মাঝ আকাশে অক্সিজেন সংকট, বড় বিপদ থেকে বাঁচলেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ
নিজেদের ঐতিহ্যবাহী আলখেল্লা পরে, জাতীয় পতাকা হাতে যাত্রা শুরু করেছিল গাম্বিয়া ফুটবল দল। গন্তব্য আইভরি কোস্ট, যেখানে আগামী শনিবার শুরু হতে যাচ্ছে আফ্রিকান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসর আফ্রিকা কাপ অব নেশনস।
তবে মাঝ আকাশে হঠাৎ বিপত্তি। বিমান উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে শুরু হয় তীব্র অক্সিজেন–সংকট। অক্সিজেনের অভাবে প্রায় সব খেলোয়াড় ও কোচ টম সেইন্টফিটের মাথা চক্কর দিতে শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁরা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। অনেকের প্রাণ হারানোরও শঙ্কা জেগেছিল।
অবস্থা বেগতিক দেখে বিমান ঘুরিয়ে নেন পাইলট। গাম্বিয়ার রাজধানী বানজুলের ইয়ানদুম বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় ৩০ মিনিট পর বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করলে বড় বিপদ থেকে বেঁচে যায় গাম্বিয়া দল।
টম সেইন্টফিট নামটা বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ ছিলেন সেইন্টফিট। বেলজিয়ান এই কোচের অধীন তিন ম্যাচ খেলে একটিতে ড্র ও দুটিতে হেরে যায় বাংলাদেশ। জামাল ভূঁইয়া-তপু বর্মণদের দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৫৫ দিন পর তাঁকে বরখাস্ত করে বাফুফে।
সেই সেইন্টফিট এরপর ত্রিনিদাদ, মাল্টা ঘুরে গাম্বিয়া জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করছেন। ৫০ বছর বয়সী এই বেলজিয়ানের ছোঁয়াতেই ২০২১ সালে প্রথমবার আফ্রিকা কাপ অব নেশনসের মূল পর্বে জায়গা করে নেয় গাম্বিয়া। প্রথমবারই দলটিকে নিয়ে যান কোয়ার্টার ফাইনালে। এবার আরও বড় স্বপ্ন নিয়ে দলের সঙ্গে আইভরি কোস্টের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন সেইন্টফিট। তবে তাঁর দলের সেই স্বপ্নযাত্রা মুহূর্তেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।
গাম্বিয়া, আইভরি কোস্ট—দুটিই পশ্চিম আফ্রিকার দেশ। বিমানে গাম্বিয়ার রাজধানী বানজুল থেকে আইভরি কোস্টের রাজধানী আবিদজানে যেতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। তবে ইয়ানদুম বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের ৯ মিনিটের সময় যান্ত্রিক ত্রুটি দেয়।
এক বিবৃতিতে গাম্বিয়া ফুটবল ফেডারেশন (জিএফএফ) জানিয়েছে, ক্রুরা দ্রুতই বুঝতে পারেন, বিমানে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং কেবিনে চাপ কম। পাইলট সঙ্গে সঙ্গে বানজুলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান।
জিএফএফ আরও জানিয়েছে, বিমানে গাম্বিয়া দলের খেলোয়াড়েরা অসুস্থ হয়ে পড়লেও বর্তমানে সবাই সুস্থ আছেন। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত সবাই স্থানীয় ওশান বে হোটেলে থাকবেন। সমস্যার সমাধান হওয়ামাত্রই আবার আইভরি কোস্টের উদ্দেশে রওনা হবেন।
বেলজিয়ামের ডাচ ভাষার পত্রিকা ‘এট নিউজব্লাট’কে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন কোচ টম সেইন্টফিট। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সবাই মারা যেতে পারতাম। আমিসহ দলের সবাই খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছিলাম (জ্ঞান হারিয়েছিলাম)। সত্যি বলছি, খুব অল্প সময়ে জন্য স্বপ্ন দেখেছি, কীভাবে আমি মারা গেলাম। ৯ মিনিট পর পাইলট বিমান ঘুরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, অক্সিজেন সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জরুরি অবতরণের আগে কয়েকজন খেলোয়াড় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। আরেকটু দেরি হলেই কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়া শুরু হয়ে যেত। আর ৩০ মিনিট এভাবে থাকলে সবাই বিষক্রিয়ায় মারা যেতাম।’
তবে সেইন্টফিটের মন্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ ও ধারণা’ উল্লেখ করে প্রাণহানির শঙ্কা জাগার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন জিএফএ প্রধান বাজো, ‘আমার এমন কিছু মনেই হয়নি। এমনকি এটা ক্লিনিক্যালি, সাইন্টিফিক্যালি এবং মেডিক্যালিও প্রমাণিত নয়। আমি অনেকটা তাঁর পাশেই বসা ছিলাম। আমি কাউকে পড়ে যেতে দেখিনি। বিমান যখন উড্ডয়ন শুরু করে, আমি তখনই কয়েকজনকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখেছি।’
সেইন্টফিট আরেকটি দাবি ছিল একই বিমানে গাম্বিয়ান দলকে আইভরিকোস্টে যেতে বলা হয়েছে, কিন্তু অধিনায়ক ওমর কোলি ও তিনি রাজি না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এটিও অস্বীকার করেছেন গাম্বিয়ার ফুটবল প্রধান।
এবারের আফ্রিকা কাপ অব নেশনসে গাম্বিয়ার প্রথম ম্যাচ ১৫ জানুয়ারি সেনেগালের বিপক্ষে। ‘সি’ গ্রুপে দলটির অপর দুই প্রতিপক্ষ ক্যামেরুন ও গিনি।