‘মেসি ও ম্যারাডোনার মিশ্রণে’ই এচেভেরি
গত রাত থেকে আলোচনায় এক আর্জেন্টাইন খুদে ফুটবলার। অনূর্ধ্ব–১৭ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে আর্জেন্টিনাকে স্মরণীয় এক জয় এনে দিয়েছেন ক্লদিও এচেভেরি। হ্যাটট্রিকের পর থেকেই সব চোখ এখন ১৭ বছর বয়সী এচেভেরির ওপর। এচেভেরি মোটেই সাধারণ কোনো ফুটবলার নন, তিনি এমন একজন, যাঁকে তুলনা করা হচ্ছে খোদ লিওনেল মেসির সঙ্গে। এরই মধ্যে ‘পরবর্তী মেসি’র তকমাও পেয়ে গেছেন এচেভেরি। যদিও অনেকে আদর করে ডাকেন ‘খুদে শয়তান’।
মেসির সঙ্গে তাঁর তুলনা যে মোটেই বাড়াবাড়ি নয়, সে প্রমাণ ব্রাজিলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে দিয়েছেন এচেভেরি। বিশেষ করে যেভাবে এচেভেরি গোলগুলো করেছেন, সেগুলোই যেন তাঁর সামর্থ্যের প্রমাণ দিচ্ছে। যেখানে প্রতিটি গোলই ছিল নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর। ২৮ মিনিটে করা গোলটি তো মাঝমাঠ থেকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায়। ৫১ মিনিটে করা গোলটিতে বল নিয়ন্ত্রণে অসামান্য দক্ষতা দেখান এচেভেরি। বাঁ প্রান্ত থেকে পাস পেয়ে দৌড়ের ওপর বল এক টাচে সামনে ফেলে ব্রাজিলের তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বল টেনে ডান পায়ের কোনাকুনি শটে গোল করেন এচেভেরি।
আর ৭১ মিনিটে করা হ্যাটট্রিক গোলটা ছিল প্রথাগত দক্ষিণ আমেরিকান স্ট্রাইকারদের মতোই। মাঝমাঠ থেকে থ্রু পাস পেয়ে গায়ের সঙ্গে লেপটে থাকা ব্রাজিলের এক ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে গোলকিপারকেও একা পেয়ে যান এচেভেরি। তাঁকেও কাটিয়ে গোল করতে কোনো অসুবিধাই হয়নি। দুর্দান্ত এই হ্যাটট্রিকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে তাঁকে নিয়ে জোর আলোচনা।
এচেভেরিকে নিয়ে কথা বলেছেন যে মানুষটি, রিভার প্লেটের জন্য তাঁকে আর্জেন্টাইন শহর রেসিস্টেনসিয়া থেকে খুঁজে বের করে এনেছিলেন সেই কোচ ড্যানিয়েল ব্রিজুয়েলা। খুদে এই আর্জেন্টাইন ডিয়েগো ম্যারাডোনা এবং লিওনেল মেসির সমন্বয়ে গড়া বলেও মন্তব্য করেছেন ২০২২ সালে রিভারের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া ব্রিজুয়েলা।
এচেভেরিকে নিয়ে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টসকে ব্রিজুয়েলা বলেছেন, ‘আজ আমি ততটাই রোমাঞ্চিত, যতটা আমি রেসিস্টেনসিয়াতে প্রথমবার তাকে দেখে হয়েছিলাম। সব সময় সে এমনই ছিল। রিভারের হয়ে সে এভাবেই খেলেছে। এভাবেই সে খেলেছিল বোকার (জুনিয়র্সের) বিপক্ষে। এই ধরনের ম্যাচ খেলতে সে সব সময় খুব পছন্দ করে। এসব ম্যাচ তাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। তখন সে মাত্রই এসেছিল, তাকে নিয়ে একজন কোচকে আমি বলেছিলাম, “সে ম্যারাডোনা ও মেসির মিশ্রণ।” তার মধ্যে এ দুজনের মেধা এবং ব্যক্তিত্ব আমি দেখেছিলাম।’
এচেভেরির শক্তির জায়গাগুলো নিয়ে ব্রিজুয়েলা আরও বলেছেন, ‘সে এমন একজন যে কঠিন চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে। আমি যা বলতে চাই, তা হলো আমাদের দলের ১০ নম্বর জার্সির ভবিষ্যৎ নিরাপদ হাতেই আছে। এটা খুবই দারুণ ব্যাপার।’
এচেভেরিকে প্রশংসায় ভাসালেও তাঁকে আবিষ্কারের কৃতিত্বটা এককভাবে নিতে চাইলেন না ব্রিজুয়েলা, ‘একটা দল এর পেছনে ছিল। আমাদের অনেকেই ছিল। আমাদের এখানে সারা দেশের মানুষ কাজ করেছে। এটা একটা দলের কাজের ফল। এ কৃতিত্ব শুধুই ড্যানিয়েল ব্রিজুয়েলার নয়। তাই আমি রিভারের রিক্রুটে যারা কাজ করেছেন, তাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, ক্লদিও (এচেভেরি) এবং অন্য ছেলেদের নিয়ে সবকিছু ভালোভাবেই এগিয়েছে। আমি এটা নিয়ে খুবই আনন্দিত।’
নিজেদের খেলোয়াড় খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া কেমন ছিল, সেটা নিয়ে ব্রিজুয়েলা বলেছেন, ‘রিভারে আমরা শহরের পর শহর ঘুরে বেড়াতাম। রেসিস্টেনসিয়াতে আমরা ২০০২–২০০৩ সালে জন্মানো খেলোয়াড়দের দেখেছিলাম। এর চেয়ে ছোটদের রাখা হয়েছিল শেষের দিকের জন্য। শেষের একটি ম্যাচেই ক্লদিওকে দেখা গিয়েছিল। সে দারুণভাবে আমাদের মনোযোগ কেড়েছিল। আমরা তাকে মূল্যায়ন করতে শুরু করেছিলাম এ জন্য নয় যে সে দারুণ এক প্রতিভা ছিল। তার মধ্যে আরও কিছু বিষয় ছিল, যে কারণে আমরা তাকে রিভারে নিয়ে এসেছিলাম। সে সময় তার বয়স ছিল ৯ বছর।’
এর মধ্যে গত এপ্রিলে ইউরোপের ফুটবলে এচেভেরির আসা নিয়ে গুঞ্জন শোনা যায়। দলবদলবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ফিচাহেস বলেছিল, রিভার প্লেটের এই বিস্ময়বালকের ওপর পাখির চোখ করে রেখেছে রিয়াল ও ম্যানচেস্টার সিটি। ১৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডকে নিজেদের করে নেওয়ার চেষ্টায় আছে পিএসজিও। ছোটদের বিশ্বকাপে নজড়কাড়া পারফরম্যান্সের পর তাঁকে নিয়ে ইউরোপিয়ান পরাশক্তিদের লড়াই নিশ্চিতভাবেই নতুন মাত্রা পাবে।