রোনালদোর সেরা মেসি, বেলিংহামে দেখেন জিদানকে
লন্ডনের এসেক্সে হ্যারল্ড হিল ফুটবল ক্লাবের মাঠ। বৃষ্টি পড়ায় মাঠ কাদায় মাখামাখি। কনকনে ঠান্ডাও আছে। কিন্তু এর মধ্যেই মাঠে ফুটবল খেলতে জমায়েত কিছু অভিনেতা, বন্ধুবান্ধব ও সানডে লিগের সাবেক কিছু খেলোয়াড়।
বেটিং প্রতিষ্ঠান ‘প্যাডি পাওয়ার’–এর প্রতিনিধিদলের আসার কথা এই মাঠে। তাদের সঙ্গে একজন বিশেষ অতিথিও থাকবেন। সে জন্যই ঝুম বৃষ্টি ও ঠান্ডার মধ্যেও ফুটবল খেলার প্রস্তুতি। কিছুক্ষণ পরই তিনি এলেন। সাদা লিমো থেকে নামলেন। মুখে পরিচিত সেই হাসি। পায়ে সাদা বুট। রোনালদো লুইস নাজারিও দি লিমা! দুবার বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি।
প্যাডি পাওয়ারের হয়ে একটি ভিডিওর শুটিংয়ে সেখানে গিয়েছিলেন রোনালদো। ইংল্যান্ডের জাতীয় ফুটবল লিগ সিস্টেমের ১১তম স্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হ্যারল্ড হিলের মাঠে বেশ ঠান্ডাই লাগছিল ৪৭ বছর বয়সী কিংবদন্তির। মজা করে বলছিলেন, ‘পরেরবার এটা (ভিডিও) আমাদের (স্পেনের) ইবিজায় করতে হবে।’ সে যা হোক, রোনালদো মাঠে নামার আগে ফুটবলের বর্তমান তারকাদের নিয়ে কথা বলেছেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইনের সঙ্গে। সেখানেই উঠে এসেছে কিলিয়ান এমবাপ্পে ও জুড বেলিংহামের প্রসঙ্গ।
তবে সংবাদমাধ্যমটির সঙ্গে আলাপচারিতায় ঝটপট কিছু প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান, রিয়াল মাদ্রিদ ও এসি মিলান মাতানো কিংবদন্তি। রোনালদোর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মধ্যে সেরা কে? এক শব্দে উত্তর দিয়েছেন, ‘মেসি’। জানতে চাওয়া হয়েছিল ইউরো জিতবে কোন দল? একটু ভেবে রোনালদোর উত্তর, ‘স্পেন’। ক্যারিয়ারে মুখোমুখি হওয়া সেরা ডিফেন্ডার কে—এই প্রশ্নের উত্তরে রোনালদো ইতালিয়ান কিংবদন্তি পাওলো মালদিনির নাম বলেছেন। আর এই মুহূর্তে সেরা স্ট্রাইকার? ‘এমবাপ্পে’—উত্তর দেন রোনালদো।
রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান সেনসেশন বেলিংহামের সঙ্গে ফরাসি কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানের খেলার মিল পান রোনালদো। মাদ্রিদের ক্লাবটিতে ২০০২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জিদানের সতীর্থ হিসেবে ১৪০ ম্যাচ খেলেছেন সাবেক এই স্ট্রাইকার। এ মৌসুমে রিয়ালের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে নিয়ে রোনালদো বলেছেন, ‘জুড বেলিংহাম যেভাবে খেলে, সেটা ভালো লাগে। সে প্রায় সব ম্যাচেই গোল করছে...সে খেলা দিয়ে আমাকে চমকে দিয়েছে। দৌড়ে গতি এবং সব সময় গোল করতে চাওয়ার ক্ষুধাটাও আছে। তার খেলা দেখে জিনেদিন জিদানকে মনে পড়ে।’
রিয়ালে ৫ নম্বর জার্সি পরে খেলেছেন কিংবদন্তি মিডফিল্ডার জিদান। ইংল্যান্ড মিডফিল্ডার বেলিংহামও রিয়ালে ৫ নম্বর জার্সি পরে খেলেন। তবে শুধু বেলিংহাম নয়, পিএসজির ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পের খেলাও ভালো লাগে রোনালদোর। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির বিশ্বাস, এমবাপ্পে রিয়ালে যোগ দিলে ব্যালন ডি’অর জিততে পারবেন। দীর্ঘদিন ধরে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানোর গুঞ্জনের মধ্যে থাকা এমবাপ্পে গত মাসেই ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন পিএসজি পরিচালকদের। পিএসজিও এমবাপ্পেকে ছাড়াই খেলতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। মাঠে ৯০ মিনিট খেলানো হচ্ছে না তাঁকে। রিয়ালও নাকি এমবাপ্পেকে দলে ভেড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এখনো কোনো কিছুই আনুষ্ঠানিক নয়।
রোনালদো তাই এমবাপ্পেকে নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষায়, ‘এটা নিয়ে খোলামেলা আলোচনার আগে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। তবে মাদ্রিদে কিলিয়ানের যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় আছে সবাই। সে অসাধারণ খেলোয়াড়। এ মুহূর্তে অন্যতম সেরা। মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানানোয় তার পছন্দের প্রশংসা করছি। আমার মনে হয়, রিয়ালে যোগ দিলে সে ব্যালন ডি’অর জিততে পারবে।’
ম্যানচেস্টার সিটির তারকা স্ট্রাইকার আর্লিং হলান্ডকে নিয়েও কথা বলেন রোনালদো। তাঁর আশা, একদিন হলান্ড, বেলিংহাম ও এমবাপ্পে একসঙ্গে রিয়ালে খেলবেন, ‘বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের দলে টানাই রিয়ালের নীতি। হলান্ড বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। সবাই তাকে নিতে চায়। সিটিও দারুণ এক ক্লাব। আর আমার মনে হয়, সেখানে সে সুখেই আছে। তবে আমি আশা করি, একদিন তাদের একসঙ্গে একই ক্লাবে দেখব। তারা একসঙ্গে রিয়ালে খেললে “গ্যালাকটিকোস” (তারকার হাট) সময় মনে পড়বে। এটা ঘটলে দুর্দান্ত ব্যাপারই হবে। তবে এসব তারকাকে একসঙ্গে সামলানো কার্লো আনচেলত্তির জন্যও কঠিন হবে।’