চেলসিতে ‘বাতিল’ স্টার্লিংয়ের ‘উপযুক্ত’ ঘরে ফেরা

ধারে আর্সেনালে নাম লিখিয়েছেন রাহিম স্টার্লিংএক্স/উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ

টড বোয়েলির নেতৃত্বাধীন নতুন মালিকপক্ষ চেলসির দায়িত্ব নেওয়ার পর রাহিম স্টার্লিংই ছিলেন ক্লাবের ‘পোস্টার বয়’। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে চারটি লিগ আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে একাধিক সেরার পুরস্কার জেতা এই উইঙ্গারকে নিয়ে বড় আশাই ছিল চেলসি কর্তৃপক্ষের।

দুই বছর পর সেই স্টার্লিংকেই দলবদলের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে তাড়াহুড়া করে আর্সেনালে পাঠিয়েছে চেলসি। তা–ও বিক্রি নয়, ধারে। চেলসিতে চুক্তির আরও তিন বছর বাকি থাকা স্টার্লিং আর্সেনালে গেছেন এক বছরের জন্য।

২৯ বছর বয়সী স্টার্লিংয়ের যে চেলসি–অধ্যায় শেষ হতে চলেছে, সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল সপ্তাহ দুয়েক আগেই। নতুন মৌসুমে লিগে চেলসির প্রথম ম্যাচ ছিল ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে। ওই ম্যাচে তো বটেই, স্টার্লিংকে চেলসির মূল স্কোয়াডেই রাখেননি নতুন কোচ এনজো মারেসকা। ইতালিয়ান এই কোচ আরও অনেকের সঙ্গে স্টার্লিংকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ‘বোম্ব স্কোয়াডে’, চেলসিতে অভ্যন্তরীণভাবে যা ‘লোন স্কোয়াড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সিটির বিপক্ষে ম্যাচের পর কোনো রাখঢাক না রেখেই মারেসকা সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বলেছি ওর জন্য মিনিট পাওয়া কঠিন হবে।’

চেলসিতে দুই মৌসুম খেলেছেন রাহিম স্টার্লিং
এক্স/স্টার্লিং

চেলসিতে খেলা দুই মৌসুমে স্টার্লিং ৮১ ম্যাচে করেছেন ১৯ গোল, যার মধ্যে সর্বশেষ মৌসুমে ৪৩ ম্যাচে ১০। বিনিয়োগ এবং পরিকল্পনা অনুসারে দল হিসেবে চেলসির যে প্রত্যাশা ছিল, সেটি ব্যর্থ হওয়ার পেছনে স্টার্লিংয়ের পারফরম্যান্সে ঘাটতি আছে বলা–ই যায়। তবে মারেসকা তাঁকে শুধু ফর্মের জায়গা থেকে বাদ দিয়েছেন, তা নয়। স্পষ্ট করেই বলেছেন, যে ধরনের উইঙ্গার তাঁর পছন্দ, স্টার্লিং তেমন নন।

আরও পড়ুন

ইতালিয়ান কোচের ওই এক মন্তব্য স্টার্লিংয়ের সাফল্যের ইতিহাসে ভূকম্পন ধরানোর মতো। ২০১২ সালে লিভারপুলের মূল দলের হয়ে অভিষিক্ত এই উইঙ্গার চার মৌসুম পর যখন সিটিতে নাম লেখান, তখনই দাম উঠেছিল তখনকার প্রিমিয়ার লিগের রেকর্ড ৪ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ড। এরপর সাত বছর সিটিতে কাটিয়ে ২০২২ সালের জুলাইয়ে যখন চেলসিতে নাম লেখান, তখনো পেয়েছিলেন ৪ কোটি ৭৫ লাখ পাউন্ড দাম। আর দুই বছর পার না হতেই কিনা চেলসিতে তিনি ‘বাতিল খেলোয়াড়’!

ডেইলি মেইল, দ্য টাইমসের খবর অনুসারে চেলসি কোচের বক্তব্যের পর স্টার্লিংকে দলে নিতে ভাবতে শুরু করে দিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেস ও অ্যাস্টন ভিলা। তবে বিপুল ব্যয়ের (সাপ্তাহিক বেতন ৩ লাখ পাউন্ডের আশপাশে) আভাষ পেয়ে শেষ পর্যন্ত তারা সরে যায়। দৃশ্যপটে ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও। এর–ওর চাওয়ার মধ্যেই স্টার্লিংয়ের মনে হয়তো শঙ্কা জেগেছিল, চেলসিতে ব্রাত্য হয়ে পড়ার পর আর দলই পাবেন কি না!

আরও পড়ুন

তবে দলবদলের শেষ দিনে এসে চেলসির সমঝোতা হয়েছে আর্সেনালের সঙ্গেই। আর এতে লাভ হয়েছে স্টার্লিংয়েরই। আর্সেনালে আগে কখনো না খেললেও এটি তাঁর জন্য ‘ঘরে ফেরা’র কাছাকাছিই। সিটিতে থাকার সময়ই সহকারী কোচ হিসেবে যাঁকে পেয়েছিলেন, সেই মিকেল আরতেতাই যে এখন আর্সেনালের প্রধান কোচ। স্প্যানিশ এই কোচ স্টার্লিংকে বেশ পছন্দও করেন।

এক বছরের জন্য আর্সেনালে নাম লিখিয়েছেন রাহিম স্টার্লিং
এক্স/আর্সেনাল

কিছুদিন আগেই বলেছিলেন, ‘সিটিতে আমাদের বন্ধন দৃঢ় হয়ে উঠেছিল। ওই সময় সে অবিশ্বাস্য ভালো খেলোয়াড়। সে এমন একজন, যার বিষয়ে আমি ভালো অনুভূতি ধারণ করি।’ মারেসকার কাছ থেকে ‘বিতাড়িত’ স্টার্লিংয়ের জন্য আরতেতার কাছে আসতে পারা তাই বড় সৌভাগ্যেরই। যেটা ফুটে উঠেছে আর্সেনাল জার্সি গায়ে ওঠানোর পর ২৯ বছর বছর বয়সী এই উইঙ্গারের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াতেও, ‘আমি সত্যিই রোমাঞ্চিত বোধ করছি। হয়তো শেষ মুহূর্তে দলবদল ঘটেছে, কিন্তু এমন জায়গা, যেটা আমি আশা করেছিলাম। সবকিছুর দিকে তাকিয়ে আমার মনে হয়েছে, এটাই আমার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা।’

এখন দেখার বিষয় লিগ শিরোপায় চোখ রাখা আর্সেনালে স্টার্লিং নিজেকে কতটা ফুটিয়ে তুলতে পারেন।

আরও পড়ুন