মেসি ও রোনালদোর বছরটা যেমন গেল
একসময় ইউরোপে তো বটেই, এমনকি একই লিগেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত স্প্যানিশ লা লিগার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ছিলেন এই দুজন। মেসি ছিলেন বার্সেলোনায়, রোনালদো খেলতেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। ওই সময় প্রতি মৌসুমে একাধিকবার এক অপরের মুখোমুখি হতেন তাঁরা। তবে সব ভালো কিছুই নাকি কখনো না কখনো শেষ হতে হয়। এই নিয়ম মেনে ২০১৮ সাল থেকে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন এই দুজন।
মূলত রোনালদো রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাস যাওয়ার পরই ভেঙে যায় দুজনের অন্য রকম জুটিটি। এরপর অবশ্য মেসিও বার্সেলোনা ছেড়ে চলে যান পিএসজিতে। তবে রোনালদো রিয়াল ছাড়ার পরও ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি হয়েছেন এই দুজন। তবে ইউরোপে দুজনের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় রোনালদো আল নাসরে পাড়ি জমানোর পর।
এরপরও অবশ্য দুজনের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মেসির সৌদি ক্লাব আল হিলালে যাওয়ার জোর গুঞ্জন সত্যি হলে আবার মুখোমুখি হতেন তাঁরা। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন দলবদলে আল হিলালের পরিবর্তে মেসি বেছে নেন ইন্টার মায়ামিকে। এর পর থেকেই দুই ভুবনের বাসিন্দা তাঁরা।
তবে দুজন যতই ভিন্ন পথে হাঁটুন, বছরজুড়ে নানাভাবে একসঙ্গে আলোচনায় ছিলেন তাঁরা। এমনকি আলাদা দুই লিগে গিয়ে মেসি ও রোনালদো কীভাবে সেই লিগকে প্রভাবিত করছেন, তা–ও আলোচিত হয়েছে বছরজুড়ে। আর বছর শেষ এখন তুলনা করা হচ্ছে দুজনের পারফরম্যান্স ও অর্জনের।
বিশ্ব ম্পিয়ন হিসেবেই ২০২৩ সাল শুরু করেছিলেন মেসি। তখন তিনি ছিলেন পিএসজির খেলোয়াড়। তবে পিএসজিতে মেসির সময়টা মোটেই ভালো কাটেনি। এ বছর পিএসজির হয়ে দুটি শিরোপা হাতে তুললেও প্যারিসে রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে ছিলেন মেসি। এমনকি মাঠে নেমে দুয়োও শুনতে হয়েছে তাঁকে। শেষ পর্যন্ত গ্রীষ্মের দলবদলে পিএসজি ছেড়ে ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
মায়ামির হয়ে মেসির শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। লিগস কাপে দলকে একের পর এক ম্যাচ জিতিয়ে এনে দিয়েছেন ক্লাবটির ইতিহাসের প্রথম শিরোপাও। পাশাপাশি মায়ামিকে ইউএস ওপেন কাপের ফাইনালেও নিয়ে যান মেসি। যদিও ফাইনালে হেরে রানার্সআপ হয় মায়ামি। শেষ দিকে চোটে না পড়লে অবশ্য মেসির এই গল্প আরেকটু ভিন্ন হতে পারত।
দলীয়ভাবে সাফল্য পেলেও ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানের খাতায় এ বছর খানিকটা পিছিয়েই ছিলেন মেসি। এ মৌসুমে মেসি সব মিলিয়ে খেলেছেন ৪৪ ম্যাচ। যেখানে পিএসজির হয়ে ২২ ম্যাচ, ইন্টার মায়ামির হয়ে ১৪ ম্যাচ ও আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেছেন ৮ ম্যাচ। আর এই ম্যাচগুলোয় তিনি করেছেন সব মিলিয়ে ২৮ গোল। পিএসজির হয়ে ৯, ইন্টার মায়ামির হয়ে ১১ ও আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৮ গোল। এ ছাড়া তিনটি দলের হয়ে সব মিলিয়ে সহায়তা করেছেন আরও ১২ গোলে।
বিপরীতে রোনালদোর জন্য আল নাসরের হয়ে শুরুটা ছিল অম্ল–মধুর। শুরুতে হুটহাট জ্বলে উঠলেও বেশির ভাগ সময় ছিলেন নিষ্প্রভ। এমনকি রোনালদো আসার আগে শীর্ষে থাকা আল নাসর শেষ পর্যন্ত শিরোপা হাতে তুলতে পারেনি। এ নিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু নতুন মৌসুম শুরু হতে দেখা মেলে অন্য এক রোনালদোর। প্রায় নিয়মিতই গোল পেয়ে চলেছেন ‘সিআর সেভেন’।
শুধু আল নাসরের জার্সিতেই নয়, আন্তর্জাতিক বিরতিতে জাতীয় দলের হয়েও রোনালদো ছিলেন দারুণ উজ্জ্বল। এ বছর রোনালদো সব মিলিয়ে খেলেছেন ৫৯ ম্যাচ। যেখানে আল নাসরের হয়ে ৫০ ও পর্তুগালের হয়ে খেলেছেন ৯ ম্যাচ।
এ ম্যাচগুলোয় রোনালদো সব মিলিয়ে গোল করেছেন সর্বোচ্চ ৫৪টি। যেখানে আল নাসরের হয়ে তাঁর গোল ৪৪টি আর জাতীয় দলের জার্সিতে করেছেন আরও ১০টি। এ ছাড়া সতীর্থদের ১৫ গোলে সহায়তাও করেছেন রোনালদো।