ফুটবল খেলার বুট ছিল না যাঁর, এখন তাঁর দাম ৯০২ কোটি টাকা
তাঁর গল্পটা খুব নতুন কিছু নয় আসলে। অভাব-অনটন এবং অন্য অনেক বাধা জয় করে নিজের স্বপ্নের পেছনে ছোটা, একসময় খুব সফল হওয়া—যুগে যুগে এমন উদাহরণ কতজনই তৈরি করেছেন। হয়েছেন অনেকের আদর্শ। ফুটবলেও জীবনযুদ্ধে জয়ী এমন কত খেলোয়াড় প্রেরণা হয়ে আছেন বাকিদের জন্য। সেই তালিকায় চাইলে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার আন্তনির নামটাও চাইলে এখন যোগ করা যায়।
তাঁর গল্পটাও তো সাহস দিতে পারে কতজনকে! একসময় যাঁর এক জোড়া ফুটবল বুট কেনার টাকা ছিল না, ছিল না ঘুমানোর জন্য কোনো বিছানা, সেই আন্তনি কিছুদিন আগে আয়াক্স থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছেন ৯ কোটি ৫০ লাখ ইউরো ট্রান্সফার ফিতে। বাংলাদেশি মুদ্রায় দলবদলে তাঁর দাম এসেছে প্রায় ৯০২ কোটি টাকা!
সেই দাম এই বাজারে তাঁর মতো প্রতিভার জন্য যে খুব বেশি নয়, সেটা বোঝাতে খুব বেশি সময়ও নেননি ২২ বছর বয়সী আন্তনি। ইউনাইটেডের হয়ে নিজের অভিষেকেই গোল করেছেন আর্সেনালের বিপক্ষে। ৩-১ গোলে ম্যাচটা জিতে প্রিমিয়ার লিগে উড়তে থাকা আর্সেনালকে মাটিতে নামিয়েছে ইউনাইটেড।
আমরা একটা বস্তির মধ্যে থাকতাম। আমাদের বাসার ২০ গজের মধ্যেই ছিল মাদক ব্যবসায়ীদের আড্ডা। বাইরে থেকে বাসায় গাঁজার গন্ধ আসত। এমন সময়ও গেছে, যখন আমি, আমার বোন ও ভাই, আমাদের অবস্থা ভেবে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম।আন্তনি
একলাফে আন্তনিকে নিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সমর্থকদের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে অনেক। কিন্তু এ পর্যন্ত আসার পথটা মোটেও সহজ ছিল না ব্রাজিলের সাও পাওলোতে এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া আন্তনির।
আরও অনেক ব্রাজিলিয়ান প্রতিভার মতোই কৈশোর থেকে ফুটবলময় জীবন আন্তনির। তবে সেই জীবন খুব স্বাচ্ছন্দ্যের ছিল না।
স্কাই স্পোর্টসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আন্তনি বলেছেন, ‘আমরা একটা বস্তির মধ্যে থাকতাম। আমাদের বাসার ২০ গজের মধ্যেই ছিল মাদক ব্যবসায়ীদের আড্ডা। বাইরে থেকে বাসায় গাঁজার গন্ধ আসত। এমন সময়ও গেছে, যখন আমি, আমার বোন ও ভাই, আমাদের অবস্থা ভেবে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম। বন্যায় আমাদের ঘরে অনেক সময় পানি ঢুকে যেত, তারপরও দেখা যেত আমরা হাসিমুখে সেই পানি সরানোর কাজ করতাম।’
এই অভাব-অনটনের মধ্যেও ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখে গেছেন আন্তনি। ছুটেছেন সেই স্বপ্নের পেছনে, ‘আমি বস্তির খুব সাধারণ ছেলেই ছিলাম। ফুটবল ভালোবাসতাম। কিন্তু ফুটবল খেলার জন্য কোনো বুট ছিল না আমার। যে ঘরে থাকতাম, সেখানে আমার থাকার কোনো বিছানা ছিল না। সোফায় ঘুমাতাম।’
কিন্তু প্রতিভা যাঁর থাকে, তাঁর সামনে আসলে এসব কিছুই বাধা হতে পারে না। হয়নি আন্তনির জন্যও।
বয়স ১০ হওয়ার আগেই তাঁর প্রতিভা চোখে পড়ে সাও পাওলো ক্লাবের, সুযোগ পেয়ে যান ক্লাবটির বয়সভিত্তিক দলে। সেখান থেকে মূল দল। এরপর ২০২০ সালে উড়ে যান আয়াক্সে। ডাচ চ্যাম্পিয়নদের হয়ে দুই মৌসুমে ৫৮ ম্যাচ খেলে করেন ১৮ গোল।
তবে তাঁর পারফরম্যান্সে এতটাই মুগ্ধ হয়েছেন কোচ এরিক টেন হাগ, আয়াক্স ছেড়ে ইউনাইটেডের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পরই পুরোনো শিষ্যকেও নিয়ে আসেন বর্তমান দলে। এখন আন্তনির লক্ষ্য শুধু কোচের সেই আস্থার প্রতিদান দেওয়া, ইউনাইটেডের হারানো গৌরব ফেরাতে ভূমিকা রাখা। সেটা কতটা পারেন, সময়ই বলে দেবে।