ফুটবলে নীল কার্ড, লিভারপুল ও টটেনহাম কোচের ‘না’
ফুটবলে নীল কার্ডের ব্যবহার চায় এই খেলার আইন প্রণয়নকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি)। পরিকল্পনা অনুসারে, হলুদ এবং লাল কার্ডের মাঝামাঝি মাত্রার অপরাধে লাল কার্ড দেখানো হবে। এরই মধ্যে তৃণমূল ফুটবলে নীল কার্ডের পরীক্ষামূলক ব্যবহারে সফলতাও দাবি করেছে আইএফএবি।
তবে পরিকল্পনা পর্যায়ে থাকাবস্থায়ই নীল কার্ড নিয়ে আপত্তি বাড়ছে। ইউরোপীয় ফুটবল কর্তৃপক্ষ উয়েফার পর প্রিমিয়ার লিগের দুজন কোচ নীল কার্ড নিয়ে নেতিবাচক মত দিয়েছেন।
শুক্রবার বড় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় পরীক্ষামূলকভাবে নীল কার্ড চালুর সুপারিশ করতে চেয়েছিল আইএফএবি। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ইএসপিএনকে জানিয়েছে, এই সুপারিশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইএফএবি। আগামী ২ মার্চ আইএফবির বার্ষিক বৈঠকে (এজিএম) প্রস্তাবিত পরীক্ষামূলক সব পদ্ধতি এবং কিছু নিয়ম পাল্টানো নিয়ে আলোচনা হবে। সে আলোচনায় অনুমোদন পাওয়া বিষয়গুলো ১ জুন থেকে কার্যকর হবে।
খেলোয়াড়দের নীল কার্ড দেখানোর নিয়ম হিসেবে বলা হয়েছে, এই কার্ড দেখার শাস্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে ১০ মিনিটের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হবে। এই সাজার মেয়াদ পূর্ণ করে মাঠে ফেরার পর একই খেলোয়াড় যদি আবারও নীল কার্ড দেখেন, তবে তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়ে বাকি ম্যাচের জন্য বের করে দেওয়া হবে। কিংবা একটি হলুদ কার্ড ও একটি নীল কার্ডের যোগফলও হবে লাল কার্ড।
আইএফএবির নীল কার্ড চালুর সুপারিশ নিয়ে আগেই আংশিক আপত্তি জানিয়েছে ফিফা ও উয়েফা। ফিফার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শীর্ষ স্তরের ফুটবলে নীল কার্ড ব্যবহার নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো ভুল ও অগ্রিম। এমন কোনো পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করতে হলে সেটি নিচের দিকের স্তরে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।’ উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিন সিন-বিনসকে ‘ফুটবলের মৃত্যু’ বলেছেন।
শাস্তির সময়টুকু একটি আবদ্ধ বক্সে কাটানোকে রাগবি, আইস হকিসহ বিভিন্ন খেলায় ‘সিন-বিনস’ বলা হয়। ইংল্যান্ডের তৃণমূল পর্যায়ের ফুটবলে এই নিয়ম পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, নীল কার্ডের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন প্রিমিয়ার লিগের দুজন কোচ। গতকাল লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ এ নিয়ে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, (ফুটবলের) বর্তমান সবকিছু যতটা সম্ভব সরল রাখাই ভালো, সেটা রেফারির জন্যও। এটা কঠিন কাজ। তবে আমি মনে করি এর মধ্যে নীল কার্ড চালু করা হলে সেটা তাদের ব্যর্থতার পথকেই আরও প্রশস্ত করবে।’
জার্মান এ কোচ নীল কার্ডের ব্যবহারে জটিলতার উদ্ভব দেখছেন, ‘এমন আলোচনা উঠতে পারে যে এই নীল কার্ডের কি হলুদ হওয়া উচিত? যেটার জন্য ১০ মিনিট মাঠের বাইরে থাকতে হবে। অতীতে ঠিক একই কাজের জন্য লাল অথবা হলুদ কার্ড দেখানো হতো। এই পরিকল্পনাটা দারুণ কিছু মনে হয়নি। আসলে আমি মনে করতে পারছি না, শেষ কবে এসব লোকজনের মাথা থেকে দারুণ কোনো পরিকল্পনা এসেছে! যদি একটাও দিতে পারে, আমার বয়স এখন ৫৬ বছর, এর মধ্যে পারেনি।’
টটেনহাম কোচ আগ্নে পোস্তেকোগলুও নীল কার্ড চালুর পরিকল্পনাকে ভুল মনে করছেন। এমনিতে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে। টটেনহামের এই কোচ বলেছেন, ‘আমার কথায় লোকজন বিস্মিত হবে বলে মনে করি না। হঠাৎ করে এটা (নীল কার্ড) আনার কী কারণ, সেটাই বুঝতে পারছি না। খেলায় এখনো তেমন কোনো অসংগতি আমার চোখে পড়েনি। তবে ভিএআর খেলোয়াড়, কোচ কিংবা সমর্থক হিসেবে অভিজ্ঞতাটা পাল্টে দিয়েছে। এর বাইরে আমি মনে করি না, অন্য রঙের কোনো কার্ড এমন আহামরি কোনো পরিবর্তন আনবে।’
আর্সেনাল কোচ মিকেল আরতেতা অবশ্য পক্ষে-বিপক্ষে এখনই মন্তব্য করতে রাজি নন, ‘আমি জানি না এটার জন্য আমরা প্রস্তুত কি না। কে জানে (ভালো হতেও পারে)! আশা করি এই (শীর্ষ স্তর) পর্যায়ে অনুমোদন দেওয়ার আগে তা খুব ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া হবে।’