গার্দিওলা ‘সর্বকালের সেরাদের একজন’, ইনজাগি ‘কাপের রাজা’
স্প্যানিশ সংবাদকর্মী গিয়ের্মো বালাগ কথাটা মন্দ বলেননি। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে ইন্টারের ফাইনালে ওঠা ‘অলৌকিক ব্যাপার।’ ইন্টারের কাছে যদি ফাইনালে ওঠা হয় অলৌকিক, তবে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে কী? একেবারেই উল্টো, সিটির ফাইনালে না ওঠাটাই বরং নানা প্রশ্নের জন্ম দিত। তাই ফাইনালে দুই দলের ওপর চাপের ধরনটা ঠিক এক নয়। সিটি ও ইন্টারের পেছনে যে দুই ট্যাকটিশিয়ান আছেন, অর্থাৎ দুই দলের কোচের ওপরও কি চাপের ধরনটা এক? না, সেখানেও তারতম্য আছে।
ফাইনালে সব জেতা সিটির কোচ পেপ গার্দিওলার লড়তে হবে নিজের অর্জনকে আরেক ধাপ ওপরে তুলতে। ইন্টার মিলানের কোচ সিমোনে ইনজাগির লক্ষ্যটা অবশ্য ভিন্ন। গত সাত বছরের ক্যারিয়ারে ইনজাগি অনেক কিছুই জিতেছেন। ইতালির ফুটবলে তাঁকে ডাকা হয় ‘কাপের রাজা’ হিসেবে।
কোচ হিসেবে এরই মধ্যে গার্দিওলার যত অর্জন, তাতে তিনি অমরত্ব পেয়েছেন আরও আগে। তিনটি লা লিগা, তিনটি বুন্দেসলিগা, পাঁচটি প্রিমিয়ার লিগ, দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগসহ জিতেছেন ৩৪টি শিরোপা। প্রিমিয়ার লিগের মতো তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রতিযোগিতাকে একপেশে বানিয়ে ফেলা এই স্প্যানিশ কোচই সর্বকালের সেরা কি না, সেই আলোচনাও হচ্ছে অনেক দিন ধরে। সর্বকালের সেরা হন বা না হন, গার্দিওলা যে সর্বকালের সেরাদের একজন, তা নিয়ে কারোরই সন্দেহ থাকার কথা নয়।
স্পেন ও বার্সেলোনার কিংবদন্তি ডিফেন্ডার কার্লোস পুয়োলের কথাটাই ধরা যাক। ম্যান সিটির কোচ সম্পর্কে ফাইনালের আগে ইস্তাম্বুলে লরিয়াস স্পিরিট অব স্পোর্টসকে পুয়োল বলেছেন, ‘আমার মতে, গার্দিওলা যদি সর্বকালের সেরা না–ও হয়, নিশ্চিতভাবেই সেরা দুই-তিন কোচের একজন।’
যিনি সর্বকালের সেরাদের একজন, তাঁর সামনেই তো থাকে ‘সর্বকালের সেরা’ হওয়ার চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে চলতি মৌসুমে লিগ শিরোপা ও এফএ কাপ দুটোই জিতেছেন গার্দিওলা। বাকি শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগ। এই শিরোপা জিতলে গার্দিওলা ছুঁয়ে ফেলবেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনকে।
কিংবদন্তি এই কোচের অধীনে ১৯৯৯ সালে ট্রেবল জিতেছিল ইউনাইটেড। দুই যুগ পর একই কীর্তির সুযোগ এখন গার্দিওলার সিটির সামনে। এই শিরোপা জিতলেই যে গার্দিওলা সর্বকালের সেরা হয়ে যাবেন, তা নিশ্চিত করে বলার কোনো সুযোগ নেই। তবে এই পথে যে তিনি এক ধাপ এগোবেন, সেটা তো নিশ্চিত।
অন্যদিকে ইনজাগি ইন্টার মিলানকে ফাইনালে নিয়ে এসেছেন অনেকটা ‘মৃত্যুকূপ থেকে। সি’ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠেছিল ইতালিয়ান ক্লাবটি। এই গ্রুপ থেকে ইন্টারের তিন প্রতিপক্ষ ছিল বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ ও ভিক্টোরিয়া প্লজেন। প্রথম ম্যাচেই সান সিরোয় ৭ সেপ্টেম্বর বায়ার্নের কাছে ২-০ গোলের হারে যাত্রা শুরু করেছিল ইন্টার। প্রথম ম্যাচে হারা সেই ইন্টার এখন চূড়ান্ত সাফল্য পাওয়ার অপেক্ষায়। আর মাত্র এক ধাপ।
এই এক ধাপ পাড়ি দিলে ইনজাগিও এগিয়ে যাবেন অনেক ধাপ। কারণ, এখন পর্যন্ত কোচ হিসেবে ইনজাগি যা জিতেছেন, তা পুরোটাই ইতালির ফুটবলে। ইনজাগির কোচিং ক্যারিয়ারের শুরু লাৎসির হাত ধরে। লাৎসিতে একবার কোপা ইতালিয়া ও ইতালিয়ান সুপার কোপা জিতেছেন দুইবার।
এরপর ২০২১ সালে ইন্টার মিলানে যোগ দেওয়ার প্রথম মৌসুমেই কোপা ইতালিয়া ও ইতালিয়ান সুপার কোপা জেতেন এই কোচ। এই মৌসুমেও এই দুটি শিরোপাই ঘরে তুলেছেন। আর এরপর ১৩ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে তুললেন মিলানকে। এই ধাপটা পাড়ি দিতে ইউরোপসেরা মিলান, ইউরোপসেরা কোচ ইনজাগি।
ইনজাগি কি সেটা পারবেন? নাকি এই পথে বাধা হবেন সর্বকালের সেরাদের একজন গার্দিওলা।