পেপ গার্দিওলা তাহলে ম্যান সিটি ছাড়ছেনই
কিছুটা আভাস পেপ গার্দিওলা নিজেই দিয়েছিলেন কয়েক দিন আগে।
১৯ মে ওয়েস্ট হামকে হারিয়ে ইংল্যান্ডের প্রথম ক্লাব হিসেবে ম্যানচেস্টার সিটি টানা চতুর্থ লিগ শিরোপা জয় করার পর গার্দিওলা বলেছিলেন, ‘আমি (সিটিতে) থেকে যাওয়া নয়, প্রস্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
গুঞ্জনের ডালপালা আসলে সেখান থেকেই মেলতে শুরু করে। সিটির সঙ্গে গার্দিওলার বর্তমান চুক্তি আগামী বছর জুন পর্যন্ত। মানে আর একটা মৌসুম। চুক্তি নবায়ন না করলে সেখানেই শেষ হবে গার্দিওলার সিটি-অধ্যায়। ব্রিটিশ দৈনিক মেইল এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, গার্দিওলা চুক্তি নবায়নে খুব একটা আগ্রহী নন।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, গার্দিওলাকে এর মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সময় দেবে সিটি। ক্লাবটির চাওয়া—তিনি থেকে যান। তবে সিটির উচ্চমহলের ভয়, আগামী মৌসুম শেষেই চলে যেতে পারেন ৫৩ বছর বয়সী গার্দিওলা।
তবে থাকা কিংবা না থাকার ব্যাপারে গার্দিওলা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি। ইংলিশ ফুটবল ও সিটির ভেতরকার একাধিক সূত্র গার্দিওলার ইতিহাদ ছাড়ার সম্ভাবনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলছে বলে জানিয়েছে মেইল। আবুধাবিভিত্তিক সিটি গ্রুপের মালিকাধীন ম্যান সিটির জন্য এটা বড় এক দুঃসংবাদ, তাতে সন্দেহ নেই। বিশাল এক ধাক্কাই আসলে।
সিটির জন্য যেটা এত বড় দুঃসংবাদ, ইংল্যান্ডের বাকি সব ক্লাবের জন্য সেটাই দারুণ এক সুসংবাদ সম্ভবত। ২০১৬ সালে ইতিহাদকে ঠিকানা বানানোর পর গত ৮ বছরে গার্দিওলা তো আসলে প্রিমিয়ার লিগকে এক ঘোড়ার দৌড়ই বানিয়ে ছেড়েছেন। সেই ঘোড়ার নাম ম্যানচেস্টার সিটি। সর্বশেষ ৭ বছরে ৬টা লিগ, গত মৌসুমে ইংল্যান্ডের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় দল হিসেবে ইউরোপিয়ান ট্রেবল জয়, এরপর এবার ইংল্যান্ডের প্রথম ক্লাব হিসেবে টানা চতুর্থ লিগ জয়—সব মিলিয়ে ১৫টি ট্রফি, গার্দিওলার অধীন সিটির জেতার বাকি নেই কিছুই। তাঁর ব্যক্তিগত একটা চ্যালেঞ্জ ছিল, বার্সেলোনার বাইরে অন্য কোনো দলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে দেখানো, সেটাও জেতা হয়ে গেছে।
প্রিমিয়ার লিগে মৌসুম মাত্র শেষ হয়েছে, কিন্তু এখনই বলা হচ্ছে, আগামী মৌসুমেও শিরোপার দৌড়ে সবচেয়ে ফেবারিট সিটি। অন্য ক্লাবগুলো যেন এখন গার্দিওলা সিটি ছেড়ে গেলেই বাঁচে। সেই গার্দিওলা যদি সিটির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করেন, প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবগুলোর জন্য এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে!
মেইল দাবি করছে, যদি শেষ পর্যন্ত সিটি গার্দিওলাকে ইতিহাদে থাকার জন্য রাজি করাতে ব্যর্থ হতে হয়, তাহলে তাঁর উত্তরসূরি কে হতে পারে, সেটাও ভাবা শুরু করেছে। সেই ভাবনায় আছেন সিটি গ্রুপেরই মালিকাধীন স্প্যানিশ ক্লাব জিরোনার কোচ মাইকেল সানচেজ। এই মৌসুমে লা লিগায় চমক দেখিয়ে জিরোনা তৃতীয় হয়েছে মাইকেলের অধীন।
সিটি গ্রুপের বিনিয়োগে আগামী দিনে জিরোনা হয়ে উঠতে পারে লা লিগার বড় শক্তি, যেমনটা ম্যান সিটি হয়েছে ইংল্যান্ডে। তবে গার্দিওলা চলে গেলে মাইকেল সম্ভবত জিরোনা নয়, ইতিহাদে এসেই বড় কিছু করার চ্যালেঞ্জ পেতে পারেন।
এ ছাড়া আলোচনায় আছে ইউলিয়ান নাগেলসমানের নামও। জার্মানির সঙ্গে তাঁর চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে ২০২৬ সালে। জাবি আলোনসোও বাদ নেই। বায়ার লেভারকুসেনে অন্তত আরও এক মৌসুম থাকবেন আলোনসো। তবে ব্রাইটনের কোচ রবার্তো দে জারবিকে গার্দিওলা ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন। ক্লাবের ইতিহাসে সেরা কোচের ব্যক্তিগত পছন্দকে সিটি পাত্তা না দিয়ে পারবে?
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন সিটি ছাড়বেন গার্দিওলা? সিটির চেয়ারম্যান খালদুন আল মুবারকের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক। দুজনের পরিবার একসঙ্গে ছুটি কাটায়। গার্দিওলাকে সিটিতে শতভাগ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন মুবারক, আর পেট্রোডলারের অবাধ প্রবাহ তো আছেই। এ রকম সুযোগ-সুবিধা অন্য কোথাও পাওয়া মুশকিল গার্দিওলার জন্য।
তবে কি ইয়ুর্গেন ক্লপের মতো ফুটবল থেকে সাময়িক বিরতিতে যেতে চান গার্দিওলা? সে রকম কোনো আভাস দেননি। তবে অন্য রকম চ্যালেঞ্জ নিতে চান, সে কথা নিজেই একবার বলেছিলেন। কী সেটা?
গত ফেব্রুয়ারিতে ইএসপিএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা, ইউরোতে কোচিং করাতে কেমন লাগে, সেই অভিজ্ঞতাটা আমি নিতে চাই। জানি না সেটা ৫, ১০ কিংবা ১৫ বছরের মধ্যে হবে কি না, তবে আমি কোচ হিসেবে বিশ্বকাপে থাকতে চাই।’
হয়তো সেটাই কারণ। আগামী বছর গার্দিওলা যদি সিটি ছাড়েন, এর পরের বছরই একটা বিশ্বকাপ পাবেন। ২০২৬ বিশ্বকাপে কি তাহলে গার্দিওলাকে কোনো দলের কোচ হিসেবে দেখা যাবে?