আলেক্সিস ম্যাক ‘রকেট লঞ্চার জেরার্ড’

দুরপাল্লার শটে গোলের পর সতীর্থদের সঙ্গে ম্যাক অ্যালিস্টারের উদ্‌যাপনএএফপি

লিভারপুলের সমর্থক হলে গতকাল রাতের সে মুহূর্তটিকে আপনি ‘স্টিভেন জেরার্ড মোমেন্ট’ বলতেই পারেন। লিভারপুল সমর্থক না হলেও সমস্যা নেই। জেরার্ড তো শুধু লিভারপুলের নয়, পৃথিবীর তাবত ফুটবলপ্রেমীরও।

লিভারপুল ও জেরার্ড; এ দুটি শব্দ শুনলে অনেকের চোখে একটি দৃশ্য ভেসে উঠতে পারে—বক্সের ভেতর জটলা। হঠাৎ একটি পাস কিংবা কারও গায়ে লেগে বল চলে এল বক্সের বাইরে। সবাই একটু অপ্রস্তুত, জেরার্ডের জন্য সেটাই আবার সবচেয়ে মোক্ষম সময়। কারণ, বক্সের বাইরে ওত পেতে দাঁড়িয়ে তিনি এমন কিছুর অপেক্ষাতেই ছিলেন। সুযোগটা আসতেই বুলফাইটিংয়ের ষাঁড়ের মতো দুই পা দৌড়ে নিলেন গোলার মতো শট। বলটা রকেট লঞ্চারের গতিতে প্রতিপক্ষের জালে!

আরও পড়ুন

আপনি নব্বইয়ের প্রজন্ম এবং লিভারপুলের সমর্থক হলে এই স্মৃতি ভুলে যাওয়ার নয়। আর ব্যাপারটা ‘ফ্লুক’ও নয়, কারণ জেরার্ডের এমন গোল কম নেই। গতকাল রাতে লিভারপুল-শেফিল্ড ইউনাইটেড ম্যাচে ফিরে এসেছিল সেই ‘জেরার্ড মোমেন্ট’—আর সেই মুহূর্তের জন্মদাতাও জেরার্ডের মতোই এক মিডফিল্ডার। এবারের মৌসুমে লিভারপুলের ‘তালিসমান’—আলেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার ‘রকেট লঞ্চার’!

শেফিল্ডের বিপক্ষে লিভারপুলের ৩-১ গোলে জয়ের ম্যাচটি দেখে থাকলে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডারের নামের সঙ্গে ওটুকু জুড়ে দেওয়ায় আপত্তি ওঠার কথা নয়। ম্যাচে তখন ৭৬ মিনিট। দুই দল ১-১ গোল সমতায়। বক্সের ভেতর শেফিল্ডের এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে একদম ‘ডি’-এর মাঝে বল পেয়ে যান ম্যাক অ্যালিস্টার। প্রায় ২০ গজ দূর থেকে ডান পায়ে নেওয়া তাঁর শটটি দেখে তাকিয়ে থাকতে হয়। রকেট লঞ্চার যে গতিতে যায়, বলটির গতি তার চেয়ে কোনো অংশে সম্ভবত কম ছিল না! পেছনে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা লিভারপুল সেন্টারব্যাক ইব্রাহিম কোনাতের গোলটি দেখে তো মাথায় হাত।

কারও কারও ২০০৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপ পর্বে লিভারপুল-অলিম্পিয়াকোস ম্যাচের ৮৬ মিনিটে বক্সের একটু বাইরে থেকে জেরার্ডের সেই শট মনে পড়তে পারে। দুটো শটই জাল ছুঁয়েছে ডান দিকের পোস্ট দিয়ে। দুটো ম্যাচেরই স্কোরলাইন ৩-১। আর শটটির গতি? ইউটিউবে এখনই দেখে নিতে পারেন।

আরও পড়ুন

এই ম্যাচে জেরার্ডের একটি স্মৃতিও ফিরিয়েছেন ম্যাক অ্যালিস্টার। ২০১৩ সালে ইংল্যান্ড কিংবদন্তির পর লিভারপুলের প্রথম মিডফিল্ডার হিসেবে টানা ৬ ম্যাচে গোল কিংবা ‘অ্যাসিস্ট’ করলেন ম্যাক অ্যালিস্টার।

গোলটি করে লিভারপুল সমর্থকদের স্টিভেন জেরার্ডকে মনে করিয়ে দিয়েছেন ম্যাক অ্যালিস্টার
এএফপি

ম্যাচ শেষে আর্জেন্টাইন তারকাকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিয়েছেন লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ, ‘পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিতে ম্যাকের বিস্ময়কর গোলটি দরকার ছিল আমাদের। সে আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অসাধারণ খেলোয়াড় এবং মানুষও। লিভারপুল তাকে পাওয়ায় আমি সত্যিই খুব খুশি।’

ম্যাচের ১৭ মিনিটে শেফিল্ড গোলকিপার ইভো গ্রাবিচের ভুলে গোল ‘উপহার’ পান লিভারপুল ফরোয়ার্ড দারউইন নুনেজ। বিরতির পর ৫৮ মিনিটে কনর ব্রাডলির আত্মঘাতী গোলে সমতায় ফিরতে বাধ্য হয় লিভারপুল। এরপর তো জেরার্ডের সেই গোল—দুঃখিত ম্যাক অ্যালিস্টারের!

৯০ মিনিটে শেষ গোলটি কোডি গাকপোর। এই জয়ে ৩০ ম্যাচে ৭০ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে ফিরল লিভারপুল। সমান ম্যাচে ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় আর্সেনাল। ম্যানচেস্টার সিটি ৩০ ম্যাচে ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়। তিনটি দলই আর ৮টি করে ম্যাচ খেলবে।

ব্রাইটন থেকে সাড়ে তিন কোটি পাউন্ডে গত বছর জুনে ম্যাক অ্যালিস্টারকে সই করায় লিভারপুল। প্রিমিয়ার লিগে এ মৌসুমে আর্জেন্টাইন তারকা এরই মধ্যে লিভারপুলের সেরা খেলোয়াড়। গত রাতের ম্যাচেই কিন্তু ফ্রি–কিক থেকে বল পোস্টে না লাগালে আরও একটি গোল পেতে পারতেন।

তবে এরই মধ্যে লিগে ২৫ ম্যাচে ৫টি গোল বানানোর পাশাপাশি নিজে আরও ৪ গোল করেছেন। এর মধ্যে দুটি গোল জেরার্ডের মতো—বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া দূরপাল্লার শটে। লিগে লিভারপুলের হয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ট্যাকলও ম্যাক অ্যালিস্টারের। প্রতিপক্ষের মাঠে সর্বোচ্চ পাস এবং সবচেয়ে বেশি ফাউলেরও শিকার তিনিই হয়েছেন।

মার্চে প্রিমিয়ার লিগে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া ম্যাক অ্যালিস্টারের গোলটি এবারের মৌসুমে সেরা গোলগুলোর কাতারেও থাকবে। আর গোলটি আপনি যতবার দেখবেন, জেরার্ডকে মনে পড়তেই পারে!

আরও পড়ুন