প্রিমিয়ার লিগে বেতনে শীর্ষে হলান্ড, শীর্ষ দশে আরও যাঁরা
ফুটবলে পারফরম্যান্সের সূত্র ধরেই আসে অর্থ। তবে অনেক সময় খেলোয়াড়দের নিয়ে আলোচনার কারণেও একটি ক্লাব নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে বড় অঙ্কের বেতন দিয়ে থাকে। উচ্চ বেতন যে সব সময় ভালো ফল নিয়ে আসে, তা কিন্তু নয়। অনেক খেলোয়াড় বড় অঙ্কের বেতন নিয়ে দলে এসেও ব্যর্থ হতে পারেন। প্রিমিয়ার লিগেও এমন উদাহরণ কম নয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, পারফরম্যান্সের নিম্নগামীতা অর্থকেও নিচের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। আবার ভালো পারফরম্যান্স উল্টোটাও ঘটাতে পারে। বেতন বেড়ে যেতে পারে রকেট গতিতে।
ঠিক তেমনভাবেই গত মৌসুমে ভালো পারফরম্যান্সের পুরস্কার পেতে চলেছেন মার্কাস রাশফোর্ড। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড রাশফোর্ডের সঙ্গে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে। পাশাপাশি তাঁকে বড় অঙ্কের বেতনেও চলেছে ওল্ড ট্রাফোর্ডের ক্লাবটি। ইউরোপের একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, ইউনাইটেড নতুন চুক্তিতে রাশফোর্ডকে যে বেতন দেবে, তা প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া খেলোয়াড়দের একজনে পরিণত করবে এই ইংলিশ তারকাকে।
বর্তমানে প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া খেলোয়াড়ের তালিকায় সবার ওপরে আছেন আর্লিং হলান্ড। সব মিলিয়ে হলান্ডের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি থেকে এ তালিকায় জায়গা পেয়েছেন দুজন। অন্য ক্লাবগুলোর মধ্যে তালিকায় আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, লিভারপুল ও টটেনহাম হটস্পার। এসব ক্লাব থেকে বেতন নেওয়ার ক্ষেত্রে কারা এগিয়ে আছেন, তা একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
প্রিমিয়ার লিগে বেতন পাওয়া শীর্ষ ১০ খেলোয়াড়
আর্লিং হলান্ড (ম্যানচেস্টার সিটি)
১০ লাখ ৭ হাজার ইউরো
গত মৌসুমের পারফরম্যান্স হলান্ডের শীর্ষ বেতনধারী হওয়ার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে মৌসুমজুড়ে তাঁর পারফরম্যান্স। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে সিটিতে আসা হলান্ডকে নিয়ে প্রত্যাশার সঙ্গে শঙ্কাও কম ছিল না। প্রশ্ন ছিল, প্রিমিয়ার লিগের মতো তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রতিযোগিতায় হলান্ড নিজের ছন্দ ধরে রাখতে পারবেন তো? সব শঙ্কা অবশ্য তুড়িতে উড়িয়ে দিয়েছেন হলান্ড। এক মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগের অসংখ্য রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন এই নরওয়েজীয় তারকা। এমন পারফরম্যান্সের পর ইংলিশ লিগের খেলোয়াড়দের মধ্যে বেতনে সবার ওপরে থাকা নিয়ে কারও সন্দেহ পোষণ করার কোনো সুযোগ নেই। গত মৌসুমে সব মিলিয়ে ৫২ গোল করা হলান্ডকে সপ্তাহপ্রতি ম্যানচেস্টার সিটি বেতন দেয় ১০ লাখ ৭ হাজার ইউরো।
