প্রিমিয়ার লিগে বেশি পেনাল্টি আদায় করেছেন কে, পেয়েছে কোন দল
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে পরশু ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেডের বিপক্ষে ৩–১ গোলে হেরেছে চেলসি। রাহিম স্টার্লিং এ ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়—৬ বার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়েছেন, পেনাল্টি আদায় করেছেন আর গোল হওয়ার মতো বেশ কিছু পাসও দিয়েছেন। কিন্তু ভালো খেলেও হার নিয়ে মাঠ ছাড়ার তেতো অভিজ্ঞতা পেয়েছেন ইংল্যান্ড তারকা। তাই বলে সবকিছুই ‘তেতো’ ছিল না। ওয়েস্ট হামের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার টমাস সুচেকের কাছ থেকে পেনাল্টি আদায় করে এক রেকর্ডে সবার ওপরে উঠেছেন স্টার্লিং।
সেই রেকর্ডটি কী—তা বলতে হলে ফিরতে হবে এ বছরের মে মাসে। ফুলহাম ও লেস্টার সিটির মধ্যে সেটি ছিল গত মৌসুমের ম্যাচ। গোল উৎসবের সেই ম্যাচে লেস্টারকে ৫–৩ ব্যবধানে হারিয়েছিল ফুলহাম। দুই পেনাল্টির সে ম্যাচে প্রথমটি আদায় করেছিলেন লেস্টার স্ট্রাইকার জেমি ভার্ডি।
ফুলহাম গোলকিপার বের্নাদ লেনো তাঁকে বক্সে ফাউল করেছিলেন। সেই পেনাল্টি আদায়ের মধ্য দিয়ে রাহিম স্টার্লিংয়ের একটি রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছিলেন ভার্ডি। রেকর্ডটি হলো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পেনাল্টি আদায়। ভার্ডির কপাল খারাপ, পরশু ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে ম্যাচে পেনাল্টি আদায় করে রেকর্ডটি আবারও এককভাবে নিজের করে নিয়েছেন স্টার্লিং।
লেস্টার এ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নশিপে (ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বিভাগ লিগ) নেমে যাওয়ায় স্টার্লিংয়ের রেকর্ড পুনরায় দখলে নিতে অপেক্ষাই করতে হবে ভার্ডিকে। ৩৬ বছর বয়সী ভার্ডি প্রিমিয়ার লিগে শুধু লেস্টারের হয়েই ২৩টি পেনাল্টি আদায় করেছেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে পেনাল্টি আদায়ের রেকর্ডে দুইয়ে ভার্ডি। শীর্ষে থাকা রাহিম স্টার্লিং ২৪টি পেনাল্টি আদায় করেছেন।
স্টার্লিং তিনটি ক্লাব মিলিয়ে এতগুলো পেনাল্টি আদায় করেছেন—লিভারপুলে ৪টি, ম্যানচেস্টার সিটিতে ১৯টি ও চেলসিতে ১টি। পরশু চেলসির জন্য তাঁর আদায় করা পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারেননি এনজো ফার্নান্দেজ। দল হেরেছে, তার ওপর আদায় পেনাল্টি থেকেও সতীর্থ গোল করতে পারেননি—রেকর্ডটি পুনরায় দখলে নিলেও স্টার্লিংয়ের তাই খুশি হওয়ার তেমন কারণ ছিল না।
প্রিমিয়ার লিগে এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চসংখ্যক পেনাল্টি আদায়ের তালিকায় যৌথভাবে দ্বিতীয় রাহিম স্টার্লিং। ক্রিস্টাল প্যালেসের হয়ে ১৯টি পেনাল্টি আদায় করেছেন গ্যালাতসারাইয়ের আইভরি কোস্ট ফরোয়ার্ড উইলফ্রেড জাহাও। ভার্ডির লেস্টারের সঙ্গে চ্যাম্পিয়নশিপে নেমে যাওয়া এবং জাহার গ্যালাতসারাইয়ে চলে যাওয়ায় রাহিম স্টার্লিংকে আসলে ধরার কেউ নেই। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে মোহাম্মদ সালাহ, ড্যানি ওয়েলবেক, অ্যাশলে ইয়ংরাই এ তালিকায় স্টার্লিংয়ের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী। সালাহ–ওয়েলবেকরা ১২টি পেনাল্টি আদায় করেছেন প্রতিপক্ষের কাছ থেকে।
স্টার্লিং–জাহা–ভার্ডি প্রিমিয়ার লিগের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ পেনাল্টি আদায়ের তালিকায় আছেন। তবে তাঁদের কেউ অ্যান্ড্রু জনসনের রেকর্ড ভাঙতে পারেননি। ২০০৪–০৫ মৌসুমে ক্রিস্টাল প্যালেসের হয়ে একাই ৮টি পেনাল্টি আদায় করেছিলেন ইংল্যান্ডের সাবেক স্ট্রাইকার জনসন। ভার্ডি ২০১৫–১৬ মৌসুমে আদায় করেছেন ৭টি পেনাল্টি। জাহা ২০১৮–১৯ মৌসুমে ৬টি এবং স্টার্লিংও ২০১৭–২০১৮ মৌসুমে সমানসংখ্যক পেনাল্টি আদায় করেন।
২০০৪–০৫ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমন ঘটলেও সে মৌসুমে ১২টি পেনাল্টি আদায় করেছিল ক্রিস্টাল প্যালেস। ২০১৫–১৬ মৌসুমের আগপর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে তা ছিল একটি দলের সর্বোচ্চ পেনাল্টি আদায়ের যৌথ রেকর্ড। ক্রিস্টালের আগে ১৯৯৪–৯৫ মৌসুমে ব্লাকবার্ন রোভার্সও ১২টি পেনাল্টি আদায় করেছিল প্রতিপক্ষের কাছ থেকে। ক্রিস্টাল তা ছুয়ে ফেলার পর আর্সেনাল (২০০৬–০৭), চেলসি (২০০৯–১০), লিভারপুল (২০১৩–১৪), ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও (২০১৮–২০১৯) এক মৌসুমে ১২টি পেনাল্টি আদায় করেছে। তবে ২০১৫–১৬ মৌসুমে ১৩টি পেনাল্টি আদায় করে ক্রিস্টালের সে কীর্তি টপকে যায় লেস্টার সিটি। কিন্তু লেস্টার শীর্ষে থাকতে পারেনি। ২০১৯–২০ মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৪টি পেনাল্টি আদায়ের রেকর্ড গড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
বোর্নমাউথ থাকবে ঠিক এর উল্টো পাশে। গত মৌসুমে (২০২২–২৩) নবম দল হিসেবে প্রিমিয়ার লিগের এক মৌসুমে কোনো পেনাল্টি আদায় করতে না পারার অনাকাঙ্ক্ষিত কীর্তি গড়ে বোর্নমাউথ। সে মৌসুমে বোর্নমাউথ বাদে অন্য সবগুলো দলই অন্তত ৩টি করে পেনাল্টি আদায় করতে পেরেছিল।
পেনাল্টি আদায় করতে না পারার তালিকায় থাকা অন্য ৮টি দল—কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স (১৯৯৪–৯৫), উইম্বলডন (১৯৯৮–৯৯), সাউদাম্পটন (২০০০–২০০১), ব্লাকবার্ন রোভার্স (২০০৩–০৪), চার্লটন অ্যাথলেটিক (২০০৪–০৫), টটেনহাম হটস্পার্স (২০১২–১৩), সোয়ানসি সিটি (২০১২–১৩) ও বার্নলি (২০১৭–১৮)।