সালাহউদ্দিনের দেখা নেই, যেভাবে চলছে বাফুফে

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনশামসুল হক

বাফুফে ভবন চত্বরে ঘাস বেশ বড় হয়ে গেছে। আজ সকাল ১১টার দিকে মতিঝিলে বাফুফে ভবন চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, সেই ঘাস কাটছেন বাফুফে মাঠকর্মী চান্দু (চাঁন মিয়া)। পাশেই ভবনের নিচে গাড়ির সারি নেই আগের মতো। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনের গাড়ি রাখার স্থানটা শূন্য পড়ে আছে।

৫ আগস্ট সরকার বদলের পর থেকেই এটি শূন্য। শেখ হাসিনা সরকারের পতন–পরবর্তী বিক্ষুব্ধ সময়ে সালাহউদ্দিন আর বাফুফেতে আসেননি। অসুস্থতার কারণে গত ডিসেম্বর-মার্চ পর্যন্ত মাঝে তিন মাস আসা হয়নি। এর বাইরে গত ১৬ বছরে সপ্তাহে ৪-৫ দিনই বাফুফেতে আসতেন। শনিবার যানজট কম থাকায় অনেক কর্মসূচি রাখতেন। অনেক সময় শুক্রবারসহ ছুটির দিনগুলোতেও ভবনে তাঁকে পাওয়া যেত। সালাহউদ্দিন বাফুফে ভবনে এলেই তাঁর কক্ষে ভিড় জমাতেন বাফুফের অন্য পদাধিকারীরা। সালাউদ্দিন আসেন না বলে এখন তাঁদেরও ভিড় নেই।

সালাহউদ্দিনের বাফুফেতে না আসার বেশ কিছু কারণ আছে। প্রথম কারণ, সরকার বদল। দ্বিতীয় কারণ, কিছু ফুটবল–সমর্থকের আন্দোলন ও পদত্যাগের সময় বেঁধে দেওয়া। এই দলে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলও (বিএনপি)। সংগঠনটির ক্রীড়া সম্পাদক জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের নেতৃত্বে সেই জমায়েত থেকে সালাহউদ্দিনকে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানে শারীরিক হেনস্তারও হুমকি আসে। একদল নারী খেলোয়াড় ও সংগঠকও সালাহউদ্দিন ও নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তারের পদত্যাগের দাবিতে বাফুফে ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে।

কাজী সালাহউদ্দিন ও মাহফুজা আক্তারের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাবেক ও বর্তমান মহিলা ফুটবল খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা। ছবিটি গত ১৭ আগস্টের।
প্রথম আলো

এ ছাড়া আরও ৪৯ জনের সঙ্গে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াকে হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে মতিঝিল থানায়। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সালাহউদ্দিন আপাতত বাফুফে ভবনে আসা এড়িয়ে চলছেন। তবে আগামী ২৬ অক্টোবর বাফুফের নির্বাচনে পঞ্চমবারের মতো সভাপতি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় এখনো অটল আছেন তিনি।

আরও পড়ুন

কিন্তু বাফুফে থেকে সরে গেছেন বাফুফের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ১৬ বছরের টানা সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। শেখ হাসিনা সরকার পতনের তিন দিন পরই তিনি পদত্যাগ করেছেন। ফলে পদটি শূন্য হয়ে আছে। সিনিয়র সহসভাপতি বাদে বাফুফেতে চারজন সহসভাপতি আছেন।

তাঁদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ। আরেক সহসভাপতি বাফুফের উন্নয়ন কমিটির প্রধান আতাউর রহমান ভূঁইয়া কানাডায়। সেখান থেকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছিলাম। দেখি, কবে ফেরা যায় দেশে।’ এই ফাঁকে বাফুফের আগামী নির্বাচনের খোঁজখবরও নিলেন এই ব্যবসায়ী।

কার্যনির্বাহী কমিটির সর্বশেষ সভা বাফুফে ভবনে হয়নি, হয়েছে অনলাইনে
ফাইল ছবি: বাফুফে

বাফুফের একমাত্র সহসভাপতি হিসেবে সক্রিয় আছেন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান। তবে সভাপতি তো বটেই, চার সহসভাপতির কেউই ৫ আগস্টের পর আর বাফুফেতে আসেননি। সবার কক্ষই বন্ধ। ফলে নেই প্রাণচাঞ্চল্য। সাংবাদিকদের আড্ডাটাও হারিয়ে গেছে। ভবনের চারতলায় যথারীতি মেয়েরা থাকেন। সকালে অনুশীলন আর দুপুরে জিম করেন তাঁরা। কঠোর নিরাপত্তাবলয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে যাঁর কাজে ব্যস্ত।

