লিওনেল মেসি মানেই মনভরানো ফুটবল; সেটা ভক্ত-দর্শকদের চোখে। আর ব্যবসায়ীদের চোখে মেসি মানে বাণিজ্য, মেসি মানে অর্থের হাতছানি। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করতে চান কমবেশি সবাই। তাই বলে প্রতারণা!
এই মুহূর্তে চীনের বেইজিংয়ে চলছে এমনই এক প্রতারণা। চীনের পুলিশ অবশ্য এ ব্যাপারে সতর্ক। তারা জনসাধারণকে জানিয়েছে, মেসির নাম ব্যবহার করে প্রতারণা চলছে, কেউ যেন এসব ফাঁদে পা না দেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলতে মেসি এখন চীনে। ১৫ জুন বেইজিংয়ের ওয়ার্কার্স স্টেডিয়ামে এই প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার মেসি বেইজিংয়ে এসে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর খ্যাতি ব্যবহার করে অসাধু একটি চক্র টাকাপয়সা কামিয়ে নিতে তৎপর হয়েছে। সেই চক্র বিজ্ঞাপন দিয়েছে, ৪২ হাজার মার্কিন ডলারের (চীনের মুদ্রায় তিন লাখ ইউয়ান) বিনিময়ে মেসি-ভক্তরা তাঁদের স্বপ্নের নায়কের সঙ্গে বসে পানাহার করতে পারবেন। এই বিজ্ঞাপন চীনজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
চীনা পুলিশ এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা বলেছে, এ ধরনের বিজ্ঞাপন পুরোপুরি প্রতারণা। মেসি-উন্মাদনাকে ব্যবহার করে অসাধু এক চক্রের টাকাপয়সা হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ।
সাধারণত নিয়ম-শৃঙ্খলা বিষয়ে বেশ কঠোর হিসেবে পরিচিত চীনের পুলিশ; তবে মেসির সঙ্গে প্রতারণা বিষয়ে উইবোতে (চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) রসিকতার সুরে পোস্ট দিয়েছে বাহিনীটি, ‘আপনি যদি তিন লাখ ইউয়ান প্রতারণার শিকার হয়ে হারান, তাহলে আমরাই আপনার সম্মানে পান করব।’
৪২ হাজার ডলারের বিনিময়ে মেসির সঙ্গে পানাহারের প্রস্তাবের পাশাপাশি আরও কিছু বিজ্ঞাপন এ মুহূর্তে বেইজিংয়ে ব্যাপক আলোচিত। একটিতে আছে বাড়তি পাঁচ হাজার ইউয়ানের বিনিময়ে চীন-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের ‘অভ্যন্তরীণ ভিআইপি টিকিট’। এতে আছে বেইজিংয়ের ওয়ার্কার্স স্টেডিয়ামের সামনের সারিতে বসে ম্যাচ দেখার সুযোগ। একই সঙ্গে আরও আট হাজার ইউয়ান খরচ করলে মেসির সই করা জার্সি পাওয়া ও তাঁর সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ। পুলিশ বলছে, এটাও অসাধু চক্রের প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন।
আরেকটি অননুমোদিত বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে, কেউ যদি ৫০ মিলিয়ন ইউয়ান খরচ করেন, তাহলে মেসি সেই ব্যক্তির নিজস্ব কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপনে সশরীর হাজির হবেন।
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিল আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচে মেসিরা অস্ট্রেলিয়াকে হারান ২-১ গোলে। কয়েক দিন আগে সেই ম্যাচের কথা স্মরণ করিয়ে বেইজিংয়ের ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার কথা বলেছেন অস্ট্রেলিয়া দলের কোচ।
ম্যাচটি দেখতে দর্শকদের টিকিটের চাহিদা এখন তুঙ্গে। প্রথম ধাপের টিকিট ছাড়ার মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরের ধাপেও টিকিটের তীব্র চাহিদা লক্ষ করা যাচ্ছে। এ ম্যাচে টিকিটের সর্বনিম্ন মূল্য ৫৮০ ইউয়ান। সর্বোচ্চ মূল্য ৪ হাজার ৮০০ ইউয়ান।
টিকিট কিনে সেটি আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এ ম্যাচের টিকিট ১৮ হাজার ইউয়ানেও বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও টিকিট কেনা ও স্টেডিয়ামে প্রবেশের জন্য ফটো আইডি বাধ্যতামূলক করেছে কর্তৃপক্ষ।
শনিবার বেইজিংয়ে পৌঁছানোর পর থেকেই আর্জেন্টিনার টিম হোটেলের বাইরে বিপুলসংখ্যক ফুটবলপ্রেমী ভিড় করেন। এক মেসি-ভক্ত বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তিনি ম্যাচের টিকিট কিনতে না পেরে মেসিদের হোটেলে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছেন, যাতে তিনি তাঁর প্রিয় খেলোয়াড় মেসিকে সামনাসামনি দেখতে পারেন।
গত বুধবার রাতে মেসি জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের দল ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন। ১৫ জুন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের পর আর্জেন্টিনা এশিয়া সফরে দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলবে ১৯ জুন ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে জাকার্তায়।