কেভিন ডি ব্রুইনা (ম্যানচেস্টার সিটি)
৪ লাখ ৪৮ হাজার ইউরো
৭ মৌসুম ধরে ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডের প্রাণভোমরা হয়ে আছেন কেভিন ডি ব্রুইনা। সিটির একের পর এক শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়কও এই মিডফিল্ডার। সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে সিটির ট্রেবল জয়েও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল ডি ব্রুইনার। নিজের পারফরম্যান্সই তাঁকে প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড়ের মর্যাদা দিয়েছে। সিটি ডি ব্রুইনাকে সপ্তাহপ্রতি ৪ লাখ ৪৮ হাজার ইউরো বেতন দিয়ে থাকে।
মোহাম্মদ সালাহ (লিভারপুল)
৪ লাখ ৪৮ হাজার ইউরো
ডি ব্রুইনার সঙ্গে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেতন লিভারপুল তারকা মোহাম্মদ সালাহও। লিভারপুলের হারানো মর্যাদা পুনরুদ্ধারের অন্যতম নায়ক সালাহ। অল রেডদের হয়ে প্রতি মৌসুমে ধারাবাহিকভাবে পারফরম্যান্স করে দেখিয়েছেন এই মিশরীয় তারকা। গত মৌসুমে ৫১ ম্যাচে গোল করেছেন ৩০টি। লিভারপুলের নিষ্প্রভ মৌসুমেও সালাহ ছিলেন উজ্জ্বল। লিভারপুল তাঁকে সপ্তাহপ্রতি বেতন দেয় ৪ লাখ ৪৮ হাজার ইউরো। যদিও এ বেতন পেতে বেশ লড়াই করতে হয়েছে সালাহকে। আগামী মৌসুমেও লিভারপুলকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে দারুণ কিছু করতে হবে সালাহকে।
কাসেমিরো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)
৪ লাখ ৩৬ হাজার ইউরো
৩০ পেরোনো কাসেমিরোকে দলে টানা নিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে পড়তে হয়েছিল সমালোচনার মুখে। কিন্তু নিজের প্রথম মৌসুমেই কাসেমিরো বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন তাঁকে এত দাম ও বেতন দিয়ে নিয়ে এসেছেন ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগ। গত মৌসুমে ওল্ড ট্রাফোর্ডের ক্লাবটির লিগ টেবিলে ৩ নম্বরে থাকার পথে দারুণ অবদান ছিল কাসেমিরোর। ইউনাইটেডে তাঁর বেতন ৪ লাখ ৩৬ হাজার ইউরো।
মার্কাস রাশফোর্ড (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)
৪ লাখ ৩৬ হাজার ইউরো
গত মৌসুমে ইউনাইটেডের ঘুরে দাঁড়ানো পারফরম্যান্সে কাসেমিরোর মতো দারুণ অবদান ছিল রাশফোর্ডেরও। ২৫ বছর বয়সী এই তারকার কাছ থেকে সামনে আরও বড় কিছুর প্রত্যাশা ইউনাইটেডের। সম্প্রতি সামনে এসেছে তাঁর বেতন বৃদ্ধির প্রসঙ্গও। ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, রাশফোর্ডকে কাসেমিরোর সমান বেতনই দিতে যাচ্ছে ইউনাইটেড। তাঁর বেতনও হবে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ইউরো।
রাহিম স্টার্লিং (চেলসি)
৪ লাখ ৭ হাজার ইউরো
চোট ও ছন্দহীনতায় গত মৌসুমে বেশ ভুগেছেন চেলসির ইংলিশ স্ট্রাইকার রাহিম স্টার্লিং। তাঁর সেরাটা না পাওয়ার প্রভাব পড়েছে চেলসির সামগ্রিক পারফরম্যান্সেও। গত মৌসুমে সব মিলিয়ে ৩৮ ম্যাচে মাঠে নেমে করেছেন মাত্র ৯ গোল। তাই তাঁকে দেওয়া চেলসির সপ্তাহপ্রতি ৪ লাখ ৭ হাজার ইউরোর বেতনটা একটু বেশিই মনে হতে পারে। নতুন মৌসুমে স্টার্লিং ঘুরে দাঁড়াতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
