ফার্গুসন–পরবর্তী ইউনাইটেড কোচদের শুরুটা কেমন ছিল
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডাগআউটে অবিসংবাদিত নাম হয়েই ছিলেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। টানা ২৬ মৌসুম ইউনাইটেডের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ইংলিশ ফুটবল–ইতিহাসের অন্যতম সেরা ও সফলতম কোচ হিসেবে নাম কামিয়েছেন। কিন্তু সব ভালো জিনিসেরই একটা শেষ আছে। ২০১২-১৩ মৌসুম শেষে এল সেই ক্ষণ। ফার্গুসন সরে দাঁড়ালেন কোচের পদ থেকে। এরপর গত ৯ মৌসুম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৮ জন কোচের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়েছে। কিন্তু ফার্গুসনের ধারকাছ দিয়ে যাওয়া দূরে থাক, ইউনাইটেডকে বড় কোনো সাফল্য উপহার দিতে পারেননি কেউই। কিছুদিন আগে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে ডাচ্ কোচ এরিক টেন হাগের হাতে। কিন্তু এবারের প্রিমিয়ার লিগে প্রথম ম্যাচেই ব্রাইটনের কাছে ২-০ গোলে হেরে দুঃস্বপ্নের এক শুরু দেখেছেন তিনি। ফার্গুসন-পরবর্তী সময়ে ইউনাইটেড যে কোচদের অধীন খেলেছে, তাঁদের শুরুটা কেমন ছিল? একঝলকে দেখে নেওয়া যাক...
ডেভিড ময়েস
ফার্গুসন একেবারে নিজে পছন্দ করে ডেভিড ময়েসকে তাঁর চেয়ারে বসিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ১০ মাসের বেশি সময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি; যদিও এসেছিলেন ছয় বছরের চুক্তিতে। তিনি থাকতে থাকতেই ইউনাইটেড প্রিমিয়ার লিগের সপ্তম স্থানে চলে গিয়েছিল, বিপর্যস্ত ছিল বিব্রতকর কয়েকটি হারে। যদিও তাঁর শুরুটা যথেষ্ট ভালো ছিল। উইগানকে হারিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড জিতেছিল কমিউনিটি শিল্ড। ২০১৪ সালের এপ্রিলে বরখাস্ত হন ময়েস।
রায়ান গিগস
ময়েসকে বরখাস্ত করার পর অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব দেওয়া হয় ইউনাইটেডের কিংবদন্তি রায়ান গিগসকে। তিনি কোচ কাম খেলোয়াড় হিসেবেই তখন দায়িত্ব পালন করছিলেন। মৌসুমের শেষ চারটি ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ হিসেবে ছিলেন গিগস। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ম্যাচে নরউইচ সিটির বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছিল ইউনাইটেড।
লুইস ফন গাল
২০১৪ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস তাঁর অধীনেই সেমিফাইনালে খেলেছিল। যদিও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে ডাচ্দের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল। শেষ অবধি তৃতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। বিশ্বকাপের পরপরই লুইস ফন গাল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ হিসেবে যোগ দেন। অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইউনাইটেড তাঁর অধীন প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচে হেরে যায়। সোয়ানসি সিটির বিপক্ষে সে ম্যাচে ১৯৭২ সালের পর প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচে ইউনাইটেড হেরে যায় নিজেদের মাঠে।
জোসে মরিনিও
২০১৬ সালে লুইস ফন গালের স্থলাভিষিক্ত হন জোসে মরিনিও। আলোচিত এই কোচের শুরুটা মন্দ ছিল না। কমিউনিটি শিল্ড ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড জেতে লেস্টার সিটির বিপক্ষে। তাঁর অধীন লিগ কাপ ও ইউরোপা লিগ জিতেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
ওলে গুনার সুলশার
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন সুলশার। তিনি মরিনিওর অধীন গোল–খরায় ভুগতে থাকা ইউনাইটেডকে কিছুটা আত্মবিশ্বাসী করে তোলার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। প্রথম ম্যাচেই তাঁর অধীন আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে কার্ডিফকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
মাইকেল ক্যারিক
ওলে গুনার সুলশারকে বরখাস্ত করা হয় ২০২১ সালের নভেম্বরে। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব দেওয়া হয় সাবেক ইউনাইটেড তারকা মাইকেল ক্যারিককে। তাঁর প্রথম ম্যাচ ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ। ম্যাচটিতে বলের দখল বেশির ভাগ সময় ভিয়ারিয়ালের পায়ে থাকলেও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও জেডন সানচোর গোলে ইউনাইটেড ভিয়ারিয়ালকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল।
রালফ রাংনিক
ক্যারিক তিনটি ম্যাচে কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এরপরই দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন জার্মান কোচ রালফ রাংনিক। তাঁকেও অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব দেওয়া হয় ২০২১-২২ মৌসুমের শেষ পর্যন্ত।
ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচের আগে রাংনিক শুধু একটি অনুশীলন সেশন পেয়েছিলেন। সে ম্যাচে ফ্রেডের গোলে ক্রিস্টাল প্যালেসকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
এরিক টেন হাগ
গত এপ্রিলে এরিক টেন হাগের নিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকেই আশায় বুক বেঁধেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-ভক্তরা; এবার যদি কিছু একটা হয়। ৫২ বছর বয়সী এই ডাচ্ কোচের সাফল্যের রেকর্ড দুর্দান্ত। আয়াক্সের কোচ হিসেবে তিনি তিনটি শিরোপা জিতেছেন। তাঁর অধীন ব্যাংককে লিভারপুলকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে ভক্তদের আশাবাদী করেছিলেন টেন হাগ; যদিও সেটি ছিল প্রদর্শনী ম্যাচ। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচেই ব্রাইটনকে অনেক বড় বাধাই মনে হয়েছে ইউনাইটেডের সামনে। ম্যাচটি তারা হেরেছে ২-০ গোলে। টেন হাগের শুরুটাও হয়েছে তাঁর স্বদেশি লুইস ফন গালের মতোই।