নেইমারকে বিদায় দিতে চায় পিএসজিও
ফরাসি ক্রীড়া দৈনিক লে’কিপ জানিয়েছিল, পিএসজি ছাড়ার ইচ্ছার কথা ক্লাবকে জানিয়েছেন নেইমার। পরে নেইমারের বাবা খবরটি ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেন। এবার জানা গেল অন্য খবর।
ফ্রান্সেরই আরেক সংবাদমাধ্যম ‘আরএমসি স্পোর্টস’ জানিয়েছে, পিএসজির ক্রীড়া পরিচালক লুইস কাম্পোস ও কোচ লুইস এনরিকে গতকাল স্থানীয় সময় সকালে বসেছিলেন ক্লাবের পাঁচ খেলোয়াড়ের সঙ্গে। এই পাঁচ খেলোয়াড় হলেন—নেইমার, মার্কো ভেরাত্তি, হুগো একিতেকে, রেনাতো সানচেস ও হুয়ান বের্নাত। তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পিএসজিতে তাঁদের আর প্রয়োজন নেই। নতুন ক্লাব খুঁজতে বলে দেওয়া হয়েছে এই পাঁচ খেলোয়াড়কে।
গত মঙ্গলবার পিএসজির অনুশীলনেও ছিলেন না নেইমার ও ভেরাত্তি। নতুন মৌসুম শুরুর আগে খেলোয়াড়দের অফিশিয়াল ফটোসেশনেও তাঁদের রাখেনি পিএসজি। অবশ্য আরেক তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেও ছিলেন না। ফরাসি তারকার পিএসজিতে থাকাও অনিশ্চিত। নেইমার ও ভেরাত্তি ইনডোরে নিজ নিজ অনুশীলন সেরেছেন। গত সোমবার পায়ে হালকা চোট পেয়েছিলেন নেইমার।
শনিবার লোঁরিয়ার বিপক্ষে লিগ ‘আঁ’তে নতুন মৌসুমের প্রথম ম্যাচ খেলবে পিএসজি। এ ম্যাচে নেইমার ও ভেরাত্তির না থাকার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানিয়েছে আরএমসি স্পোর্টস। চলতি দলবদলের মৌসুমেই তাঁদের নতুন ক্লাব খুঁজে নিতে বলা হয়েছে। নেইমারের সঙ্গে পিএসজির বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালে। ব্রাজিল তারকা ও তিনটি ক্লাব ঘিরে সম্প্রতি গুঞ্জন ভাসছে। নেইমার পিএসজি ছেড়ে বার্সায় যোগ দিতে চান, এই গুঞ্জন পুরোনো।
বার্সা তাঁকে কিনতে পারবে কি না এবং কত টাকা বেতন দিতে পারবে—সবকিছু এসবের ওপর নির্ভর করছে। চেলসির ক্ষেত্রে শুধু নেইমারের উচ্চ অঙ্কের বেতন নিয়ে জটিলতা হতে পারে। আরও একটি ক্লাব আছে, যারা কিনতে চায় নেইমারকে। সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল। সৌদি প্রো লিগের এই ক্লাব নেইমারকে বড় অঙ্কের বেতনেই দলে ভেড়াতে চায়। আর ভেরাত্তির সৌদি প্রো লিগে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
তবে একটা বড় কিন্তু আছে। স্পেনের সংবাদমাধ্যম মুন্দো দেপোর্তিভোর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পিএসজি একতরফাভাবে নেইমারকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সিদ্ধান্তটা হতে হবে দুই পক্ষেরই সম্মতির ভিত্তিতে। কারণ, গত দলবদলের মৌসুমেই ব্রাজিল তারকা তাঁর চুক্তিপত্রের একটি শর্ত কার্যকর করেছিলেন, যা তখন জানিয়েছিল ইউরোপের সংবাদমাধ্যমগুলো। সেই সুবাদেই নেইমারের চুক্তির মেয়াদ আরও দুই বছর বেড়ে ২০২৭ সাল পর্যন্ত হয়েছে। ৩১ বছর বয়সী নেইমার চুক্তির সেই শর্ত কার্যকর করেছেন ৩০ বছর বয়সে।
মুন্দো দেপোর্তিভো জানিয়েছে, ২৮ বছর কিংবা তার বেশি বয়সী কেউ চুক্তি করলে বা নবায়ন করলে ফিফার আইনের অধীন এমনিতেই দুই বছরের জন্য সুরক্ষিত থাকবেন। মানে, খেলোয়াড় রাজি না থাকলে এই দুই বছরের মধ্যে ক্লাব চাইলেই তাঁকে বের করে দিতে পারবে না। ২৮ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এই রক্ষাকবচ তিন বছর মেয়াদি।
মুন্দো দেপোর্তিভো তাই দাবি করেছে, নেইমারকে তাই চাইলেই বের করে দিতে পারবে না পিএসজি। সেটি হতে হবে দুই পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে। অবশ্য নেইমারের পিএসজি ছাড়ার ইচ্ছার খবর সত্যি হলে ভিন্ন কথা। তাঁর বাবা নেইমার সিনিয়র কিন্তু লে’কিপের সেই খবরকে ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছিলেন।
মুন্দো দেপোর্তিভো জানিয়েছে, পিএসজি যদি এরপরও চুক্তি বাতিল করে নেইমারকে বিদায় করতে চায়, তাহলে দুটি পরিণতি হতে পারে—নেইমারকে বাকি চার মৌসুমের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে (২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত)। আরেকটি পরিণত হলো, আগামী দুই মৌসুমের জন্য পিএসজি কোনো খেলোয়াড় কিনতে পারবে না। মুন্দো দেপোর্তিভো নিয়মটি উল্লেখও করেছে, ‘এই শাস্তির অধীন ক্লাব নতুন কোনো খেলোয়াড় নিবন্ধন করতে পারবে না, সেটি দুই মৌসুমের জন্য।’
তাই পিএসজি শুধু চাইলেই হবে না, নেইমারকেও রাজি করাতে হবে। তবে লে’কিপের খবর সত্যি হলে ফরাসি ক্লাবটির সেই সমস্যা হবে না। নেইমার নিজে ক্লাব ছাড়তে চাইলে ঠেকায় কে!