি। ৮৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্রেমার গোল জার্মানিকে এনে দিয়েছিল তৃতীয় বিশ্বকাপ আর কাঁদিয়েছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে। ৩৪ বছর পর (পশ্চিম) জার্মানির ১-০ গোলের সেই জয় স্মরণ করার কারণও ব্রেমা। ৬৩ বছর বয়সে মারা গেছেন জার্মানির সাবেক এই ডিফেন্ডার।

আরও পড়ুন

ব্রেমার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তাঁর সাবেক ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ, ‘আন্দ্রেয়াস ব্রেমার হঠাৎ মৃত্যুতে বায়ার্ন মিউনিখ গভীরভাবে শোকাহত। বিশেষ মানুষ এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আন্দ্রেয়াস ব্রেমা সব সময় আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।’ ব্রেমার জীবনসঙ্গী সুজান শেফার গতকাল রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বিবৃতিতে বলেছেন, হার্ট অ্যাটাকে ‘হঠাৎ এবং অপ্রত্যাশিতভাবে’ মারা গেছেন।

বেশি দিন আগের কথা নয়, মাত্র দুই মাসেরও কম সময় আগে ১৯৯০ বিশ্বকাপেরই আরেক কিংবদন্তিকে হারিয়েছে জার্মান ফুটবল। গত ৮ জানুয়ারি মারা গেছেন ১৯৯০ বিশ্বকাপে জার্মানির কোচ এবং ১৯৭৪ সালে অধিনায়ক হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। তাঁরই কোচিং-ধন্য ব্রেমাও এবার অন্যলোকে কিংবদন্তির সঙ্গী হলেন।

১৯৯০ বিশ্বকাপে ব্রেমার কাছ থেকে জয়সূচক গোল পেয়েছিল তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি
রয়টার্স

১৯৬০ সালে হামবুর্গে জন্ম নেওয়া ব্রেমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ১৯৭৮ সালে স্থানীয় ক্লাব এইচএসভি বার্মবেক-উলেনহোর্স্ট ক্লাবে। বায়ার্ন মিউনিখ, ইন্টার মিলান এবং কাইজারস্লাটার্নে দুই দফা মিলিয়ে ২০ বছরের পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ার ব্রেমার। ইন্টারের হয়ে সিরি ‘আ’ এবং বায়ার্নের হয়ে বুন্দেসলিগা জয়ের পর ১৯৯৮ সালে কাইজারস্লাটার্নের হয়ে জার্মানির শীর্ষ লিগ জিতেই অবসর নিয়েছিলেন ব্রেমা। বায়ার্নে দুই মৌসুমের ক্যারিয়ারে খেলেছেন ইউরোপিয়ান কাপের (১৯৮৬-৮৭) ফাইনালেও। রিয়াল জারাগোজায় এক মৌসুমে খেলেছিলেন স্প্যানিশ কোপা দেল রে ফাইনালেও (১৯৯২-৯৩)।

আরও পড়ুন

অবসর নেওয়ার পর কোচিংয়েও নেমেছিলেন ব্রেমা। ২০০০ সালে নিজের সাবেক ক্লাব কাইজারস্লাটার্নের কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। দল অবনমনে নেমে যেতে পারে—এ শঙ্কায় ২০০২ সালে তাঁকে ছাঁটাই করা হয়েছিল। এরপর আরও দুটি দলের (একটি স্টুটগার্টের সহকারী কোচ) কোচের দায়িত্ব নিলেও ২০০৬ সালেই শেষ হয় ব্রেমার কোচিং ক্যারিয়ার।

জার্মানির হয়ে তিনবার ইউরো (১৯৮৪, ১৯৮৮ ও ১৯৯২) ও তিনবার (১৯৮৬, ১৯৯০ ও ১৯৯৪) বিশ্বকাপে খেলেছেন ব্রেমা। ’৮৪ ও ’৯২ ইউরোর সেরা দলেও জায়গা পেয়েছিলেন। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ‘অলস্টার দল’-এ ছিলেন ১৯৮৬ এবং সেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও ফ্রি-কিক থেকে গোল করা ব্রেমা। ১৯৯৪ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে বুলগেরিয়ার কাছে হারের মধ্য দিয়ে শেষ ব্রেমার জাতীয় দলের ক্যারিয়ার। দেশের হয়ে সেটাই ছিল তাঁর শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ।

ব্রেমার গোলে ১৯৯০ বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে কেঁদেছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ম্যারাডোনা
এএফপি

ব্রেমা মূলত লেফটব্যাক হলেও রক্ষণ ও মাঝমাঠ মিলিয়ে খেলতে পারতেন বিভিন্ন পজিশনে। ট্রান্সফার মার্কেট জানাচ্ছে, রক্ষণ ও মাঝমাঠ মিলিয়ে ১০টি পজিশনে খেলেছেন। সেট পিসে বিশেষজ্ঞ এবং ফ্রি-কিক নেওয়ায় নিজের প্রজন্মের অন্যতম সেরা ছিলেন। দুই পায়ে এতটাই দক্ষ ছিলেন যে ব্রেমার খেলার ধরন নিয়ে সবচেয়ে মজার কথাটা বলে গেছেন বেকেনবাওয়ার, ‘আমি আন্দ্রেয়াসকে ২০ বছর ধরে চিনি, কিন্তু এখনো ঠিক জানি না সে বাঁ পা নাকি ডান পায়ের খেলোয়াড়।’

আরও পড়ুন