সু্ইডেনকে হারিয়ে ফাইনালে সেই ‘নার্ভাস’ স্পেন
প্রতিপক্ষ সুইডেন, মেয়েদের বিশ্বকাপে যারা পাঁচবার সেমিফাইনাল খেলেছে। অন্যদিকে এবারই প্রথম শেষ চারে স্পেন। সুইডিশদের অভিজ্ঞতা আর নিজেদের ফাইনালের খুব কাছে দেখতে পেয়ে ‘নার্ভাস’ হয়ে পড়েছিল স্প্যানিশরা।
তবে সুইডেন নয়, আজ অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে শেষ ১০ মিনিটের মহানাটক শেষে সেমিফাইনাল জিতে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছে স্পেন। মাত্রই তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলা স্পেন ২-১ গোলে হারিয়েছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেনকে।
৮১ থেকে ৮৯—এই ৮ মিনিটেই হয়েছে সবগুলো গোল। ৮১ মিনিটের ১৯ বছর বয়সী সালমা পারায়উয়েলোর গোল এগিয়ে দেয় স্পেন। সেই পারায়উয়েলো, যিনি কিনা ৫৭ মিনিটে স্পেনের সবচেয়ে বড় তারকা অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াসের বদলি হিসেবে নেমেছিলেন। টানা দুবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী পুতেয়াস আজ ম্যাচের শুরু থেকেই মাঠে ছিলেন।
৭ মিনিট পর রেবেকা ব্লমকভিস্টের গোলে সমতা আনে সুইডেন। ম্যাচ তাহলে টাইব্রেকারেই গড়াচ্ছে, এমনটা যারা ভাবা শুরু করেছিলেন তাঁদের একদমই সময় না দিয়ে মিনিট না যেতেই অধিনায়ক ওলগা কারমোনার দুর্দান্ত এক গোল আবারও এগিয়ে দেয় স্পেনকে। এরপর যোগ করা ৭ মিনিটে আর গোল শোধ করতে পারেনি সুইডেন।
আগামী রোববারের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় সেমিফাইনালের জয়ী দলের বিপক্ষে খেলবে স্পেন। শেষ চারের দ্বিতীয় ম্যাচটি সিডনিতে অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায়। স্পেনের মতো ইংল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ার কোনো দলের মেয়েদের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা নেই।
২০১৫ সালে অভিষেক, ২০১৯ সালে শেষ ষোলো, এবার ফাইনাল—মেয়েদের ফুটবলে স্পেনের উত্থানটা অসম্ভবরকম দ্রুতই হচ্ছে। অথচ খেলোয়াড় বিদ্রোহ ও দলের সবচেয়ে বড় তারকা পুতেয়াসের চোট এই বিশ্বকাপে ফেবারিটদের তালিকায় রাখতে দেয়নি স্পেনকে। স্প্যানিশরা নিজেরাও এতটা স্বপ্ন দেখতে পেরেছিলেন কি না কে জানে! ফাইনালে খেলার কথা ভাবতেই যে পেটে প্রজাপতির নাচন টের পাচ্ছিলেন দলটির খেলোয়াড়েরা।
সেই নার্ভাস স্পেন ফাইনাল নিশ্চিত করার পর দলটির কোচ হোর্হে ভিলদার দাবি যা চেয়েছিলেন তাই করেছে তাঁর দল, ‘এটা ঐতিহাসিক এক দিন। আমরা ফাইনালে, আর এটাই তো আমরা চেয়েছিলাম।’
ভিলদার স্বপ্ন পূরণে আজ প্রথম গোলটি করা সালমা পারায়াউয়েলো কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে গোল করে দলকে জিতিয়েছিলেন। সেই গোলটাও বদলি হিসেবে নেমে গোল করেছিলেন পারায়উয়েলো। গোল করার পরই দর্শকের উল্লাস করতে ইঙ্গিত করেন ‘সুপার সাব’ তকমা পেয়ে যাওয়া এই উইঙ্গার। স্পেনের সমর্থকেরা ম্যাচ জয়ের উদ্যাপনই শুরু করেছিলেন।
কিন্তু সেই উদ্যাপন বেশিক্ষণ চলেনি। ব্লুমকভিস্টের গোলে সমতা আনে সুইডেন। এর ৯০ সেকেন্ড পর কারমোনার সেই গোল। স্প্যানিশদের আবার উদ্যাপন।
স্প্যানিশরা যখন ফাইনালে ওঠার আনন্দে ভাসছিল, সুইডিশরা মিছেই সান্ত্বনা খুঁজেছে। পাঁচবার সেমিফাইনাল খেললেও চারবারই যে বিদায় নিতে হলো ফাইনালের আগেই।
ম্যাচের পর পারায়উয়েলোর বলেছেন, এই স্পেনের পক্ষে এখন কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, ‘খুব কঠিন ম্যাচ ছিল। ওদের গোলের পর আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোটা কঠিন ছিল। তবে আমরা দেখিয়েছি এই দলটা যে কোনো পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এটা আমাদের প্রাপ্য। ছোট এই পদক্ষেপের পর আমাদের শেষ চেষ্টা করার সময় এখন।’
ফাইনালে কী করতে হবে, সেটিও জানিয়ে দিলেন পারায়উয়েলো, ‘এখন ফাইনাল। আমি মনে করি প্রতি ম্যাচে যা করেছি, সেই কাজই আবার করতে হবে। প্রতিটা চ্যালেঞ্জই তো পেরিয়ে আসলাম। এখন শেষ চ্যালেঞ্জের সামনে আমরা, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জেরও।’
সেই চ্যালেঞ্জে স্পেন জিতবে কি না, জানা যাবে ২০ আগস্ট সিডনি স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়ায়।