মিরপুরে ক্রিকেট, কমলাপুরে ফুটবল।
আজ শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ টি–টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয়টিতে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
তবে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ফুটবল দিয়েছে হতাশার খবর। মেয়েদের এএফসি অনূর্ধ্ব–২০ এশিয়ান কাপে ইরানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে জয়ের বিকল্প ছিল না মেয়েদের। তবে ম্যাচটিতে ১–০ গোলে হেরে গেছে বাংলাদেশ। ইরানের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছেন নেগিন জানদি।
ম্যাচের ৮৫ মিনিটে হওয়া গোলে যতটা না অবদান ইরানি ফরোয়ার্ডের, এর চেয়েও বেশি দায় গোলরক্ষক রুপনা চাকমার।
ইরানের গোলরক্ষক ফাতেমেহ বারাতির নেওয়া লং শট মাঝমাঠে এসে পড়ে। সেই বল হেডে ইরানের এক মিডফিল্ডার এগিয়ে দেন সামনে থাকা জান দিকে। মুহূর্তেই বল নিয়ে বক্সে ঢোকেন জানদি। কিন্তু গোলরক্ষক রুপনা চাকমা ততক্ষণে বক্স ছেড়ে অনেকখানি এগিয়ে আসেন।
ডিফেন্ডার ইতি ও সুরমাও ছিলেন না নিজেদের পজিশনে। এরপরও জানদির নেওয়া শট ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন রুপনা। কিন্তু জানদির গতির সঙ্গে পেরে ওঠেননি। ততক্ষণে বল গড়িয়ে গড়িয়ে জালে ঢুকেছে।
ম্যাচ শেষে মাঠের মাঝখানে পতাকা বিছিয়ে গোল হয়ে আনন্দ-নৃত্যে মেতে ওঠেন ইরানের ফুটবলাররা। কোচ মরিয়ম জাহানেজাতিকে কাঁধে তুলে তাঁরা নাচতে শুরু করেন।
বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবল মানেই কমলাপুর স্টেডিয়ামে দর্শকদের উপস্থিতি। আজও এর ব্যতিক্রম ছিল না। কারও হাতে ছিল বাংলাদেশ লেখা প্ল্যাকার্ড। কারও হাতে পতাকা। অনেকে ভুভুজেলা নিয়ে এসেছিলেন মাঠে। কিন্তু দর্শকেরা জয়ের আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলেন কোথায়?
আগের ম্যাচের মতো আজও শামসুন্নাহারকে খেলাতে পারেননি কোচ গোলাম রব্বানী। লিগামেন্টের চোটে পড়ে প্রথম ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে বেঞ্চে বসে কাটিয়েছিলেন এই ফরোয়ার্ড। তাঁকে ছাড়া নামতে হয় আজও। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শামসুন্নাহারের মতো ফরোয়ার্ডের অভাব হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে স্বাগতিকেরা।
ম্যাচের প্রথমার্ধে গোলের সুযোগ ছিল দুই দলের সামনেই। কিন্তু গোল নষ্টের মহড়ায় মেতে ওঠেন উভয় দলের খেলোয়াড়েরা। অবশ্য প্রথমার্ধে বাংলাদেশের গোল না পাওয়ার দায়টা আকলিমা খাতুনেরই বেশি। ম্যাচ শুরুর আট মিনিটের মধ্যেই দুই দফায় ভালো সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড।
ইরানি ফুটবলাররা ঢাকার গরমে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন। ম্যাচের মাঝে বারবার মাঠে শুয়ে পড়েন কেউ কেউ। ফিটনেস ও রানিংয়ে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ সেই সুযোগও নিতে পারেনি।
ম্যাচের ২০ মিনিটে স্বপ্না রানী ভালো একটা সুযোগ পেয়েছিলেন। বক্সের মধ্যে দাঁড়ানো স্বপ্নার সামনে তখন শুধুই ইরানের গোলরক্ষক। কিন্তু তিনি বল পাঠিয়ে দেন মাঠের বাইরে। অবশ্য ৩২ মিনিটেও বাংলাদেশের আক্রমণ আরেকবার ব্যর্থ হয়েছে। স্বপ্নার দুর্দান্ত পাসে আকলিমা পা ছোঁয়াতেই পারেননি! পাশে দাঁড়ানো আইরিন শট নিলেও সেটি পোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য বাংলাদেশের তুলনায় বেশি আক্রমণে উঠেছে ইরানিরা। সময় যত গড়িয়েছে, ততই যেন চাপে পড়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। ম্যাচের ৬০ মিনিটে সোহাগীর বদলে উন্নতিকে মাঠে নামান কোচ। ৬৮ মিনিটে মাহফুজার বদলে নামেন হালিমা। কিন্তু দুজন বদলি নামিয়েও ম্যাচের ভাগ্য বদলাতে পারেননি গোলাম রব্বানী।
আগামী ৩-১১ জুন হবে এশিয়ান কাপের দ্বিতীয় রাউন্ড। দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে চারটি দল উজবেকিস্তানে চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। চূড়ান্ত পর্বে সরাসরি খেলবে ২০১৯ সালের সেরা তিন দল জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়া। এদের সঙ্গে যোগ হবে স্বাগতিক উজবেকিস্তান। এ ছাড়া দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে সেরা চার দল সুযোগ পাবে চূড়ান্ত পর্বে।
বাংলাদেশ দল: রুপনা চাকমা, নাসরিন আক্তার, সুরমা জান্নাত, আফঈদা খন্দকার, সোহাগী কিসক (উন্নতি খাতুন), স্বপ্না রানী, মাহফুজা খাতুন (হালিমা) , শাহেদা আক্তার, আকলিমা খাতুন, আইরিন খাতুন ও ইতি খাতুন।