স্পেনের দল ফাইনালে হারে না, এবার কী করবে ইংল্যান্ড
তাহলে তো স্পেন জিতেই গেল! ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হলে লন্ডনের রাস্তায় হ্যারি কেইনদের ছাদখোলা বাসে প্যারেডের যে প্রস্তুতি চলছে, সেটি বন্ধ করে দিলেই হয়।
তা, হঠাৎ ‘ইটস কামিং হোম’–এর সমর্থকদের জন্য এমন হৃদয় ভেঙে দেওয়া এ সব কথা কেন বলা হচ্ছে? বলা হচ্ছে ইতিহাসের পাঠ থেকে। বলা হচ্ছে, বড় মঞ্চে স্প্যানিশ দলগুলোর অদম্য কীর্তির নিরিখে। রোববার জার্মানির বার্লিনে স্পেন জাতীয় দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইউরোর ফাইনাল খেলতে নামছে সেই অজেয় কীর্তির ‘লিগ্যাসি’ নিয়ে। সেটা কেমন?
২০০২ থেকে ২০২৪—এই ২২ বছরে বড় টুর্নামেন্টে মোট ২৬টি ফাইনাল খেলেছে স্পেনের দলগুলো। বড় টুর্নামেন্ট বলতে জাতীয় দল পর্যায়ের ফিফা বিশ্বকাপ ও ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ, আর ক্লাব পর্যায়ের চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপা লিগ। স্পেনের দলগুলো বলতে বোঝানো হচ্ছে স্পেনের জাতীয় দল ও ক্লাবগুলো। গত ২২ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, এ সময়ে স্প্যানিশ দলগুলো ২৬ ফাইনালের একটিতেও হারেনি, জিতেছে সব কটিতেই। দুই দশকের মধ্যে ফাইনালে টানা জয়ের মধ্যে থাকা স্প্যানিশ দলগুলো যাদের হারিয়েছে, তাদের মধ্যে ৯টিই ইংল্যান্ডের! ২০২৪ ইউরোতেও তাহলে স্পেন জিতবে না কেন?
বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে স্পেনের দলগুলোর এই অজেয় যাত্রার শুরুর ২০০২ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের জয়ের মধ্য দিয়ে। সে বার ইউরোপের ক্লাবসেরার প্রতিযোগিতার শিরোপার মঞ্চে জার্মানির বায়ার লেভারকুসেনকে হারিয়েছিল রিয়াল। সেই থেকে এখন পর্যন্ত স্প্যানিশ দলগুলোর বিপক্ষে খেলে পাঁচবার হেরেছে ইতালির দল, তিনবার জার্মানির এবং দুবার ফ্রান্সের দল।
চারবার অবশ্য দুই ফাইনালিস্টই স্প্যানিশ হওয়ায় এক দলের জয় অবধারিতই ছিল। স্প্যানিশদের কাছে ফাইনালে সবচেয়ে বেশি ভুগেছে ইংল্যান্ডের দল। এর মধ্যে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের বর্তমান কোচ গ্যারেথ সাউথগেটও আছেন। ২০০৬ সালের উয়েফা কাপে স্পেনের সেভিয়ার কাছে হেরেছিল সাউথগেটের মিডলসবোরো। সেটিই ছিল সাবেক এই ফুটবলারের খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারের শেষ মৌসুম।
প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লিভারপুল হেরেছে তিনবার। ২০১৮ ও ২০২২ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে রিয়ালের কাছে, এর আগে ২০১৬ ইউরোপা লিগে সেভিয়ার কাছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২০০৯ ও ২০১১ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে হেরেছিল বার্সেলোনার কাছে, ২০২১ সালে ইউরোপা লিগ হারে ভিয়ারিয়ালের কাছে। এ ছাড়া ক্লাব ফুটবলের ফাইনালের মধ্যে আরও আছে ২০১০ ইউরোপায় ফুলহামের বিপক্ষে আতলেতিকো মাদ্রিদ এবং ২০০৬ চ্যাম্পিয়নস লিগে আর্সেনালের বিপক্ষে বার্সেলোনার জয়।
স্প্যানিশ দলগুলোর এই টানা ফাইনালজয়ে বড় অবদান রিয়াল মাদ্রিদ ও সেভিয়ার। সর্বশেষ আট বছরের মধ্যেই পাঁচবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে রিয়াল, আর ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সাতবার ইউরোপা জিতেছে সেভিয়া। অন্যদিকে বার্সেলোনা ও স্পেন জাতীয় দল সাফল্য পেয়েছে খেলোয়াড়, খেলার ধরনে মিল রেখে। ২০০৮ থেকে ২০১২ সালে দুটি ইউরো ও একটি বিশ্বকাপ জেতে স্পেনের জাতীয় দল, একই সময়ে বার্সা জেতে দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ।
এত সব ফাইনালের গল্প জেনে মনে হতে পারে ইংল্যান্ডের জয়ের আশা মাঠে নামার আগেই শেষ। না, সাউথগেটের দলের আশার জায়গাও আছে। স্প্যানিশ দলগুলোর শেষ দুটি ফাইনাল হারের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে জার্মানির নাম, যে দেশে এবার ফাইনাল খেলবে ইংল্যান্ড–স্পেন। ২০০১ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল হয়েছিল ইতালির মিলানে। সেখানে ভ্যালেন্সিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়েছিল জার্মানির ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ। এর আগের সপ্তাহে উয়েফা কাপের ফাইনালে স্পেনের আলাভেজকে হারায় ইংল্যান্ডের লিভারপুল। এই ম্যাচটা হয়েছিল জার্মানির ডর্টমুন্ডে। বিশ্বকাপ, ইউরো, চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ইউরোপা লিগের বাইরে ২০১৩ ফিফা কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে (ব্রাজিলের কাছে ৩–০ ব্যবধানে) হেরেছিল স্পেন।
এমনিতে মুখোমুখি লড়াইয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে স্পেনের বিপক্ষে বেশি জয়ও ইংল্যান্ডের—২৭ ম্যাচে ১৪টি। তবে এর কোনোটিই ফাইনালে নয়। আর সেটিই ইংল্যান্ডের জন্য শঙ্কার।