আরও পড়ুন

এরই মধ্যেই একটা সমস্যার উদয় হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, বাফুফের যেকোনো চেকে সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সহসভাপতি কাজী নাবিল—এই তিনজনের মধ্যে অন্তত দুজনের স্বাক্ষর লাগে। কিন্তু সালামের পদত্যাগ ও নাবিল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চেকে স্বাক্ষর করা নিয়ে বড়সড় জটিলতা তৈরি হয়েছিল। সমস্যা সমাধানে ৩১ আগস্ট নির্বাহী কমিটির জরুরি অনলাইন সভা হয়েছে। যেটিতে কাজী সালাহউদ্দিন বাসা থেকে অংশ নিয়েছেন। চার সহসভাপতির মধ্যে ছিলেন শুধু ইমরুল হাসান। ইমরুলকে অর্থ কমিটির প্রধান করার পাশাপাশি চেকে সই করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে সেই সভায়।

সহসভাপতিদের মধ্যে সক্রিয় আছেন শুধু ইমরুল হাসান (মাঝে)
প্রথম আলো

২১ সদস্যের বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সহসভাপতি বাদে সদস্য ১৫ জন। তার মধ্যে আগেই সদস্যপদ ছেড়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক নীলফামারীর আরিফ হোসেন মুন। সরকার বদলের হাওয়ায় নিখোঁজ ঢাকার সংগঠক মহিদুর রহমান, নোয়াখালীর সাইফুল ইসলাম, সিলেটের মহিউদ্দিন আহমেদ। সদস্যদের বাকি ১১ জনের মধ্যে নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার, মিডিয়াপ্রধান জাকির হোসেন চৌধুরী, সাবেক ফুটবলার ইলিয়াস হোসেন, সত্যজিৎ দাশ রুপু, আমের খান, সংগঠক টিপু সুলতান, ইমতিয়াজ সুবজ বাফুফেতে মাঝেমধ্যে ঢুঁ মারেন।
এমনিতে প্রয়োজন ছাড়া বাফুফের নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তারা ভবনমুখী হন না।

দৈনন্দিন কাজ ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন বেতনভুক্ত কর্মীরাই। ঢাকা মহানগরী লিগ কমিটিসহ বাফুফের বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ৭০ জনের বেশি। তাঁরা সবাই অফিস করছেন নিয়মিত। ফলে কোনো কাজ থেমে নেই।

আরও পড়ুন

৫ আগস্ট দেশে উথালপাতালের মধ্যেই বাফুফে দেশের বাইরে দুটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নিয়েছে; যার মধ্যে নেপালে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। জাতীয় দল ভুটানের সঙ্গে থিম্পুতে দুটি ম্যাচ খেলে এসেছে। এ মাসেই ভুটানে সাফ অনূর্ধ্ব-১৭, ভিয়েতনামে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ বাছাই টুর্নামেন্টের প্রস্ততি চলছে। আগামী মাসে এএফসি অনূর্ধ্ব ১৭ ও সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ রয়েছে। এই দুটি টুর্নামেন্টের প্রস্তুতিও চলছে।

আজ দুপুর ১২টায় বাফুফে ভবনের তৃতীয় তলায় কোচের কক্ষে গিয়ে পাওয়া গেল জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরাকে। সঙ্গে সহকারী কোচ হাসান আল মামুন। দুজন ল্যাপটপে কাজ করছেন। তা করতে করতেই ভুটানের কাছে দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের হারের নানা ব্যাখ্যা দিলেন এই প্রতিবেদককে। নিজেদের ভুলের কথাও বললেন। নভেম্বরের উইন্ডোতে দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার চেষ্টা চলছে বলেও জানালেন কাবরেরা। বাংলাদেশের চেয়ে একটু ওপরের কোনো দলকে ঢাকায় এনে খেলার ইচ্ছার কথাও।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বেরিয়ে যান কারবেরা। সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ বাফুফের কর্মীরাও বেরিয়ে পড়েন। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, ‘সভাপতির সঙ্গে নিয়মিতই যোগাযোগ আছে। বাফুফের সব কাজই নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছে। থেমে নেই মাঠের কার্যক্রমও। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

আরও পড়ুন