‘মিসরীয় রাজা’ ফুরিয়ে যাননি
কী হয়েছে মোহাম্মদ সালাহর?
সপ্তাহ তিনেক আগে পর্যন্ত নিয়মিত এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে বেড়িয়েছেন ফুটবল–বিশ্লেষকেরা। এমন নয় যে লিভারপুল খুব ভালো খেলছিল, কিন্তু সালাহ ছিলেন নিষ্প্রভ। ‘অলরেড’ আক্রমণভাগের অন্যদের তুলনায় বেশিই গোল করেছিলেন। বরং দল হিসেবে লিভারপুলের অবস্থাই ছিল জেরবার। প্রিমিয়ার লিগ পয়েন্ট তালিকায় ঘোরাঘুরি চলছিল ১০ নম্বরের আশপাশে। দুটি ঘরোয়া টুর্নামেন্টের (লিগ কাপ ও এফএ কাপ) চতুর্থ রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে।
লিভারপুলের এমন দুঃসময়ে সাময়িক বাজে সময় কেটেছে সালাহরও। টানা পাঁচ ম্যাচ কোনো গোল পাননি। সমর্থক থেকে শুরু করে বিশ্লেষক, সংবাদমাধ্যম পর্যন্ত প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল—তিনবার মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জেতা সালাহ কি ফুরিয়ে গেছেন?
রোববার রাতে অ্যানফিল্ডে পাওয়া গেছে মোক্ষম জবাব। প্রবল প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ওপর রীতিমতো ঝড় বইয়ে দিয়েছে লিভারপুল। ৭-০ ব্যবধানের এই বড় জয়ে ৪টি গোলে অবদান সালাহর। দুটি গোল নিজে করার পাশাপাশি কোডি গাকপো আর ফিরমিনোর দুই গোলে করেছেন সহায়তা।
দুই গোলের প্রথমটিতে হয়েছেন প্রিমিয়ার লিগ যুগ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক। আর দ্বিতীয় গোলটি করে গড়েছেন লিভারপুলের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড।
লিভারপুল সমর্থকদের কাছে ‘গড’ হিসেবে পরিচিত রবি ফাউলার ক্লাবের হয়ে ২৬৬ ম্যাচে করেছিলেন ১২৮ গোল। সালাহ তাঁকে পেরিয়ে গেছেন ২০৫ ম্যাচেই। ‘মিসরীয় রাজা’ই এখন প্রিমিয়ার লিগে লিভাপুলের গোলের রাজা।
এই রেকর্ডটিকে তিনি পাখির চোখ করে রেখেছিলেন অনেক আগেই। ইউনাইটেড ম্যাচ শেষে স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া তাৎক্ষণিক সাক্ষাৎকারে জানান সে কথাই, ‘মিথ্যে বলব না, এই রেকর্ডটা খুবই বিশেষ। যখন এখানে এসেছি, তখন থেকেই রেকর্ডটা আমার মাথায় ছিল। প্রথম বছরের পরই (লিগে ৩২ গোল করে গোল্ডেন বুট) রেকর্ডটার দিকে ছুটছিলাম। আজ যখন রেকর্ডটা ভাঙলাম, তাও ইউনাইটেডের বিপক্ষে আর বড় একটা স্কোরলাইনে—পুরো ব্যাপারটাই কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে।’
সালাহর মতো তাঁর রেকর্ডকে ‘স্পেশাল’ মনে হয়েছে লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপেরও। বাজে সময়ে পাশে দাঁড়ানো এই জার্মান কোচ আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন শিষ্যের কীর্তির কথা, ‘সালাহ আজ যা করেছে, তা সত্যি সত্যিই বিশেষ কিছু। আমাদের এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে তাকে আমরা প্রচুর গোল করতে দেখেছি। এই অর্জন গর্বিত হওয়ার মতো।
গোল করার পাশাপাশি গোল করানোতেও অবদান রেখে যাচ্ছেন সালাহ। ৩০ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড চলতি মৌসুমে গোল করানোয় ইউরোপীয় ফুটবলের শীর্ষ পাঁচজনের একজন।
২০২২-২৩ মৌসুমে গোল করা এবং করানোয় সবার ওপরে পিএসজির আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসি (৩০ গোল ও ২০ অ্যাসিস্ট)। মেসির মতো সমান ৩৯ ম্যাচ খেলে সালাহর অবদান ৩৬ গোলে (২৪ গোল, ১২ অ্যাসিস্ট)।