রোমেলু লুকাকু (চেলসি)
৩ লাখ ৭৮ হাজার ইউরো
ইন্টার মিলান ও চেলসির মাঝে পড়ে হাঁসফাঁস করছেন রোমেলু লকুাকু। ২০২১-২২ মৌসুমে তাঁকে প্রায় ১৪০ মিলিয়ন ইউরোতে কিনে নেয় চেলসি। এরপর লুকাকুকে তারা ধারে পাঠায় সিরি আ’র ক্লাব ইন্টার মিলানে। গত মৌসুমেও ইন্টারের হয়ে খেলেছেন লুকাকু। কিন্তু পারফরম্যান্সের নিম্নগামীতা সংকটের মুখে ফেলেছে লুকাকুর ভবিষ্যতকে। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে সহজ গোল মিস করে বেশ সমালোচিতও হয়েছিলেন এই স্ট্রাইকার। এরপরও অবশ্য শীর্ষ বেতনধারী ১০ খেলোয়াড়ের তালিকায় নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন লুকাকু। চেলসিতে তাঁর বেতন ৩ লাখ ৭৮ হাজার ইউরো।
ভার্জিল ফন ডাইক (লিভারপুল)
৩ লাখ ৫০ হাজার ইউরো
৬ মৌসুম ধরে খেলে লিভারপুলে নিজেকে প্রমাণ করেছেন ভার্জিল ফন ডাইক। লিভারপুল চ্যাম্পিয়নস লিগ ও প্রিমিয়ার লিগ পুনরুদ্ধারেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তাঁর। গত কয়েক মৌসুমে অবশ্য চোটে ভোগে নিজের ছন্দ হারিয়েছেন ফন ডাইক। এরপরও অবশ্য তাঁর ওপর পূর্ণ আস্থা আছে কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের। লিভারপুল তাঁকে বেতন দেয় সপ্তাহপ্রতি ৩ লাখ ৫০ হাজার ইউরো। আগামী মৌসুমেও রক্ষণে লিভারপুলের বড় ভরসা হিসেবে থাকবেন এই ডাচ তারকা।
জ্যাক গ্রিলিশ (ম্যানচেস্টার সিটি)
৩ লাখ ৫০ হাজার ইউরো
ব্রিটিশ রেকর্ড ভেঙে ম্যানচেস্টার সিটিতে এসেছিলেন জ্যাক গ্রিলিশ। প্রথম মৌসুমে নিজেকে সেভাবে চেনাতে না পারলেও, গত মৌসুমে সিটির ট্রেবল জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তাঁর। পজিশন বদলে তাঁকে দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন কোচ পেপ গার্দিওলা। অবদান রেখেছেন দলের ট্রেবল জয়েও। সিটিতে গ্রিলিশের বেতন সপ্তাহপ্রতি ৩ লাখ ৫০ হাজার ইউরো।
হ্যারি কেইন (টটেনহাম)
৩ লাখ ৫০ হাজার ইউরো
টটেনহাম ও হ্যারি কেইন যেন সমার্থক। ১১ মৌসুম ধরে লন্ডনের ক্লাবটির হয়ে খেলে চলেছেন কেইন। ব্যক্তিগতভাবে গোলের খাতা সমৃদ্ধ করলেও টটেনহামকে কোনো শিরোপা এনে দিতে পারেননি ইংলিশ অধিনায়ক। জোর গুঞ্জন এবারের দলবদলে ক্লাব ছাড়তে চান কেইন। এর মধ্যে নাকি বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে ব্যক্তিগত শর্তে ঐক্যমতেও পৌঁছেছেন কেইন। একই সঙ্গে তাঁকে নিয়ে পিএসজির আগ্রহের কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে কেইনকে যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে চান টটেনহাম মালিক ড্যানিয়েল লেভি। সে জন্য কেইনের ৩ লাখ ৫০ হাজার ইউরোর বেতনও নাকি দ্বিগুণ করতে চান লেভি। টটেনহাম মালিকের এই প্রচেষ্টা সফল হলে সবচেয়ে বেতনধারী খেলোয়াড়ের তালিকায় আরও ওপর উঠে আসবেন এই ইংলিশ স্ট্রাইকার।