মেসিকে ‘ইঁদুর’ ও ‘বামন’ বলেছিল বার্তোমেউয়ের দল
বার্সেলোনা লিওনেল মেসির প্রাণের ক্লাব। আর্জেন্টাইন তারকা বহুবারই এমন কথা বলেছেন। সেই বার্সা ছেড়ে মেসি এখন পিএসজিতে। তবে কাতালান ক্লাবটি ঘিরে নিশ্চিতভাবেই স্মৃতিকাতরতায় ভোগেন তিনি। হয়তো ফিরে যাওয়ার টানও অনুভব করেন প্রতিনিয়ত। তবে বার্সেলোনা শহরের সংবাদমাধ্যম ‘এল পেরিওদিকো’ যে সংবাদ প্রকাশ করেছে, তা কানে গেলে মেসির কোনোভাবেই খুশি হওয়ার কথা নয়।
জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ (২০১৪–২০২০) বার্সার সভাপতি থাকতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তখনকার বোর্ডের সদস্যদের করা একটি আলোচনা ফাঁস করেছে ‘এল পেরিওদিকো’। বার্সা বোর্ডের সদস্যরা সেখানে কয়েকজন তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে আক্রমণাত্মক ও অপমানসূচক কথা বলেছেন।
মেসি ছাড়া সমালোচনার শিকার হন জেরার্দ পিকে ও সের্হিও বুসকেটস। স্পেনের সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ জানিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ফাঁস হওয়া বার্তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছেন বার্সার তখনকার আইনি বিভাগের প্রধান রোমান গোমেজ পন্তি।
এ ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটিতে ছিলেন বার্সার সাবেক সভাপতি অস্কার গ্রাউ (তখন ক্লাবটির প্রধান নির্বাহী), নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করা জর্দি মইক্স, ওরিয়ল তোমা ও ডেভিড বেলভের। আর্থিক বিভাগের পরিচালক পানচো শ্রোডার এবং উদ্ভাবন ও কৌশল বিভাগের হাভিয়ের সোবরিনোও এই আলোচনায় সংযুক্ত ছিলেন।
সেই হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনে মেসিকে নিয়ে বার্তোমেউর প্রতি পন্তি লিখেছেন, ‘বার্তো, ওই নর্দমার ইঁদুরটির (মেসি) প্রতি তুমি এতটা ভালো হতে পারো না। ক্লাব তাকে সবকিছু দিয়েছে, আর সে সাইনিং, দলবদল, চুক্তি নবায়ন, স্পনসর—এসব নিয়ন্ত্রণ করে নিজের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে।’
বার্সা বোর্ডের সাবেক এই সদস্য মেসিকে নিয়ে আরও কড়া ভাষা লেখেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই হরমোনাল বামনের (মেসি) কারণে ক্লাব এবং আমরা যারা ক্লাবের হয়ে কাজ করি, তারা ব্ল্যাকমেইল ও অসম্মানের শিকার হয়েছি। অথচ বার্সেলোনার কারণে তার জীবন বেঁচেছে। কিন্তু মহামারিতে যখন সবকিছু স্থবির, তখন তুমি সেই বিখ্যাত হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পেয়েছিলে, “প্রেসিডেন্ট, বাকিদের বেতন কাটতে পারো, কিন্তু লুইস (সুয়ারেজ) এবং আমাকে ছুঁয়ো না।”’ বার্সার সাবেক সভাপতি বার্তোমেউর প্রতি গ্রুপে এই বার্তা পাঠান পন্তি।
২০০০ সালে বার্সার বয়সভিত্তিক দলে যোগ দেওয়ার পর ২০০৪ সালে মূল দলে সুযোগ পান মেসি। ২০২১ সালে বার্সা ছাড়ার আগে কাতালান ক্লাবটির হয়ে ৩৫টি শিরোপা জিতেছেন মেসি। ৪ বার জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ, ১০ বার জিতেছেন লা লিগা। ৭ বারের এই ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়কে লা লিগার বেতন কাঠামোনীতির কারণে ধরে রাখতে পারেনি বার্সা।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এল মুন্দো’ যেদিন বার্সায় মেসির চুক্তির শর্তাবলি ও পারিশ্রমিক ফাঁস করেছিল, সেদিন হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপে এসব কথা চালাচালি করেন বার্তোমেউ–পন্তিরা। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্ত’ জানিয়েছে, দিনটি ছিল ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি। আর মেসির চুক্তিপত্র ফাঁস হওয়ার পেছনে বার্সার বর্তমান সভাপতি হোয়ান লাপোর্তাকে সন্দেহ করেছিলেন বার্তোমেউ–পন্তি।
‘এল পেরিওদিকো’ জানিয়েছে, ২০২০ সালের আগস্টে চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল বায়ার্ন মিউনিখের কাছে বার্সার ৮–২ গোলে হারের পর জেরার্দ পিকের কঠোর সমালোচনা করেন পন্তি। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পন্তি লিখেছিলেন, বার্সায় সবকিছু পাল্টাতে পিকেকেও ছেড়ে দিতে হবে।
আর বুসকেটসের বিষয়ে বার্তোমেউকে পন্তি পরামর্শ দিয়েছিলেন এভাবে, ‘যেসব খেলোয়াড়ের কোনো বাজার নেই এবং অন্য জায়গায় পাঠানোও যাবে না, তাদের হাতে অল্প কিছু ধরিয়ে দিয়ে বিদায় করো এবং ভুলে যাও যে কোনো রকম সাহায্য করা ছাড়াই তারা ক্লাবে এত দিন টিকে ছিল।’