দলবদলে সৌদি লিগের ব্যয় ৯৫ কোটি ডলার
‘ফুটবল–দুনিয়ায়, বিশেষ করে দলবদলের সময় কেউ যদি নিজেকে সহজ শিকার বানিয়ে রাখে, তবে তা অন্যদের উৎসাহিত করে তাকে গিলে ফেলার’—আত্মজীবনী ‘মাই লাইফ ইন রেড অ্যান্ড হোয়াইট’–এ কথাটি বলেছেন কিংবদন্তি আর্সেনাল কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার। কথাটা যে কতটা সত্যি, এবারের দলবদলে বোধ হয় তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলো।
সৌদি আরবের আগ্রাসী খেলোয়াড় কেনার নীতির সামনে রীতিমতো তটস্থ হয়ে থাকতে হয়েছিল ক্লাবগুলোর। ইয়ুর্গেন ক্লপ–পেপ গার্দিওলার মতো কোচরা সৌদি ক্লাব নিয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার কথাও বলেছিলেন। সেই সতর্কবার্তা ও ভবিষ্যতের জন্য কড়া হুমকি দিয়েই গতকাল রাতে দলবদলের দরজা বন্ধ করেছে সৌদি প্রো গিল।
এবারের দলবদলে সৌদি ক্লাবগুলো খেলোয়াড় কেনায় খরচ করেছে ৯৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যেখানে তাদের নেট খরচ ৯০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। খরচের দিক থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ঠিক পরেই অবস্থান সৌদি আরবের। প্রিমিয়ার লিগ দলবদলে নেট খরচ করেছে ১৩৯ কোটি ডলার।
সব মিলিয়ে এবারের দলবদলে নেইমার–বেনজেমাসহ ৯৪ জন বিদেশি খেলোয়াড়কে দলে টেনেছে প্রো লিগের ক্লাবগুলো। যেখানে ৩৭ জন এসেছেন ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগ থেকে। দলবদলে সৌদি ক্লাবগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর সঙ্গে। প্রিমিয়ার লিগ এবার নিজ লিগে বাইরে খেলোয়াড় বিক্রি করে আয় করেছে ৬৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যার মধ্যে সৌদি দলগুলোর কাছ থেকেই তারা পেয়েছে ৩১ কোটি ২০ লাখ ডলার। তবে শেষ পর্যন্ত আল ইত্তিহাদ মোহাম্মদ সালাহকে দলে ভেড়াতে পারলে এটা আরও বাড়ত। লিভারপুলের অনড় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত পেরে উঠেনি ইত্তিহাদ।
এ ছাড়া সৌদি ক্লাবগুলো ১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার খরচ করেছে ফরাসি লিগ ‘আঁ’তে, সিরি ‘আ’তে খরচ করেছে ১২ কোটি ২০ লাখ ডলার, স্প্যানিশ লা লিগায় তাদের খরচ ১১ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার খরচ করেছে জার্মান বুন্দেসলিগায়। খেলাধুলাবিষয়ক অর্থনৈতিক কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান স্পোর্টস বিজনেস গ্রুপের দেওয়া এক তথ্যে জানা গেছে, ২০১৬ সালের পর এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক লিগ খরচ দিক থেকে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের কোনোটির চেয়ে বেশি খরচ করেছে।
সৌদি ক্লাবগুলো যে এখানেই থামবে না, সে ইঙ্গিত দিয়ে স্পোর্টস বিজনেস গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তা ইজি ওয়ারে বলেছেন, ‘খেলোয়াড় দলে ভেড়ানোয় সৌদি ক্লাবগুলো যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেখিয়েছে এবং যে মানের খেলোয়াড় তারা দলে নিয়েছে, তা দেখায় যে তারা বিশ্ব মঞ্চে ফুটবলের নেতৃত্ব দিতে চায়। এটা এখনো প্রাথমিক অবস্থায় আছে, যাকে আমরা বলতে পারি সৌদি প্রো লিগের প্রথম ধাপ।’
ইউরোপ থেকে সৌদি লিগে যাওয়া শীর্ষ তারকারা
আল আহলি: অ্যালান সেইন্ট–ম্যাক্সিমিন (নিউক্যাসল), রিয়াদ মাহরেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), এদোয়ার্দো মেন্দি (চেলসি), রবার্তো ফিরমিনো (লিভারপুল), গাব্রি ভেইগা (সেল্তা ভিগো), মেরি দেমিরাল (আতালান্তা), রজার আইবানেজ (এএস রোমা), ফ্রাঙ্ক কেসি (বার্সেলোনা)।
আল নাসর: ওতাভিও (পোর্তো), সাদিও মানে (বায়ার্ন মিউনিখ), আইমেরিক লাপোর্তে (ম্যান সিটি), সেকো ফোফানা (লাঁস), মার্সেলো ব্রোজোভিচ (ইন্টার মিলান), অ্যালেক্স টেলেস (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)।
আল ইত্তিফাক: জর্দান হেন্দারসন (লিভারপুল), দেমেরাই গ্রে (এভারটন), গিনি উইনালদাম (পিএসজি), জ্যাক হেনরি (ক্লাব ব্রুগা), মুসা দেম্বেলে (লিওঁ)।
আল শাবাব: জান্নিক কারাসকো (আতলেতিকো মাদ্রিদ)।
আল হিলাল: নেইমার (পিএসজি), ম্যালকম (জেনিথ), রুবেন নাভাস (উলভস), আলেক্সান্দার মিত্রোভিচ (ফুলহাম), সের্হেই মিলানকোভিচ–সাবিচ (লাৎসিও), ইয়াসিন বুনু (সেভিয়া), কালিদু কুলিবালি (চেলসি)।
আল ইত্তিহাদ : ফাবিনিও (লিভারপুল), পেদ্রো নেভেস (সেল্টিক), ফিলিপে লুইস (রিয়াল বেতিস), করিম বেনজেমা (রিয়াল মাদ্রিদ), এনগালো কান্তে (চেলসি)।
ইউরোপ থেকে সৌদি লিগে যাওয়া কোচ
স্টিভেন জেরার্ড (আল ইত্তিফাক)
হোর্হে জেসুস (আল হিলাল)
প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা আলোচিত তারকারা
মোহাম্মদ সালাহ (লিভারপুল)
কিলিয়ান এমবাপ্পে (পিএসজি)
লিওনেল মেসি (পিএসজি)
হাকিম জিয়েচ (চেলসি)
বের্নার্দো সিলভা (ম্যান সিটি)
সাউল (আতলেতিকো মাদ্রিদ)
রোমেলু লুকাকু (চেলসি)
সন হিউং–মিন (টটেনহাম)
লুকা মদরিচ (রিয়াল মাদ্রিদ)
উইলফ্রেদ জাহা (ক্রিস্টাল প্যালেস)
জেমি ভার্দি (লেস্টার)