মেসিদের নতুন শুরু
ঠিক আগের দিনই কথাটি বলেছিলেন গিয়ের্মো ওচোয়া।
কোন কথা?
‘দেখা গেল ম্যাচে সে কিছুই করছে না। কিন্তু হুট করেই একটা গোল দিয়ে দিতে পারে।’
একদিন পরই যে কথাটা এভাবে ফলে যাবে, মেক্সিকান গোলকিপার কি সত্যিই ভাবতে পেরেছিলেন? ওচোয়া তো বরং ‘বিশ্বসেরা মেসি’র বিরুদ্ধে খেলে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের জানান দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসলে কী ঘটে গেল!
ম্যাচের প্রথম এক ঘণ্টা নিজের ছায়া হয়ে থাকা মেসি আচমকাই ওচোয়াকে ফাঁকি দিয়ে বল পাঠিয়ে দিলেন জালে, তাও ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া শটে। সেই গোলের এমনই মাহাত্ম্য, ওচোয়ার ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ আর পরাস্ত হওয়ার গল্পটা হয়ে গেল গৌণ। মুখ্য তখন আরেকটি কীর্তি গাঁথা জন্মের। একটি দেশের নিবতে চলা বিশ্বকাপ-স্বপ্নের বাতিটা যে ওই এক গোলেই চট করেই জ্বলজ্বলে হয়ে উঠল!
হ্যাঁ, চট করে জ্বলে ওঠাই। সৌদি আরবের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ অভিযান প্রায় ‘নিবু নিবু’ অবস্থায় চলে গিয়েছিল। র্যাঙ্কিংয়ে কাছাকাছি থাকা পোল্যান্ড, মেক্সিকোর আগে যদি সুদূরের সৌদির বিপক্ষেই অমন বিপর্যয় ঘটে, আশার বেলুন তো চুপসে যাবেই।
‘জয় ছাড়া গতি নাই’ মন্ত্রে মেক্সিকোর বিপক্ষে মাঠে নামার পর প্রথমার্ধ পর্যন্তও ব্যাপারটা ছিল একই। কিন্তু ভোজভাজির মতো হুট করেই যেন মঞ্চের পরিবেশটা পাল্টে গেল। পাল্টে দিলেন মেসি। আনহেল দি মারিয়ার পাসটি এসেছিল ডি বক্সের বাইরে, সোজাসুজি গোলমুখে। দূরত্ব ২০ গজ, সামনে মেক্সিকোর তিন ডিফেন্ডার। এদিক-ওদিক না তাকিয়ে ভরসা রাখলেন নিজের বিশ্বস্ত বা পা-টায়।
মাপা শটে জটলার ভেতর দিয়ে বল চলে গেল জালে। স্কোরলাইনে আর্জেন্টিনার নামের পাশের শূন্যটা বদলে গেল- ১ (যা পরে মেসিরই আরেকটি পদস্পর্শের সূত্রে ২–০ হয়ে যায়)।
স্রেফ এক তো নয়, যেন ‘ক্লিনিক্যাল ডেড’ রোগীর আচমকাই জীবন্ত হয়ে উঠে বসা।
গায়ের সবটুকু জোর দিয়ে সতীর্থদের জড়িয়ে ধরা, গ্যালারির কাছে ছুটে গিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাতে ‘লক্ষ্য অটুট’র বার্তা দেওয়া, ক্ষণিকের ব্যবধানে ছলছল চোখে ওপরের শূন্যে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি দেওয়া কিংবা ঘাড় থেকে বোঝা নেমে যাওয়ার অভিব্যক্তি- সব তো ওই আচমকা ‘প্রাণ’ ফিরে পাওয়ার গল্পই বলে।
তবে এই বেঁচে যাওয়ায় সূচনা আরেক শুরুর। ‘টিকে থাকাই সার্থকতা’ প্রমাণে পার হতে হবে পোল্যান্ড-পারাবার। ম্যাচ শেষে মেসির কণ্ঠেও যা উঠে এল ‘এখন আর হাল ছাড়া যাবে না। প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য ফাইনাল। আর কোনো ভুল করা যাবে না।’