‘চুমু-কাণ্ডে’ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান হেরমোসো
স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে ‘দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা’ নেওয়ার দাবি তুললেন হেনি হেরমোসো। মেয়েদের বিশ্বকাপে ফাইনাল শেষে পদকমঞ্চে বিশ্বজয়ী স্পেনের খেলোয়াড় হেরমোসোর ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলেন রুবিয়ালেস।
স্পেনের মেয়েদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের চেয়ে এরপর বেশি কথা হচ্ছে ওই ঘটনা নিয়েই। স্পেন সরকারে মন্ত্রী, ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট লোকজন, ফুটবল ক্লাব ও খেলোয়াড়দের সংগঠনের পক্ষ থেকেও ৪৬ বছর বয়সী রুবিয়ালেসের পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
স্পেনের নারী ফুটবলারদের ইউনিয়ন ‘ফুটপ্রো’কে নিয়ে যৌথ বিবৃতিতে হেনি হেরমোসো বলেছেন, ‘আমার স্বার্থ রক্ষা করতে এজেন্সি টিএমজের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে আমার ইউনিয়ন ফুটপ্রো এবং তারা এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকায় আছে। এ ধরনের আচরণ করে কেউ যেন পার না পায়, সেটি নিশ্চিত করতেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নারী ফুটবলারদের অগ্রহণযোগ্য আচরণ থেকে রক্ষা করতে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা যেন নেওয়া হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
স্পেনের দ্বিতীয় ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ইয়োলান্দা দিয়াজ এর আগে রুবিয়ালেসকে ‘পদত্যাগ’ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সোমবার ইয়োলান্দা দিয়াজের সঙ্গে এ নিয়ে বসবে ফুটপ্রো। রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যই ইয়োলান্দা দিয়াজের সঙ্গে দেখা করবেন ফুটপ্রোর প্রতিনিধিরা।
রুবিয়ালেসের শাস্তি দাবি করেছে স্পেনের নারী ফুটবল লিগও। স্পেনে নারীদের শীর্ষ ফুটবল লিগ ‘লা লিগা এফ’–এর পক্ষ থেকে গতকাল বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নারী বিশ্বকাপ ফাইনালে স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসের বাজে আচরণের পর তাঁর বিরুদ্ধে সুপিরিয়র স্পোর্টস কাউন্সিলের (সিএসডি) সভাপতির কাছে অভিযোগ করেছে নারীদের পেশাদার ফুটবল লিগ। আমরা তাঁর পদত্যাগ চাই।’
স্পেনে নারীদের পেশাদার ফুটবল লিগ রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ তুলেছে। লা লিগা এফের পক্ষ থেকে সেটি বিবৃতিতেই জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘স্প্যানিশ ফুটবলের শীর্ষ প্রতিনিধির লজ্জাজনক আচরণে কলঙ্কিত হয়েছে স্পেনের ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা মুহূর্ত, যিনি আরও একবার নিজের আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন পদটির যোগ্য নন। একজন বস তাঁর কর্মীকে টেনে ধরে মুখে চুমু দিচ্ছেন, এটা কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না। আর ব্যাপারটা শুধু চুমু নিয়ে নয়। (বিশ্বকাপ জয় উদ্যাপনের সময়) সভাপতির ব্যালকনিতে রানির পাশে তিনি নিজের জননেন্দ্রিয় ধরে ছিলেন, যা অগ্রহণযোগ্য ও জঘন্য।’
সিডনিতে গত রোববার নারী বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় স্পেন। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সেদিন স্পেনের জয় উদ্যাপনের সময় দুই হাত দিয়ে নিজের জননেন্দ্রিয় ধরেছিলেন রুবিয়ালেস, যা টিভিতে সম্প্রচারিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। সেখানে রুবিয়ালেসের থেকে প্রায় দুই মিটার দূরেই স্পেনের রানি লেতিজিয়া তাঁর মেয়েকে নিয়ে বসে ছিলেন। ফাইনালটা উপভোগ করতে এসেছিলেন স্পেনের রানি।
স্প্যানিশ সরকারও রুবিয়ালেসের এই বিতর্কিত চুমুর পরিচ্ছন্ন তদন্ত ও দ্রুত পদক্ষেপ দাবি করেছে স্পেনের ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) কাছে। আরএফইএফ এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে এবং শুক্রবার এ নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসবে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’ জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরার পথে দোহায় যাত্রাবিরতির সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা দেন রুবিয়ালেস। সেখানে তিনি হেরমোসোকেও তাঁর পক্ষে কথা বলতে ক্যামেরার সামনে আসতে অনুরোধ করেছিলেন, ‘আমি বিপদে আছি। আমার মেয়েদের দোহাই লাগে আমার পাশে এসে দাঁড়াও।’ কিন্তু হেনি হেরমোসো রুবিয়ালেসের এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
স্পেনের স্পোর্টস কাউন্সিলের সভাপতি ভিক্টর ফ্রাঙ্কোস বুধবার বলেছেন, স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন যদি এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে স্পোর্টস কাউন্সিল নেবে। রেডিও স্টেশন ‘কাদেনা সার’কে ভিক্টর ফ্রাঙ্কোস বলেছেন, ‘ফেডারেশনকে বলেছি এই (তদন্ত) প্রতিবেদন স্বচ্ছ হতে হবে এবং দ্রুত দাখিল করতে হবে। তা না হলে অবশ্যই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে আমাদের।’
স্পেনে সরকারের অধীন ফুটবল কোচিং স্কুলের সভাপতি মিগুয়েল গালান হেরমোসোকে রুবিয়ালেসের চুমু দেওয়া নিয়ে অভিযোগ করেছেন স্পোর্টস কাউন্সিলে। সরকারি কৌঁসুলিরা চেষ্টা করছেন ব্যাপারটি কীভাবে আদালতে নেওয়া যায়। সেটি করা গেলে ভিক্টর ফ্রাঙ্কোস রুবিয়ালেসকে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা অর্জন করবেন বলে জানিয়েছে স্পেনের সংবাদমাধ্যম এল পাইস। রুবিয়ালেসকে স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি পদ থেকে সরানোর ক্ষমতা আছে আদালতেরও।
মোটামুটি রুবিয়ালেসকে সভাপতি পদ থেকে সরানোর দাবি স্পেনজুড়েই উঠেছে। লা লিগার ক্লাব হেতাফের সভাপতি আনহেল তোরেস যেমন সোজাসাপ্টাই বলেছেন, ‘রুবিয়ালেসকে সরে দাঁড়াতে হবে। তাঁর আচরণ খুবই বাজে। ফেডারেশন সভাপতি হিসেবে তিনি আর এক মিনিটও থাকতে পারেন না।’