খেলার মাঠে এমন দৃশ্যই দেখতে চায় বাংলাদেশ
এমন দৃশ্যই তো দেখতে চায় বাংলাদেশ। গতকাল সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক শামসুন্নাহারকে কাছে ডেকে নেন ভুটানের ফুটবলার শেরিং ইয়াংদেন। এরপর একে একে পুনসো চোডেন, গাওয়ান চোডেনসসহ অন্যরাও ঘিরে ধরলেন শামসুন্নাহারকে। কমলাপুর স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সবাই। গতকাল অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভুটানকে ৫-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছেন শামসুন্নাহার। অথচ তাঁর সঙ্গে ছবি তুলেই খুশি ভুটানের মেয়েরা! বাংলাদেশের মেয়েরা প্রতিপক্ষের কাছ থেকে এভাবে সম্মান আদায় করে নিচ্ছেন—দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ছেলেদের খেলায় যা বিরল!
ম্যাচ শেষের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসে ভুটানের কোচ কারমা দেমার মুখেও ছিল শামসুন্নাহারের প্রশংসা, ‘ওর মতো এমন গতিময় ফুটবলারের কাছেই আসলে হেরেছে ভুটান। আমরা এবার ভুটানে গিয়ে শামসুন্নাহারের মতো গতিময় ফুটবলার তৈরির দিকে নজর দেব।’
সাবিনা খাতুন, সিরাত জাহান, কৃষ্ণা রানীদের ভিড়ে সাধারণত জাতীয় দলে গোলাম রব্বানীর একাদশে খুব কম সময়ই সুযোগ মেলে শামসুন্নাহারের। কিন্তু যদি কখনো বদলি হিসেবে নামতেন, প্রতিপক্ষের জন্য হয়ে উঠতেন মূর্তিমান আতঙ্ক। গত সেপ্টেম্বরে সাফে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করার পেছনেও বড় অবদান ছিল শামসুন্নাহারের। নেপালের বিপক্ষে ফাইনালে ১৩ মিনিটে স্ট্রাইকার সিরাত জাহান চোটে পড়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলে বদলি হিসেবে কোচ গোলাম রব্বানী নামান শামসুন্নাহারকে। কোচের আস্থার দারুণ প্রতিদান দেন সেদিন। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামের গ্যালারি উপচে পড়া দর্শকের চিৎকার থোড়াই কেয়ার করে মণিকা চাকমার ক্রস থেকে দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে করেন যে গোল, সেটি অনেক দিন মনে থাকবে দর্শকদের।
এবার ঢাকায় অনুষ্ঠানরত অনূর্ধ্ব-২০ সাফের আসরে দলের বড় ভরসার নাম শামসুন্নাহার। টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত খেলা শামসুন্নাহার নেপালের বিপক্ষে করেন ১টি গোল। গতকালও তাঁকে আটকাতে পারেনি ভুটান। টুর্নামেন্টে ৪ গোল করে নেপালের আমিশা কারকির সঙ্গে সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে লড়াইয়ে আছেন শামসুন্নাহার।
এই দলের তুরুপে তাস যেন শামসুন্নাহার। ম্যাচের পর কোচ গোলাম রব্বানী সেটাই বললেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছি, শামসুন্নাহারকে অনেক দরকার বাংলাদেশের। ও আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার। দলে ওর অবস্থান পুরে দলের জন্য অনেক উদ্দীপনা তৈরি করে। শামসুন্নাহার দলের জয়ে কত বড় ভূমিকা পালন করে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।’ ম্যাচের পর অধিনায়ক শামসুন্নাহারকে ১০–এ ৯ দিলেন কোচ, একই সঙ্গে ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহারকেও দিলেন সমান ৯ নম্বর।
ম্যাচের পর শামসুন্নাহারকে ঘিরে ভুটানের মেয়েদের এমন উচ্ছ্বাসে গর্বিত কোচ গোলাম রব্বানী, ‘আমি যতটুকু শুনেছি, ভুটানের প্রতিটি ফুটবলার ব্যক্তিগতভাবে শামসুন্নাহারের অনেক ভক্ত। ওরা শামসুন্নাহারকে খুব পছন্দ করে। ওরা শামসুন্নাহারের সঙ্গে ম্যাচের পর ছবি তুলতে চেয়েছিল। সেই ইচ্ছা পূরণ করেছে শামসুন্নাহার। আসলে এমন দৃশ্য দেখতেও ভালো লাগে আমার।’