সৌদি আরবে যাওয়ার পর রোনালদোর ওপর এখন অন্য চাপ
সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা আছে। রাজনৈতিক অধিকার হরণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নারীর অধিকার-সমালোচনা মূলত এই তিনটি বিষয়েই। সেই সঙ্গে আছে নৃশংস কায়দায় অপরাধীদের সাজা দেওয়ার বিষয়টি।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে খেলতে যাওয়ার পর এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে নিজের তারকাখ্যাতিকে ব্যবহার করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষক ডানা আহমেদ।
৩৭ বছর বয়সী রোনালদো ইউরোপের অধ্যায় ‘শেষ করে’ গত পরশু সৌদি আরবের অন্যতম শীর্ষ ক্লাব আল নাসরে যোগ দিয়েছেন।
এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রোনালদোকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। ২০২৫ সাল পর্যন্ত আল নাসরের সঙ্গে চুক্তি রোনালদোর। এই সময়ে তিনি প্রতিবছর ২১ কোটি মার্কিন ডলার আয় করবেন। চুক্তির এই অঙ্ক সবার মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতোই। সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দিয়ে রোনালদোই এখন ফুটবল দুনিয়া তো বটেই, খেলার দুনিয়াতেই সবচেয়ে আয় করা ক্রীড়াবিদ। রোনালদো এক বছরে যে আয় করবেন, সেটি বিশ্বের অনেক শীর্ষ ফুটবলারের কয়েক বছরের আয়।
আল নাসরের পরিচিতি অনুষ্ঠানে সৌদি আরব নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথাই বলেছেন রোনালদো। তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আশা করে, শুধু সুন্দর কথা না বলে রোনালদো সৌদি আরবের মূল চিত্রটাও তুলে ধরবেন। তিনি সৌদি আরব সরকারকে তাঁদের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে পরামর্শ দেবেন। রোনালদো অবশ্যই বিশ্বব্যাপী তাঁর তারকাখ্যাতি, তাঁর অর্জনকে সৌদি আরবের কৃতকর্মকে বৈধতা ও আড়াল করার কাজে ব্যবহৃত হতে দেবেন না।
ডানা আহমেদ বলেন, সৌদি আরব নিয়মিত বিভিন্ন অপরাধীর বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে নৃশংসতার সঙ্গে। কেবল ২০২২ সালে ৮১ জনকে নৃশংস কায়দায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যাঁদের অনেকেরই বিচার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন আছে। তিনি দেশটিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিরোধী মত দমন ও নারীর অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার চর্চার দুরবস্থার কথাও তুলে ধরেন।
সৌদি আরব সম্প্রতি নিজেদের ‘ইমেজ’ বৃদ্ধিতে খেলাধুলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেছে। সেই সঙ্গে দেশটির পর্যটনশিল্পের সম্প্রসারণেও কিছু সংস্কারধর্মী পদক্ষেপ নিয়েছে। রোনালদোকে আল নাসরে সই করানো, সেই কার্যক্রমেরই অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি সৌদি আরব বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্ট আয়োজন করেছে। এর মধ্যে আছে হাইপ্রোফাইল গলফ টুর্নামেন্ট, বক্সিং ও ফর্মুলা ওয়ান গ্রাঁ প্রিঁ।
খবর বেরিয়েছে, রোনালদো ছাড়াও ইউরোপের বেশ কয়েকজন তারকার দিকে হাত বাড়িয়েছে সৌদি ফুটবল ক্লাবগুলো। ২০৩০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলও তারা আয়োজন করতে চায়।
সে লক্ষ্যে এরই মধ্যে আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসিকে শুভেচ্ছাদূত করা হয়েছে। অধিকারকর্মীরা এসব বিষয়কে ‘স্পোর্টসওয়াশ’ বলে আসছেন বেশ কিছুদিন ধরে। তাঁদের মতে, খেলা দিয়ে নিজেদের দেশের আসল চেহারাটা বাইরের বিশ্বের নজর থেকে আড়াল করে রাখতে চাইছে সৌদি আরব।