৩৩টি নিউইয়র্কের সমান সৌদি আরবের নতুন শহরের একাংশে থাকছে ফুটবল
টাকার বস্তা নিয়ে ক্লাব ফুটবলের বাজার রীতিমতো অস্থির করে তুলেছে সৌদি আরব। এবারের দলবদলে প্রায় প্রতিদিনই ইউরোপ থেকে কেউ না কেউ সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দিচ্ছেন। এ নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ–শঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন ইয়ুর্গেন ক্লপ, পেপ গার্দিওলার মতো কোচরা। এবারের মতো সৌদি আরবের খেলোয়াড় কেনাকাটা বন্ধ হবে ২০ সেপ্টেম্বর।
তবে ফুটবল নিয়ে সৌদি আরবের জোর তৎপরতা আগামী দিনগুলোতে আরও বাড়বে। এরই মধ্যে ফুটবলকে ঘিরে দীর্ঘ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। যার মধ্যে আছে তৈরি হতে যাওয়া নতুন শহরে ফুটবল ক্লাব, স্টেডিয়াম ও বিশাল অবকাঠামো।
কয়েক বছর আগেই সৌদি আরবের সরকার দেশটির উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে বিশ্বের অন্যতম বড় শহর তৈরির উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। লোহিত সাগরঘেঁষা বিশালাকারের এই প্রকল্পের আয়তন প্রায় ২৬ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার। আয়তনে যা নিউ ইয়র্ক সিটির ৩৩ গুণ। ‘নিওম সিটি’ নামের এই প্রকল্পকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘লাইন’ নামের অঞ্চলের পরিকল্পনায় আছে ফুটবল।
ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম গ্লোবো এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে লাইন অঞ্চলে একটি স্টেডিয়ামের পাশাপাশি ক্লাবের খেলার জন্য কয়েকটি স্থাপনা তৈরি করার পরিকল্পনা আছে। ঠিক কতটি স্থাপনা তৈরি করা হবে, সেটি চাহিদার ভিত্তিতে ধীরে ধীরে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক জাইলস পেন্ডলেটন বলেন, ‘সব একসঙ্গে তৈরি করা হবে না। তবে ২০৪৫ সালের মধ্যে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। যে পরিমাণ মানুষ এখানে থাকবে, তার ভিত্তিতে স্টেডিয়াম তৈরি করা হবে।’
লাইন হবে ১৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের উল্লম্ব আকৃতির শহর, যা লোহিত সাগর থেকে শুরু হয়ে দৈর্ঘ্যে ৫০০ মিটার ও প্রস্থে ২০০ মিটার হবে। শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির এই শহরের কোনো সড়ক বা গাড়ি থাকবে না। বসবাস করতে পারবেন ৯০ লাখ মানুষ। প্রায় কোটির কাছাকাছি মানুষ থাকবে, কিন্তু কোনো সড়ক বা যাতায়াতের গাড়ি থাকবে না, তাহলে স্টেডিয়ামে মানুষ যাবেন কীভাবে?
পেন্ডলেটন উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ধরুন, আপনি একটি ভবনের পঞ্চাশতম তলায় আছেন। দুই কিলোমিটার দূরে নিওম বনাম বার্সেলোনার ম্যাচ হচ্ছে, সেটা দেখতে যাবেন। আপনি সেখানে কয়েকটি যাতায়াতব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারেন। হতে পারে এটা আপনার দশতলা ওপরে বা নিচে।’
অবশ্য ফুটবল ক্লাব চালুর আগেই নিওমে এর বীজ বপন করা হয়ে গেছে। ২০২২ সালের জুনে সৌদি আরব সরকার শুহুব (চার অঞ্চলের একটি) প্রোগ্রামের ঘোষণা দিয়েছে, যেখানে দেশটির ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ৪০০ শিশুকে হাই–পারফরম্যান্স ট্রেনিং দেওয়া হবে। এর মূল উদ্দেশ্য, উঁচু মানের কোচের মাধ্যমে সৌদি আরবের যুব ফুটবলে উন্নতি করা। এ বিষয়ে নিওম স্পোর্টসের পরিচালক ইয়ান পিটারসন বলেন, ‘আমরা এই অঞ্চলে ফুটবলের সমৃদ্ধি ঘটানো এবং তরুণদের উন্নতির জন্য উদ্ভাবনী ক্রীড়া প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করি।’
নিওমে এশিয়ান গেমস
সৌদি আরবে নিওম সিটি প্রকল্পের কাজ এখন চলমান। পরিকল্পনা অনুসারে ২০৩৯ সালের মধ্যে এটির নির্মাণ শেষ হবে। তবে এর আগেই কিছু অংশের কাজ শেষ হয়ে যাবে। ট্রোজেনা নামের অঞ্চলটির এমনই এক অংশে অনুষ্ঠিত হবে ২০২৯ শীতকালীন এশিয়ান গেমস। গত বছরের অক্টোবরে অলিম্পিক কাউন্সিল অব এশিয়ার সাধারণ সভায় ট্রোজেনাকে আয়োজক ঘোষণা করা হয়। আরব অঞ্চলে এটিই প্রথম শীতকালীন এশিয়ান গেমস।