আর্জেন্টিনার নারী ফুটবলারদের দুর্দশা—ক্যাম্প ছেড়ে গেলেন তিনজন
বিস্তারিত পড়ার পর যে কেউ বলবেন, ম্যারাডোনা–মেসিদের দেশের নারী ফুটলারদের এ কী হাল!
এমনিতেই আর্জেন্টিনার শীর্ষ নারী ফুটবলারদের ঠিকমতো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। এরপরও সামনে কোস্টারিকার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ থাকায় খেলোয়াড়দের জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডেকে আনা হয়েছে। ক্যাম্পের পরিবেশ ও খাবারের মান ভালো হলে তবু না হয় খেলোয়াড়েরা মেনে নিতেন। কিন্তু কম পারিশ্রমিকের সঙ্গে ক্যাম্পেরও মান যা–তা হওয়ায় জাতীয় দল ছেড়েই গেছেন তিন নারী ফুটবলার। তাঁরা আর কখনো আর্জেন্টিনার হয়ে না খেলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ওই তিন ফুটবলার হলেন গোলকিপার লরিনা অলিভেরোস, ডিফেন্ডার হুলিয়েতা ক্রুজ ও মিডফিল্ডার লরেনা বেনিতেজ। তাঁরা তিনজনই আর্জেন্টিনার বিখ্যাত ক্লাব বোকা জুনিয়র্সে খেলেন। ডিয়েগো ম্যারাডোনাও বোকা জুনিয়র্সে তিন মৌসুম খেলেছেন।
অলিভেরোস, ক্রুজ ও বেনিতেজ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) কর্মকর্তাদের দিকে আঙুল তুলে কড়া ভাষায় পোস্ট দেন। সেখানে তাঁরা লজিস্টিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং ফেডারেশন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারেরও অভিযোগ করেন। এগুলোই যে তাঁদের ক্যাম্প ছাড়ার কারণ, তা–ও স্পষ্ট করেছেন।
ইনস্টাগ্রামে ক্রুজ লিখেছেন, ‘আমরা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছি, যেখানে প্রতিনিয়ত অন্যায়ের শিকার হচ্ছি, আমাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না, আমাদের কথা শোনা হচ্ছে না, পরিস্থিতির আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। অপমানিত হতে হতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’ ক্রুজ আরও লিখেছেন, ‘আর্জেন্টিনা নারী ফুটবল দলের উন্নয়নে অনেক কাজ করা প্রয়োজন। আমি শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে বলছি না। অনুশীলন, মধ্যাহ্নভোজ, সকালের নাশতার মান নিয়েও বলছি।’
বেনিতেজ লিখেছেন, ‘এটা (ক্যাম্প ছেড়ে যাওয়া) আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমার দেশের জাতীয় দলের সঙ্গে আমার অনেক বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। বেশ কিছু দুঃখজনক কারণে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
কোস্টারিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা নারী দল। প্রথমটি বাংলাদেশ সময় ১ জুন ভোরে, দ্বিতীয়টি ৪ জুন ভোরে। দুটি ম্যাচই হবে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে। ম্যাচ দুটি সামনে রেখে গত সপ্তাহে প্রস্তুতি ক্যাম্প শুরু করেছেন আর্জেন্টিনার মেয়েরা।
২৪ বছর বয়সী মিডফিল্ডার বেনিতেজের দাবি, গত সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার এএফএ খেলোয়াড়দের সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার সরবরাহ করেনি। খেলোয়াড়দের কেন খেতে দেওয়া হলো না—এ ব্যাপারে বেনিতেজ জানতে চাইলে ফেডারেশনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো টাকা নেই।’
ক্যাম্পে থাকার সময়েই ক্রুজ ও বেনিতেজ জানান, এক টুকরা শূকরের মাংস, একটি কলা ও পনিরের স্যান্ডউইচ ছাড়া খেলোয়াড়দের আর কিছুই খেতে দেয়নি ফেডারেশন। ভালো পারফর্ম করার জন্য যা একেবারেই অপ্রতুল। এমনকি খেলোয়াড়দের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে যাওয়া–আসার জন্য কোনো গাড়ির ব্যবস্থাও করা হয়নি।
তাঁরা বলেছেন, ‘আমাদের কয়েকজন সতীর্থকে গণপরিবহন ব্যবহার করতে হয়েছে।’ ক্রুজ ও বেনিতেজ আরও বলছেন, ‘যেহেতু কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচ দুটি নিজেদের মাঠেই হবে, তাই ফেডারেশন আমাদের কোনো পারিশ্রমিক দেবে না।’
ইনস্টাগ্রামের সেই পোস্টে এএফএর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ করেছেন বেনিতেজ। জানিয়েছেন, খেলোয়াড়দের পরিবারের সদস্যদেরও টিকিট কিনে মাঠে ঢুকতে হয়, ‘দলের শীর্ষ খেলোয়াড়েরা তো পারিশ্রমিক পান–ই না, উল্টো পরিবারের সদস্যদের ৫ হাজার পেসো (আর্জেন্টিনার মুদ্রার নাম) দিয়ে টিকিট কেটে স্টেডিয়ামে ঢুকতে হয়। এ রকম আরও লাখ লাখ বিষয় আছে, যেগুলোর মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়।’
গোলিকিপার অলিভেরোস ইনস্টাগ্রামে আর্জেন্টিনার জার্সি পরা বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আমার হৃদয় ভেঙে গেছে এবং হাজারো স্বপ্ন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। আমার আশা পরবর্তী প্রজন্ম যেন ফুটবল খেলে আনন্দ পায়। যেমনটা আমরা কিছু সময় পাচ্ছিলাম।’
অলিভেরোস, ক্রুজ ও বেনিতেজের ক্যাম্প ছেড়ে যাওয়া নিয়ে এএফএ এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তর্ক সাপেক্ষে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা নারী ফুটবলার এস্তেফানিয়া বানিনি অবশ্য সাবেক তিন সতীর্থের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বানিনি লিখেছেন, ‘কাউকে না কাউকে প্রতিবাদ করতেই হতো। তোমাদের অভিনন্দন।’ বানিনি নিজেও এএফএর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে গত বছর জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন।