জরিমানার তোয়াক্কা না করেই বাফুফের দুই লিগে খেলছে না ৩ দল

যুব ফুটবল লিগে খেলবে না চট্টগ্রাম আবাহনী, ফরাশগঞ্জ ও নোফেল স্পোর্টিংপ্রতীকী ছবি

ক্লাব লাইসেন্সিংয়ের শর্ত অনুযায়ী, বাফুফের বয়সভিত্তিক লিগে খেলা বাধ্যতামূলক পেশাদার স্তরের সব ক্লাবের। না খেললে ২০ লাখ টাকা জরিমানা। তবে জরিমানার তোয়াক্কা না করে বাফুফে আয়োজিত এবারের দুটি বয়সভিত্তিক লিগে খেলছে না তিনটি ক্লাব—চট্টগ্রাম আবাহনী, ফরাশগঞ্জ ও নোফেল স্পোর্টিং।

চট্টগ্রাম আবাহনী খেলছে না আগামীকাল ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ক্লাবগুলোর অনূর্ধ্ব–১৮ লিগে। প্রিমিয়ার লিগের বাকি ৯টি দল অংশ নিচ্ছে এই লিগে। চট্টগ্রাম আবাহনী কেন খেলছে না, এ ব্যাপারে ক্লাবটির আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। বাফুফেকে তারা কোনো চিঠিও দেয়নি।

আরও পড়ুন

তবে যোগাযোগ করলে বিপিএলে চট্টগ্রাম আবাহনীর ম্যানেজার ও জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আরমান আজিজ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ক্লাবের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তেই অনূর্ধ্ব–১৮ লিগে খেলছে না চট্টগ্রাম আবাহনী। তবে ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করেছিলাম আমি। বিপিএলে খেলার জন্য আমাদের যে অংশগ্রহণ ফি পাওয়ার কথা বাফুফের কাছ থেকে, তা থেকে কিছু অংশ বাফুফের কাছে চেয়েছিলাম। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক বিষয়টা দেখবেন বলে দুদিন সময় নিলেও তিনি কিছু আর জানাননি। ফলে অনূর্ধ্ব–১৮ দলও গড়া হয়নি।’

ওদিকে ২৫ জুন শুরু হচ্ছে পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিনয়নশিপ লিগের (বিসিএল) ক্লাবগুলোর অনূর্ধ্ব-১৬ লিগ। বিসিএলের আট ক্লাবের মধ্যে বাফুফের এলিট একাডেমি খেলছে না। এলিটকে অনূর্ধ্ব–১৮ লিগে খেলানোর প্রয়োজন মনে করেনি বাফুফে। বাকি সাত ক্লাবের মধ্যে ফরাশগঞ্জ ও নোফেল খেলছে না। ফলে অনূর্ধ্ব-১৬ লিগে দল মাত্র পাঁচটি। চট্টগ্রাম আবাহনীর মতো ফরাশগঞ্জও না খেলার ব্যাপারে কিছু জানায়নি বাফুফেকে।

তবে অনূর্ধ্ব–১৬ লিগে না খেলার একাধিক কারণ বলছেন নোফেলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া। তাঁর কথা, ‘এবার অনেক কষ্ট করে বিসিএলে অবনমন ঠেকিয়ে দলটা টিকিয়ে রেখেছি। কিন্তু এখন আর্থিক অনটনে অনূর্ধ্ব–১৬ দল গড়া যায়নি। দল গড়লেও খেলোয়াড়দের রাখার জায়গা নেই। তারপরও লিগ নয়, এই আয়োজনটাকে টুর্নামেন্ট আকারে করতে বাফুফেকে অনুরোধ করেছিলাম। তাতে সময় কম লাগত, খরচও কম হতো। কিন্তু বাফুফে সেটা করেনি।’

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পাঁচ দলের অনূর্ধ্ব–১৬ সিঙ্গেল লিগ হওয়ায় প্রতি দলের ম্যাচ হবে মাত্র চারটি করে। অনেকটা টুর্নামেন্টের মতোই। তারপরও অনূর্ধ্ব ১৬ লিগে না খেলে ২০ লাখ টাকা জরিমানার সামনে নোফেলের মতো ছোট ক্লাবও পড়ে গেল। আর্থিক অনটনের কথা বলছেন, কিন্তু কোথা থেকে দেবেন এত টাকা জরিমানা? এই প্রশ্ন করলে নোফেলের সাধারণ সম্পাদকের অসহায় উত্তর, ‘জানি না কোথা থেকে দেব। না দিতে পারলে যেকোনো শাস্তি মানতে হবে। হয়তো ভবিষ্যতে বিসিএলেও আর খেলা হবে না আমাদের।’

আরও পড়ুন

অনূর্ধ্ব-১৬ লিগ হচ্ছে কমলাপুর স্টেডিয়ামে। অনূর্ধ্ব–১৮ লিগের ভেন্যু মোহাম্মদপুর শারীরিক শিক্ষা কলেজ, উত্তরা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন মাঠ ও বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অনুশীলন মাঠ। আগামীকাল উদ্বোধনী দিনে কিংস অ্যারেনায় অনুশীলন মাঠ খেলবে আবাহনী বনাম ফর্টিস এফসি।

উল্লেখ্য, তরুণ ফুটবলার তুলে আনতে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন ক্লাবগুলোর যুব দল থাকা বাধ্যতামূলক করেছে বেশ আগেই। কিন্তু দুই একটি ব্যতিক্রম বাদে বাংলাদেশের বেশির ভাগ ক্লাবেরই যুব দল নেই। বাফুফের বয়সভিত্তিক লিগ (আগে টুর্নামেন্ট আকারে হতো) আয়োজন করলে ক্লাবগুলো তড়িঘড়ি একটা যুব দল গড়ে মাঠে নামে। কোনো কোনো ক্লাব শেষ সময়ে কয়েকজন খেলোয়াড় জড়ো করে মাঠে নেমে পড়ে। তা ছাড়া এই লিগগুলো অনিয়মিত। অনূর্ধ্ব-১৮ লিগ যেমন গত বছর হয়নি। ২০২২ সালের অক্টোবর সর্বশেষ হওয়া লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি।

আরও পড়ুন

অথচ এই শেখ জামাল ক্লাবও প্রথমবার এই টুর্নামেন্টে খেলেনি জরিমানা হবে জেনেও। এমন নয় যে তাদের আর্থিক সমস্যা ছিল। কিছু ক্লাবের সমস্যা হয়তো ছিল বা আছে, তবে দুই একটি বাদে অন্যরা এই বয়সভিত্তিক লিগ বা টুর্নামেন্ট নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। কোটি কোটি টাকায় মূল দল গড়লেও ৮-১০ লাখ খরচ করে হলেও বয়সভিত্তিক লিগে খেলাটা অনেক ক্লাবের কাছেই গুরুত্ব পায় না। এ নিয়ে বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনাও নেই। ফলে নিচের স্তর থেকে সেভাবে উঠে আসছে না মানসম্মত ফুটবলার।