এমবাপ্পের দলবদলের ‘গালগল্প’ যেন ফুরোবেই না

কিলিয়ান এমবাপ্পেএএফপি

‘এমবাপ্পের রিয়াল মাদ্রিদে আসার উচ্চ সম্ভাবনা আছে। ৫০ শতাংশের বেশি। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। নির্ভর করছে রিয়াল মাদ্রিদের ওপর। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।’ সম্প্রতি কিলিয়ান এমবাপ্পের রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়া নিয়ে কথাগুলো বলেছেন লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস।

প্রশ্ন হচ্ছে, এমবাপ্পের পিএসজি ছেড়ে রিয়ালে যাওয়ার ৫০ শতাংশের বেশি সম্ভাবনা কি তেবাসের বৈপ্লবিক কোনো আবিষ্কার? ২০১৭ সালে প্রথম যখন এমবাপ্পের রিয়ালে যাওয়ার প্রসঙ্গ সামনে আসে, তখন থেকেই কি সম্ভাবনা ছিল না? বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো কোনো দলবদলে সেই সম্ভাবনা ৯০ শতাংশও পেরিয়ে গিয়েছিল, মনে হয়েছিল পরদিনই মাদ্রিদের বিমানে চড়ে বসবেন এমবাপ্পে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কিছুই হয়নি। জল ঘোলা করে ফের সেই পিএসজিতেই থেকে যান এ ফরাসি তারকা।

আরও পড়ুন

তাই রিয়াল সমর্থকদের কাছেও এমবাপ্পের দলবদলের সব খবর যেন ফাঁকা বুলি। ফলে এই মৌসুমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ফুটবলভিত্তিক গ্রুপগুলোতেও এমবাপ্পের দলবদল নিয়ে নেই তেমন কোনো আলোচনা। যেন এ দলবদল নিয়ে এখন কারও আর কোনো আগ্রহ নেই!

এমবাপ্পের দলবদলের এই নাটককে কেউ চাইলে কোনো থ্রিলার সিরিজের সঙ্গেও মেলাতে পারেন। প্রতিটি দলবদল মৌসুম শেষ হয় পরবর্তী মৌসুমে নতুন কিছু ঘটার সম্ভাবনা উসকে দিয়ে। এভাবেই চলছে। ফলে এমবাপ্পের দলবদল যদি একটি সমুদ্র হয়, তবে লা লিগা সভাপতি মন্তব্যটি সেখানে ঢিল ছোড়ার মতোই। যা আসলে শেষ পর্যন্ত বিশেষ কিছুই যোগ করে না।

লা লিগা সভাপতি তেবাস
রয়টার্স

২০১৭ সালে মোনাকো থেকে পিএসজিতে আসেন এমবাপ্পে। পিএসজিতে নতুন ইতিহাস লেখা শুরু করলেও তাঁর রিয়াল–প্রেম কখনোই গোপন থাকেনি। কদিন আগেও বলেছিলেন, প্রথমবার রিয়ালে গিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হওয়ার কথা। রিয়াল দর্শনের পর নিজের দুনিয়াতে ফিরে তাঁর নাকি মনে হয়েছিল, তিনি পৃথিবীর চূড়া থেকে মাটিতে নেমে এসেছেন। পাশাপাশি এই ক্লাবে প্রায় এক দশক খেলে গেছেন তাঁর শৈশব-কৈশোরের আদর্শ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। যে কারণে নিজের রিয়াল-প্রেম কখনোই ভুলতে পারেননি এমবাপ্পে।

আরও পড়ুন

তবে রিয়াল-এমবাপ্পের মধুর মিলনে বারবার সিনেমার ‘ভিলেন’–এর মতো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পিএসজি। এমবাপ্পের মাদ্রিদে আসা আটকাতে এমন কোনো কাণ্ড নেই, যা তারা করেনি। এমনকি ২০২১ সালের জুনে রিয়ালে যাওয়া ঠেকাতে খোদ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এমবাপ্পেকে ফোন করেছিলেন।

সর্বশেষ গ্রীষ্মের দলবদলের সময় একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল ভেঙে পড়েছে এমবাপ্পে ও পিএসজির সম্পর্ক। সেবার নাটকের শুরু হয় এমবাপ্পের পাঠানো একটি চিঠিকে ঘিরে। যেখানে এমবাপ্পে জানিয়ে দেন মেয়াদ শেষ করার পর তিনি আর চুক্তি নবায়ন করতে চান না। জবাবে পিএসজি জানায়, চুক্তি নবায়ন না করে থাকার কোনো সুযোগ নেই। হয় চুক্তি নবায়ন করতে হবে, নয়তো দলবদলে ছাড়তে হবে ক্লাব। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংকট চরম রূপ ধারণ করে।

এমনকি এমবাপ্পেকে প্রাক্‌–মৌসুমে এশিয়া সফর থেকেও বাদ দেয় পিএসজি। পাশাপাশি চুক্তি নবায়ন না করে ক্লাবে থাকলে নতুন মৌসুমে বেঞ্চে বসিয়ে রাখার হুমকিও দেওয়া হয়। এমন আচরণের জন্য পিএসজিকে রীতিমতো তোপের মুখে পড়তে হয়। ফরাসি খেলোয়াড়দের সংগঠন প্যারিসের ক্লাবটিকে মামলা করার হুমকিও দেয়। কিন্তু এত সব নাটকের পরও দলবদলের শেষ দৃশ্যে সেই একই পরিণতি। এমবাপ্পে পিএসজিতেই থেকে যান। আর বেঞ্চে বসানোর হুমকিও যে ফাঁকা বুলি ছিল, তা–ও প্রমাণ হতে সময় লাগেনি। পিএসজির হয়ে চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২৭ ম্যাচ খেলে ২৮ গোল করেছেন এমবাপ্পে।

আরও পড়ুন

এরপর জানুয়ারির দলবদলের শুরুতেও যথারীতি সামনে এসেছে এমবাপ্পের ‘মাদ্রিদ অভিযানে’ যাওয়ার ‘গালগল্প’। এবার অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। আগামী জুনে ফ্রি এজেন্ট হতে যাওয়া এমবাপ্পে চাইলে এখনই পছন্দের ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি পাকা করে রাখতে পারবেন।

এর মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাঁকে রিয়ালের সময় বেঁধে দেওয়ার কথাও শোনা যায়। যদিও এখন পর্যন্ত তেমন কিছুই ঘটেনি, কিছু ঘটতে পারে সেই ইঙ্গিতও সামান্য। ফলে এবারের নাটকের হয়তো এখানেই যবনিকা পড়বে। আর দর্শকদেরও পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে আগামী জুন পর্যন্ত।