‘গ্রুপ অব ডেথ’ বা ‘মৃত্যুকূপ’ বলে একটা কথা প্রতি বিশ্বকাপেই শোনা যায়। ড্রতে যদি তুলনামূলক শক্তিশালী একাধিক দল একই গ্রুপে পড়ে যায়, তাহলেই এই শব্দ চলে আসে আলোচনায়। এবারের বিশ্বকাপেও অন্তত দুটি গ্রুপকে খালি চোখে দেখেই গ্রুপ অব ডেথ রায় দেওয়া যায়। যেমন গ্রুপ ‘বি’ এবং গ্রুপ ‘ই’। একটু সূক্ষ্মভাবে দেখলে গ্রুপ ‘জি’টাকেও বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বলা যায়।
সাধারণত দলগুলোর নাম শুনেই আমরা ধারণা করে নিতে পারি কোন দলের শক্তি কেমন বা কোন দলের বিপক্ষে কোন দলের জেতার কথা। কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে যদি দলগুলোর শক্তিমত্তা বা ফর্মকে দেখা যায়, তাহলে হয়তো এ রকম মৃত্যুকূপ নামের গ্রুপগুলোর পরিস্থিতি আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। আর প্রতিটি দলের শক্তিমত্তা ও ফর্ম বিবেচনার খুব কার্যকর একটা মাধ্যম হচ্ছে দলগুলোর সর্বশেষ ফিফা র্যাঙ্কিং (৬ অক্টোবর ২০২২)।
সাধারণ ধারণা হলো যে গ্রুপের দলগুলোর র্যাঙ্কিংক্রম যত কম, সেই গ্রুপ তত বেশি শক্তিশালী দলের সমন্বয়ে গঠিত। যেমন গ্রুপ ‘বি’র চার দলের মোট র্যাঙ্কিং ৬০, অন্যদিকে গ্রুপ ‘এ’–এর মোট র্যাঙ্কিং ১২০। সাদা চোখেই বলে দেওয়া যায় গ্রুপ ‘এ’–এর তুলনায় গ্রুপ ‘বি’তে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হওয়ার কথা। সেই বিবেচনায় এবারের বিশ্বকাপের ‘গ্রুপ অব ডেথ’ নিশ্চিতভাবেই গ্রুপ ‘বি’ এবং গ্রুপ ‘ই’। বেলজিয়াম ও ব্রাজিলের গ্রুপ দুটোও বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। অন্যদিকে বাকি চারটি গ্রুপের বড় দলগুলোর খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয় প্রথম পর্বের বাধা পেরোতে।
তবে এর ভেতরেও বিবেচনা করার মতো কিছু বিষয় আছে। যেমন সব সময় না হলেও সাধারণত গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল দলটা অপর তিন দলের সহজ শিকারে পরিণত হয়। গ্রুপের শীর্ষ দুই হওয়ার লড়াইটা সাধারণত শ্রেয়তর তিন দলের মধ্যে হয়ে থাকে। বিশেষ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানের জন্য পয়েন্ট ছাড়াও গোল ব্যবধান একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল দলটাকে যদি হিসাবের বাইরে রাখা হয়, তাহলে কিন্তু ভিন্ন একটা ছবি পাওয়া যায়।
র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ২০ দলের কটি একই গ্রুপে রয়েছে, সেটা বিবেচনায় নিলে গ্রুপ ‘বি’ সবার আগে আসবে। বস্তুত, শুধু এই গ্রুপেই সব কটি দল র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ২০ দলের মধ্যে আছে। এর কাছাকাছি ধরা যেতে পারে গ্রুপ ‘এফ’ ও ‘জি’কে। ইংল্যান্ডের পাশাপাশি বেলজিয়াম ও ব্রাজিলকে গ্রুপ পর্বেই দুটি ম্যাচ খেলতে হবে র্যাঙ্কিংয়ে সেরা ২৫-এ থাকা দলের বিপক্ষে।
অন্যদিকে গ্রুপ ‘ডি’ হলো একমাত্র গ্রুপ, যেখানে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১০ দলের মধ্যে দুটি দল রয়েছে। তবে বাকি দুই দলের র্যাঙ্কিং ৩০–এর বাইরে বলে ফ্রান্স ও ডেনমার্কের গ্রুপটাকে গ্রুপ অব ডেথ বলার উপায় নেই। প্রায় একই পরিস্থিতি গ্রুপ ‘ই’তেও (যদিও জার্মানির র্যাঙ্কিং ১১)। কিন্তু এখানে এশিয়ার দল জাপান থাকায় গ্রুপটাকে অন্তত ফ্রান্সের গ্রুপের চেয়ে কঠিন বলে মনে হচ্ছে।
কঠিন গ্রুপের পর এবার তাহলে সহজ গ্রুপগুলো নিয়ে কথা বলা যাক। র্যাঙ্কিং অনুযায়ী ফেবারিটদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ গ্রুপ পেয়েছে ডাচরা। একই কথা প্রযোজ্য লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ক্ষেত্রেও। সাদা চোখে তো বটেই, র্যাঙ্কিং দেখলেও এই তিন গ্রুপকে সহজ বলার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন—
• শুধু এই গ্রুপগুলোতেই ১টি করে ইউরোপীয় দল রয়েছে।
• শুধু এই গ্রুপগুলোতেই র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ৫০ বা এর পরের দল রয়েছে।
• আর্জেন্টিনার গ্রুপের পোল্যান্ড (২৬) ও সৌদি আরব (৫১) নিজ নিজ মহাদেশ থেকে বিশ্বকাপে আসা দলগুলোর মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দল।
• ৩২ দলের মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দল ঘানা রয়েছে পর্তুগালের গ্রুপে।
র্যাঙ্কিং নিয়ে এই হিসাব–নিকাশ শুধুই কাগুজে খেলা, বাস্তবে র্যাঙ্কিংয়ের কথা চিন্তা করে কেউ মাঠে নামে না। তারপরও নিকট অতীতে মাঠের খেলায় প্রতিটা দল কেমন ফলাফল করেছে, কার কেমন ফর্ম যাচ্ছে, সেটা বোঝার সেরা উপায় কিন্তু ফিফা র্যাঙ্কিংই। র্যাঙ্কিং খেলার ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী অবশ্যই করে না, কিন্তু গোলের খেলা ফুটবলে ৯০ মিনিট শেষে কে কেমন ফল ঘরে তুলল, সেটা কিন্তু র্যাঙ্কিংই বলে দেয়।