পেনাল্টি মিসের ৪ কারণ
সংবাদ সম্মেলনে বলা কথাটা যে এভাবে বুমেরাং হয়ে উঠবে, লুইস এনরিকে নিশ্চয়ই ভাবেননি। মরক্কো ম্যাচের আগের দিন স্পেন কোচ জানিয়েছিলেন, এক বছর আগেই খেলোয়াড়দের কমপক্ষে এক হাজার পেনাল্টি অনুশীলনের ‘হোমওয়ার্ক’ দিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু পরদিন মাঠে নামার পর দেখা গেল সেই অনুশীলন কোনো কাজে আসেনি। মরক্কোর বিপক্ষে টাইব্রেকারে তিন শট নিয়ে একটিও জালে জড়াতে পারেনি তাঁর দল। পেনাল্টি ব্যর্থতায় হেরে স্পেন বিদায় নেয় দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে। একই পর্বে ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নেয় জাপানও। শুক্রবার রাতে কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার কাছে নেদারল্যান্ডসও হেরেছে টাইব্রেকারেই।
পরিসংখ্যান বলছে, কোয়ার্টার ফাইনালের আগপর্যন্ত হওয়া ৩১ পেনাল্টি কিকের ৪২ শতাংশই জালে পৌঁছায়নি। পেনাল্টি শট গোলে পরিণত হয়েছে মাত্র ৫৮ শতাংশ, যা চার বছর আগের রাশিয়া আসরেও ছিল ৭১ শতাংশ। প্রশ্ন উঠেছে, কাতারে কী কারণে পেনাল্টি থেকে গোল করা এত কঠিন হয়ে গেল?
অনুশীলনের অভাব যে বড় কারণ নয়, সে তো স্পেনের হারই বলে দিচ্ছে। অনুশীলনের সময় পরিবেশ থাকে এক রকম, নিজেদের অনুকূলে। বল জালে পাঠানোর জন্য প্রতিপক্ষ থাকে শুধু গোলকিপার। কিন্তু ম্যাচের সময় প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে গ্যালারির দর্শকও। নিজেদের এবং প্রতিপক্ষ দর্শকদের হই-হল্লায় মনোযোগ ধরে রাখা সহজ কথা নয়। আবার দর্শকের চিৎকার যদি কোনো প্রভাব না–ও ফেলে, মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকা ‘এই গোলের গুরুত্ব অনেক’ ভাবনাও স্নায়ুচাপ তৈরি করে ফেলে। এই স্নায়ুচাপই পেনাল্টি মিসের বড় কারণ।
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের রদ্রিগো, মার্কিনিওসের জালে বল পাঠানোর ব্যর্থতা ওই চাপের কারণেই।
তবে সব পেনাল্টি মিসই যে শুটারের ব্যর্থতা তা নয়। কিছু পেনাল্টি মিসে গোলরক্ষকের বীরত্বই হয়ে ওঠে মূল কারণ।
বিশ্বকাপের খুঁটিনাটি তথ্যের রেকর্ড রাখা হচ্ছে ১৯৬৬ বিশ্বকাপ থেকে। এরপর থেকে ২০১৮ পর্যন্ত গড়ে ১৭ শতাংশ পেনাল্টি সেভ করেছেন গোলরক্ষকেরা। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত পেনাল্টি প্রতিহতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণ—৩৫ শতাংশ (৩১ পেনাল্টির মধ্যে ১১টি)।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্তিনেজের দুটি সেভ যার সর্বশেষ সংযোজন।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১০৯টি ম্যাচ ও দুটি বিশ্বকাপে খেলা গোলরক্ষক মার্ক শোয়ার্জার এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন অপ্টাস স্পোর্টস-এর এক পডকাস্টে। তিনি পেনাল্টি মিসে গোলরক্ষকদের কৃতিত্ব দিয়ে বলেন, ‘গোলরক্ষকদের মান দিনকে দিন ভালো হচ্ছে। এখন ভিডিও দেখে এত বিশ্লেষণ করা হয় সবকিছু, গোলরক্ষকেরা সবকিছুর জন্য প্রস্তুত হয়েই মাঠে নামে।’
পেনাল্টি মিসের আরেকটি বড় কারণ, গতিহীন নিচু শট। মিস হওয়া পেনাল্টিগুলোর বেশির ভাগেরই কোনো জোর ছিল না, পাশাপাশি নিচুও ছিল। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে রদ্রিগোর নেওয়া ব্রাজিলের প্রথম শটটি যেমন ছিল।
ইংল্যান্ডের সাবেক ফুটবলার ক্রিস সাটনের মতে, পেনাল্টি থেকে গোলের সেরা উপায় জোরে মারা, ‘পুরোনো ধাঁচের পেনাল্টি নেওয়াই ভালো। শক্তি ব্যবহার করে পুরো পা দিয়ে খেলা উচিত।’
যুক্তরাজ্যের ক্রীড়াবিজ্ঞানের অধ্যাপক জিয়ের জরডেটের মতে, পেনাল্টি মিসের অন্যতম কারণ তাড়াহুড়া করা।
তাঁর মতে, একটু সময় নিয়ে শট নিলে সফলতার হার বাড়ে, ‘বলের নিচে পা লাগানোর আগের ১০-১৫ সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ। গোলরক্ষক যেন মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে। শুটারকে সময় নিতে হবে। এটা কোনো দৌড় নয় যে রেফারির বাঁশি মানে সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করতে হবে।’