ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কাতারে পা রাখেন বিতর্কের বোমা ফাটিয়ে। পর্তুগালের বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর আগে বেশি কথা হচ্ছিল তা নিয়েই। ব্রুনো ফার্নান্দেজ, রুবেন নেভেস, বের্নার্দো সিলভারা যখনই কোনো সংবাদ সম্মেলনে গেছেন; ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমালোচনা করে দেওয়া রোনালদোর সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গটি উঠেছে।
অতঃপর দৃশ্যপটে হাজির হলেন রোনালদো নিজেই। পর্তুগালের ম্যাচের দুদিন আগে সংবাদাম্যমের সামনে এসে ঘোষণা দিলেন—বিতর্ক–টিতর্ক তাঁকে ছুঁতে পারছে না, বিশ্বকাপ রাঙাতে সম্পূর্ণ তৈরি তিনি! শারীরিক দিক থেকে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ভালো বোধ করছেন।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, রোনালদো আর নেই সে রোনালদো! বয়সের পাল্লাটা যে অনেক ভারী হয়েছে, সেটা মাঠে তাঁর নড়নচড়নেই স্পষ্ট হয়েছে। উইং দিয়ে বা মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে আগের সেই রোনালদোর ভোঁ–দৌড় দেখা গেল না একবারও। প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে আর ভেতরে বেশ কয়েকবারই বল পেয়েছেন। কিন্তু আতঙ্ক ছড়াতে পারলেন কই! উল্টো মুভমেন্টটা ধীর হওয়ায় কয়েকটি সহজ সুযোগ পেয়েও আটকে গেছেন ঘানার ডিফেন্ডারদের প্রতিরোধের সামনে।
সে যাই হোক আর যেভাবেই হোক, সমর্থকদের কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন রোনালদো। পেনাল্টি থেকে গোল করে পর্তুগালের ৩–২ ব্যবধানের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার। একই সঙ্গে এই গোলে অসাধারণ একটি রেকর্ডও গড়েছেন। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচ বিশ্বকাপে গোল করলেন রোনালদো।
ম্যাচের শুরু থেকেই ঘানার রক্ষণে আক্রমণের ঢেউ তোলেন রোনালদো–ফেলিক্স–কানসেলোরা। এর প্রতিফলন অবশ্য স্কোরবোর্ডে দেখা যাচ্ছিল না। এর কারণও আছে। ম্যাচের ১০ মিনিটেই বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যান রোনালদো। কিন্তু শটটি তিনি নেন ঘানার গোলকিপার লরেঞ্জ আটি জিগি বরাবর। এরপর আরও কয়েকটি সুযোগ পান রোনালদো। তাঁর সতীর্থরাও যেন তাঁকে দিয়ে গোল করাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। এ কারণে বক্সের মধ্যে বেশির ভাগ পাসই গেছে রোনালদোর দিকে। কিন্তু সহজ সুযোগগুলোকেও গোলে পরিণত করতে পারেননি তিনি।
এভাবেই শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা। অবশেষে পর্তুগাল গোল পায় ৬৫ মিনিটে। পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন রোনালদো। পেনাল্টিটি আদায় করেন তিনি নিজেই। রোনালদোকে ঠেকাতে তাঁকে বক্সের মধ্যে ফেলে দেন সালিসু। সঙ্গে সঙ্গেই রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। ঘানার খেলোয়াড়েরা প্রতিবাদ জানালেও ভিএআর দেখারও প্রয়োজন মনে করেননি রেফারি। পেনাল্টি নিতে বেশ অনেকটা সময় নেন রোনালদো। কিন্তু বলটি ঠাণ্ডা মাথায়ই জালে পাঠান তিনি।
রোনালদোর গোলটি ফিরিয়ে দিতে বেশি সময় নেয়নি ঘানা। ৭৩ মিনিটে ১–১ সমতায় ফেরে তারা। পর্তুগালের বাজে রক্ষণের সুবিধা নিয়ে সহজেই ঘানাকে সমতায় ফেরানো গোলটি করেন কিংবদন্তি আবেদি পেলের ছেলে এবারের বিশ্বকাপে ঘানার অধিনায়ক আন্দ্রে আইয়ু। এ গোলের পর মনে হচ্ছিল রাতটি বুঝি আর রোনালদোর হলো না! কিন্তু ঘানা সমতায় ফেরার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিক্রিয়া দেখায় পর্তুগাল। ৭৮ মিনিটে জোয়াও ফেলিক্সের অসাধারণ এক গোলে সমতায় ২–১ গোলে এগিয়ে যায় তারা। ২ মিনিট পর ব্যবধান ৩–১ করেন রাফায়েল লিয়াও। দুটি গোলেই সহায়তা ম্যাচজুড়ে অসাধারণ খেলা ফার্নান্দেজের।
বাঁক বদলের এ ম্যাচে যখন মনে হচ্ছিল, ২ মিনিটের ২ গোলে খেলা ‘শেষ’ করে দিয়েছে পর্তুগাল, তখনই আবার ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় ঘানা। ৮৯ মিনিটে উসমান বুখারির গোলে ব্যবধান কমিয়ে ৩–২ করে তারা। এর আগেই অবশ্য রোনালদোকে মাঠ থেকে তুলে নেন পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। সময়ের অন্যতম সেরা তারকা মাঠ ছাড়েন সমর্থকদের ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ নিয়ে!
দ্বিতীয়ার্ধে বারকয়েক খেলা থেমে যাওয়ায় যোগ করা সময়টা ছিল ৯ মিনিটের। এই সময়ে ঘানা গোলের দুটি ভালো সুযোগড় তৈরি করলেও শেষ পর্যন্ত পারেনি। ম্যাচ শেষেও তাই হাসি লেগে ছিল রোনালদোর মুখে!