২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ঘুরে দাঁড়ানো কাকে বলে দেখিয়ে দিল শেফিল্ড

অবিশ্বাস্য জয়ের পর শেফিল্ডের খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপনটুইটার

১৮৬৭ সালে দ্য ওয়েনসডে ক্রিকেট ক্লাবের শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় শেফিল্ড ওয়েনসডে। ইংল্যান্ডে সবচেয়ে পুরোনো পেশাদার ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ প্রতিষ্ঠায়ও অবদান কম নয়।

ইংল্যান্ডের ফুটবলে বেশির ভাগ সময় শীর্ষ স্তরে কাটালেও ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমের পর আর প্রিমিয়ার লিগে উঠতে পারেনি শেফিল্ড। শীর্ষ স্তরে ১৯২৯-৩০ মৌসুমে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হওয়া এই দল এখন লিগ ওয়ানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, যা ইংলিশ ফুটবলের লিগ–ব্যবস্থায় তৃতীয় স্তর। সেই শেফিল্ডই কাল ইংলিশ ফুটবল লিগে প্লে–অফের ইতিহাসে সেরা ‘কামব্যাক’–এর ঘটনা ঘটিয়েছে।

আরও পড়ুন

১২ মে পিটারবরো ইউনাইটেডের মাঠে প্রথম লেগে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয় শেফিল্ড। কাল রাতে শেফিল্ডের মাঠে ছিল ফিরতি লেগ। ৪ গোলের ঘাটতি পুষিয়ে শেফিল্ড লিগ ওয়ান প্লে–অফের ফাইনালে উঠতে পারবে কি না, এ নিয়ে বাজি ধরার লোক কমই থাকার কথা। কিন্তু হিলসবরো স্টেডিয়ামে শেফিল্ডের প্রায় ৩১ হাজার দর্শককে দেখে তার উল্টোটাই মনে হবে যে কারও।

কিক–অফের আগেই ‘হাই হো শেফিল্ড ওয়েনসডে’ গানের সুরে স্টেডিয়াম মাতিয়ে রাখেন স্বাগতিক দর্শকেরা, যেন তাঁরা জানতেন, আজকের লগ্নটা শেফিল্ডের, ঘটেছেও ঠিক তা–ই। ২৫ মিনিটের মধ্যে শেফিল্ড জোড়া গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ‘কামব্যাক’ অসম্ভব মনে হয়নি। বিরতির পর দুই দল মিলে করেছে আরও ৪ গোল। এর মধ্যে ১টি গোল পিটারবরোর, সেটাও ১০৫ মিনিটে আত্মঘাতী।

বিরতির পর ৭১ মিনিটে রিস জেমস তৃতীয় গোলটি এনে দেন শেফিল্ডকে। যোগ করা সময়ে ৮ মিনিটে (৯০‍+৮) লিয়াম পালমারের গোলে প্রথম লেগে ৪ গোলের ঘাটতি পুষিয়ে ওঠে শেফিল্ড। এরপরও নাটক শেষ হয়নি।

আরও পড়ুন

খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে ১০৫ মিনিটে গ্রেগরির আত্মঘাতী গোলে আবারও পিছিয়ে পড়ে শেফিল্ড। কী হয়, কী হয়, এমন টান টান পরিস্থিতির মধ্যে ১১২ মিনিটে ক্যালাম প্যাটারসন গোল করলে ৫-৫ সমতায় ফেরে শেফিল্ড। সেখান থেকে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে ৫-৩ গোলের জয়ে ইতিহাস রচনার সঙ্গে লিগ ওয়ান প্লে–অফের ফাইনালেও ওঠে শেফিল্ড।

এমন ইতিহাসগড়া মুহূর্তে স্বাগতিক দর্শকেরা নিজেদের আর ধরে রাখতে পারেননি। অবিশ্বাস্য জয়ের আনন্দে প্রচুর দর্শক মাঠে ঢুকে শেফিল্ডের জয় উদ্‌যাপন করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই জয়কে বলা হচ্ছে শেফিল্ডের ‘গ্রেটেস্ট কামব্যাক’।

শেফিল্ডের জয়ের পর মাঠে ঢুকে এভাবেই উদ্‌যাপন করেন সমর্থকেরা
টুইটার

বিবিসি জানিয়েছে, লিগ ওয়ানের প্লে–অফে এর আগে কোনো দলই প্রথম লেগে দুই গোলের বেশি ঘাটতি পুষিয়ে ফাইনালে উঠতে পারেনি। ফুটবলের পরিসংখ্যানভিত্তিক টুইটার অ্যাকাউন্ট অপটা জো জানিয়েছে, ফুটবল লিগ প্লে–অফের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ৪ গোলের ঘাটতি পুষিয়ে ফাইনালে উঠল শেফিল্ড। ওয়েম্বলিতে ২৯ মে ফাইনালে বার্নসলি অথবা বোল্টনের মুখোমুখি হবে ক্লাবটি। শুক্রবার সেমিফাইনাল ফিরতি লেগে মুখোমুখি হবে বার্নসলি-বোল্টন। জয়ী দল জায়গা করে নেবে ইংলিশ লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে।

আরও পড়ুন

প্রথম লেগে হারের পর বর্ণবাদী মন্তব্য শুনতে হয়েছিল শেফিল্ডের কোচ ড্যারেন মুরকে। তাঁর চাকরিও সুতায় ঝুলছিল। অবিশ্বাস্য জয়ে মুরের পায়ের তলার মাটি কিছুটা হলেও শক্ত হলো।

কোচকে প্রাপ্য প্রশংসাটুকু দিয়ে শেফিল্ড অধিনায়ক ব্যারি ব্যানান বলেছেন, ‘সবাই আমাদের বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিল। সবাই বলেছিল, আমরা পারব না। কিন্তু এটা অবিশ্বাস্য (জয়)। তিনিও (মুর) অবিশ্বাস্য কাজ করেছেন। খেলোয়াড়দের ভেঙে পড়তে দেননি। বর্ণবাদী মন্তব্যের শিকার হওয়াকে সে যেভাবে সামলেছেন, তাতে আমি গর্বিত। এই জয়টা তাঁর জন্য।’