বর্ষসেরা গোলের লড়াইয়ে রিচার্লিসন, পায়েতদের সঙ্গে আছেন এক পায়ের খেলোয়াড়ও
বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বে সার্বিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের রিচার্লিসনের বাইসাইকেল কিকের গোলটি এখনো অনেকের চোখে লেগে আছে। কাতার বিশ্বকাপের সেরা গোলের স্বীকৃতিও পেয়েছে এটি।
বিশ্বকাপ মাতানো সেই গোলকে বর্ষসেরা (ফিফা পুসকাস অ্যাওয়ার্ড) গোলের লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন একজন এক পাঁয়ের খেলোয়াড়। মার্সিন ওলেকসি নামের পোল্যান্ডের এই ফুটবলার অ্যাম্পিউটি ফুটবলে খেলেন।
অ্যাম্পিউটি ফুটবল হচ্ছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের খেলা, যাঁদের একটি পা নেই (গোলরক্ষকের ক্ষেত্রে একটি হাত নেই)। ক্রাচে ভর করে ছোটা যায়, কিন্তু বল খেলতে হয় এক পা দিয়ে।
৩৬ বছর বয়সী ওলেকসি পোল্যান্ডের অ্যাম্প ফুটবল দল ওয়ার্তা পোজনায় হয়ে খেলেন। গত ৭ নভেম্বর ঘরোয়া টুর্নামেন্টে স্তিল সেজজোর বিপক্ষে বাইসাইকেল কিকে দুর্দান্ত এক গোল করেন।
সেই গোল ২০২২ সালের ফিফা পুসকাস অ্যাওয়ার্ডের সেরা তিনে জায়গা করে নিয়েছে। বাকি দুটির একটি রিচার্লিসনের, অন্যটি ইউরোপা কনফারেনস লিগে থিসালোনিকির বিপক্ষে করা মার্শেইয়ের দিমিত্রি পায়েতের গোল।
১৯৮৫ সালে চালু হওয়া অ্যাম্প ফুটবলের কোনো গোল এই প্রথম ফিফার বর্ষসেরা গোলের তালিকায় মনোনয়ন পেল।
বিশ্বকাপের বছরের জন্য মোট ১১টি গোল ফিফার মনোনয়ন পেয়েছিল। এর মধ্যে নারী ফুটবলার ছিলেন তিনজন। ওলেকসি ছাড়া সবাই সুস্থ ও স্বাভাবিক খেলোয়াড়।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা ভোটের ভিত্তিতে সেরা তিন গোল নির্বাচিত হয়েছে।
আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি জুরিখে পুসকাস অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করবে ফিফা। সেরা তিনজন উপস্থিত থাকবেন পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে।
জুরিখের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের সুযোগ পাওয়ার আগে সেরা এগারোতে মনোনীত হয়েই দারুণ খুশি ছিলেন ওলেকসি।
একসময় রিচার্লিসন, পায়েতদের মতো সুস্থ–স্বাভাবিকই ছিলেন। গোলরক্ষক হিসেবে পোল্যান্ডের তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরের প্রতিযোগিতাতেও খেলেছেন। কিন্তু ২০১০ সালের সড়ক দুর্ঘটনা তাঁকে স্বাভাবিক জীবন থেকে ছিটকে দেয়। রাস্তার পাশে কাজ করার সময় দ্রুতগতিতে যাওয়া একটি গাড়ি তাঁকে ধাক্কা দেয়। একটি পা কেটে ফেলতে হয় ওলেকসির।
পোল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন টিভিপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে ওলেকসি বলেন, ‘আমি একটা হুইলচেয়ারে বসে সিগারেট টানছিলাম, আর কাঁদছিলাম। নিজেকেই জিজ্ঞাসা করছিলাম আমার সঙ্গে কেন এমন হলো?
মনের জোর আর স্বজনদের সহায়তায় এক পা নিয়েই আবার ফুটবলে ফিরেছিলেন ওলেকসি। একটি ফুটবল স্কুলে কোচিং করাতেন। কিন্তু না খেলতে পারার বেদনা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াত।
২০১৯ সালে অ্যাম্প ফুটবল খেলা শুরু করেন। দুই বছরের মাথায়ই পোল্যান্ডের ঘরোয়া ফুটবল মৌসুমে ‘সেরা আবিষ্কারে’র স্বীকৃতি পেয়ে যান। গত বছর ডাক পান পোল্যান্ডের অ্যাম্পিউটি জাতীয় দলে। তুরস্কের মাটিতে খেলেন বিশ্বকাপও।
জাতীয় দলকে বৈশ্বিক আসরে প্রতিনিধিত্ব করতে পারার সেই আনন্দের পর এবার পেলেন ফিফার পুসকাস অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন। ওলেকসির যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না তিনি এখন ফিফা-পুরস্কারের অন্যতম দাবিদার, ‘বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ফিফা পুরস্কারে আমার নাম আছে। কেমন যেন ঘোর ঘোর লাগছে।’
টিভিপির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ওলেকসি আরও বলেন, ‘অ্যাম্প ফুটবল আমাকে শুধু ফুটবলই ফিরিয়ে দেয়নি, দ্বিতীয় জীবনও দিয়েছে। ফুটবল সব সময়ই আমার ভালোবাসার জায়গা ছিল। এখন শুধু খেলছিই না, পোল্যান্ড জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্বও করছি। যে স্বপ্নটা আমি সব সময়ই দেখেছি। অ্যাম্প ফুটবলকে আমি ধন্যবাদ জানাই, এই খেলা দেখিয়েছে প্রতিবন্ধিতা বলে কিছু নেই। আমার মনোনয়ন পাওয়াটা যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।’