মেসিকে ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলতেই হবে, বললেন রিকেলমে
আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে তাঁরা সতীর্থ ছিলেন। ২০০৬ বিশ্বকাপে খেলেছেন একসঙ্গে। দুই বছর পর বেইজিং অলিম্পিকের ফুটবলে তাঁরা আর্জেন্টিনাকে সোনাও জিতিয়েছেন একসঙ্গে। আর ক্লাব ফুটবলে? খুব অল্প সময়ের জন্য তাঁরা সতীর্থ ছিলেন বার্সেলোনায়। পরে প্রতিপক্ষ হিসেবে একে অপরের মুখোমুখিও হয়েছেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আর্জেন্টাইন ফুটবলে ১০ নম্বর জার্সির যে ঐতিহ্য, সেই পথে ওই জার্সি তাঁদের মধ্যেই হাতবদল হয়েছে। বুঝতেই পারছেন, তাঁরা হলেন হুয়ান রোমান রিকেলমে ও লিওনেল মেসি।
রিকেলমে আর্জেন্টাইন ফুটবলের ‘অলস সৌন্দর্য’। ২০০৮ সালে তিনি জাতীয় দল ছাড়ার পর দেশের ১০ নম্বর জার্সি পরার ভার পেয়েছিলেন মেসি। তারপর ১৬ বছর হতে চলল সেই ১০ নম্বর জার্সি পরে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ ও একাধিকবার কোপা আমেরিকা জিতিয়েছেন মেসি। মাঠের বাইরে থেকে তা দেখেছেন রিকেলমে। কখনো কখনো প্রশংসায় ভাসিয়েও দিয়েছেন উত্তরসূরীকে।
ফুটবল ছাড়ার পর ধীরে ধীরে সেই রিকেলমে এখন আর্জেন্টিনার ক্লাব বোকা জুনিয়র্সের সহসভাপতি। মেসি খেলে চলছেন এখনো। ৩৭ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি অবশ্য জানেন, শিগগিরই হয়তো বুট তুলে রাখতে হবে। কিন্তু সেটা কবে, তা শুধু মেসিই জানেন। তবে রিকেলমের বিশ্বাস, মেসি দ্রুতই অবসর নেবেন না। অন্তত ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন।
চোটের কারণে মেসি আপাতত মাঠের বাইরে। গত জুলাইয়ে শেষ হওয়া কোপা আমেরিকায় পাওয়া চোটের পর মেসি আর মাঠে ফিরতে পারেননি। তবে চোট সারিয়ে পুরোপুরি ফিট হয়ে ওঠার পথেই আছেন এবং অনুশীলনও শুরু করেছেন।
সংবাদমাধ্যম এর আগে জানিয়েছিল, আগামী রোববার বাংলাদেশ সময় ভোরে মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) ফিলাডেলফিয়া ইউনিয়নের বিপক্ষে ইন্টার মায়ামির স্কোয়াডে ফিরতে পারেন মেসি। কিন্তু নতুন খবর হলো, গলায় সংক্রমণের কারণে মেসির মাঠে ফেরা পিছিয়ে যাওয়া সম্ভাবনাই বেশি। সে যা হোক, মেসির ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন বোকা কিংবদন্তি রিকেলমে।
আর্জেন্টিনার সাবেক এই মিডফিল্ডারের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস, ‘মেসি সব সময় নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে। কেউ জানে না সে কী করতে পারে। আগামী বিশ্বকাপে তার খেলা নিয়ে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই। তাকে খেলতেই হবে। সে জন্য আমরা সর্বস্ব দিয়েই চেষ্টা করব।’
২০২৬ বিশ্বকাপ শুরু হতে এখনো প্রায় দুই বছর সময় বাকি। ৪৬ বছর বয়সী রিকেলমে জানিয়েছেন, সময় হলেই তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে মেসিকে ফোন দেবেন, ‘তার সঙ্গে কথা হয়। তাকে খুব বেশি জ্বালাই না, কিন্তু কথা হয়। এ জন্যই আমি মনে করি সে বিশ্বকাপে খেলবে। সে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পছন্দ করে এবং জিততে চায়।’
মেসির প্রতিভা নিয়ে কথা উঠলে ম্যারাডোনার সঙ্গে তাঁর তুলনা উঠে আসবেই। রিকেলমে অবশ্য সে পথে হাঁটলেন না। তুলনার চেয়ে আর্জেন্টাইন ফুটবলে দুই কিংবদন্তির যে অবদান, সে সবই বড় করে দেখছেন রিকেলমে, ‘তারা দুজন জিনিয়াস। স্বাভাবিক নয়। তারা যা করেছে, সেটা কেউ পারে না। আমি স্বাভাবিক খেলাটা খেলেছি, কিন্তু তারা খেলেনি। আমরা আর্জেন্টাইনরা ভাগ্যবান যে এটা বলতে পারি, তারা আমাদের।’
মেসি ও রিকেলমের জন্ম একই দিনে (২৪ জুন)। শুধু তাই নয়, আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনায় দুজনই ১০ নম্বর জার্সি পরেছেন এবং দুজনই ম্যারাডোনাকে ভালোবাসেন। গত বছর জুনে রিকেলমেকে শ্রদ্ধা জানানোর ম্যাচেও খেলেছেন মেসি।
রিকেলমে অবশ্য মেসির প্রশংসায় ম্যারাডোনাকেও টানলেন, ‘আমি খুব সৌভাগ্যবান যে সর্বকালের সেরার সঙ্গে খেলতে পেরেছি। সৌভাগ্যবান এই কারণে যে ছোটবেলায় তিনি ছিলেন আমার দেখা সেরা। সময় গড়িয়েছে, আমিও বড় হয়েছি এবং সৌভাগ্যবান যে অবিশ্বাস্য রকম গ্রেট এমন কারও সঙ্গে খেলতে পেরেছি। আমি জানি না সে (মেসি) ম্যারাডোনার চেয়ে এগিয়ে না পিছিয়ে। কিন্তু আমার জীবনে দেখা সেরা দুজন (ফুটবলার) তারাই।’