মাকে হারানো আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলারের জীবনটাই যেন শোকের
কাতার বিশ্বকাপ জয়ে খুশির আমেজ এখনো কাটেনি আর্জেন্টিনা দলের। বিশ্বকাপ জয়কে খেলোয়াড়দের অনেকেই এখনো নানাভাবে উপভোগ করছেন। এর মধ্যে হানা দিল দুঃখ। বিশ্বকাপজয়ী উইঙ্গার আনহেল কোরেয়ার মা মারা গেছেন। কাল কোরেয়ার মায়ের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছে তাঁর ক্লাব আতলেতিকো মাদ্রিদ।
কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে বদলি হয়ে মাঠে নেমেছিলেন কোরেয়া। শুরুতে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দলে ছিলেন না। চোটাক্রান্ত নিকোলাস গঞ্জালেসের জায়গায় ডাক পেয়েছিলেন।
তাঁর মা মার্সেলা মার্তিনেজের মৃত্যুর খবর জানিয়ে আতলেতিকো মাদ্রিদের অফিশিয়াল বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রোজিব্লাঙ্কোস পরিবারের জন্য আজকের দিনটা দুঃখের। আমাদের খেলোয়াড় আনহেল কোরেয়ার মা মার্সেলা মার্তিনেজের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছে আতলেতিকো মাদ্রিদ। আমাদের সভাপতি, প্রধান নির্বাহী, সদস্য থেকে সবাই এই শোকাতুর সময়ে তার পাশে আছে।’কোরেয়ার মায়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে রোববার রায়ো ভায়োকানোর বিপক্ষে কালো আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামবে আতলেতিকো।
২৮ বছর বয়সী কোরেয়া মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারান। দুই বছর পর তাঁর একটি ভাই মারা যায়। ২০১৪ সালে সান লরেঞ্জোর হয়ে কোপা লিবার্তোদোরেস জয়ের পরের বছর নাম লেখান স্পেনের ক্লাব আতলেতিকোয়। মাদ্রিদের চিকিৎসকেরা তাঁর শরীরে টিউমারের অস্তিত্ব পান এবং নিউইয়র্কে ওপেন হার্ট অস্ত্রোপচার করানো হয়। এর ছয় মাস পর ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে অভিষেক ঘটে কোরেয়ার। আতলেতিকোয় যোগ দেওয়ার দুই বছর পর আবারও বিপর্যয় নেমে আসে কোরেয়ার জীবনে।
২০১৭ সালে রোজারিওতে ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তাঁর আরেক ভাই লুইস মার্তিনেজ। তখন রোজারিও সরকারি কৌঁসুলি অফিসের প্রেস কর্মকর্তা সেবাস্তিয়ান কারানজা জানিয়েছিলেন, ‘এটা আত্মহত্যা। আমাদের কাছে তথ্য আছে, তিনি হতাশায় ভুগছিলেন।’
গত বছর ফিনালিসিমা জয়ের পর আবারও অস্ত্রোপচার করানো হয় কোরেয়ার শরীরে। প্রথমবার ওপেন হার্ট অস্ত্রোপচার করিয়ে বুকে বসানো যন্ত্র বিকল হয়ে পড়েছিল। একই অস্ত্রোপচার করানো হয় আবারও। তার আগেই মায়ের ক্যানসারে ভোগার খবর জানিয়েছিলেন কোরেয়া।
২০২০ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন এক পোস্টে ক্যানসারের কথা জানানোর পাশাপাশি মায়ের সঙ্গে একটি ছবিও পোস্ট করেছিলেন। মা ক্যানসারের চিকিৎসা করানোয় চুল পড়ে গিয়েছিল, কোরেয়াও মায়ের মতো মাথা ন্যাড়া করে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে তোলা একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। ইনস্টাগ্রামে করা সেই পোস্টে কোরেয়া লিখেছিলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুকে কোনোরকম রেহাই দেওয়া যাবে না। ওরা শরীরকে আক্রমণ করতে পারে, কিন্তু মনকে কখনো ছুঁতেও পারবে না। নিজেকে হারিয়ে ফেলা যাবে না। চেতনাটা ধরে রাখতে হবে। এ যুদ্ধ আমাদের মা, তোমাকে ভালোবাসি।’
কাল সেই মাকেও হারালেন কোরেয়া। এই ফুটবলার স্ত্রী সাবরিনা ডি মার্জোর সঙ্গে ঘর বেঁধে তিনটি সন্তানের মুখ দেখেছেন—লোলা, লুজ ও লিয়া।