‘এই দেশে এক দিন রেফারি প্রাণ হারাবে’

পল ফিল্ড, ইংল্যান্ডের রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিরেফারিজ অ্যাসোসিয়েশ

ইংল্যান্ডের ফুটবলে তৃণমূল পর্যায়ের রেফারিরা বিবিসিকে বলেছেন, মাঠে দায়িত্ব পালনের সময় তাঁরা নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকেন। খেলোয়াড়দের বাজে আচরণের যেসব শাস্তি ঠিক করা হয়েছে, রেফারিরা সেসব নিয়েও সন্তুষ্ট নয়।


বিবিসি রেডিও ফাইভের প্রশ্নোত্তরে নয় শ-র বেশি রেফারি অংশ নেন। এই অনুষ্ঠানে রেফারিদের কাছে ফুটবল ম্যাচ পরিচালনার ঝুঁকি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। ২৯৩ জন রেফারি জানিয়েছেন, তাঁরা খেলোয়াড়, দর্শক ও কোচদের কাছে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। কেউ কেউ ঘুষি হজম, মাথা দিয়ে গুঁতা ও থুতুর শিকার হওয়ার কথাও জানিয়েছেন। আর ভাষাগতভাবে বাজে ব্যবহারের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রায় সবাই।

মুখে ঘুষি খাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে থাকে তারা। এক দিন এ দেশে রেফারি প্রাণ হারাবে। কয়েক বছর আগে নেদারল্যান্ডসে এমন এক ঘটনায় তাদের সংস্কৃতিই পাল্টে গেছে
পল ফিল্ড, ইংল্যান্ডের রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি

ইংল্যান্ডের রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশন নিজেদের সাত হাজার সদস্যের মধ্যে বিবিসির প্রশ্ন বণ্টন করে। এই সংগঠনের সভাপতি পল ফিল্ডের দাবি, বাজে আচরণ রেফারিদের মানসিকতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পল ফিল্ডের ভাষায়, ‘মুখে ঘুষি খাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে থাকে তারা। এক দিন এ দেশে রেফারি প্রাণ হারাবে। কয়েক বছর আগে নেদারল্যান্ডসে এমন এক ঘটনায় তাদের সংস্কৃতিই পাল্টে গেছে।’ পল ফিল্ড জানিয়েছেন, রেফারিরা যেন বাজে আচরণের শিকার না হন, সে জন্য ‘সম্ভাব্য সব রকম ব্যবস্থা’ই নেওয়া হবে। আরও কঠোর শাস্তির পাশাপাশি তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন পল ফিল্ড।

ইংল্যান্ডের তৃণমূল পর্যায়ের ফুটবলে রেফারিরা শরীরে ক্যামেরা লাগিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করবেন, এই সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। চলতি বছর থেকেই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। পল ফিল্ড মনে করেন, তৃণমূল পর্যায়ে কেউ রেফারির সঙ্গে বাজে আচরণ করলে তাঁকে আর ম্যাচ দেখতে দেওয়া উচিত নয়। ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে (এফএ) পল ফিল্ড বলেছেন, প্রতিটি বড় ক্লাবকে যেন জানিয়ে দেওয়া হয়, বাজে আচরণ করা দর্শকের কাছে যেন টিকিট বিক্রি না করা হয়। তৃণমূল পর্যায়ের খুদে খেলোয়াড়দের বাবা-মায়ের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ফিল্ড। বড় মাপের প্রতিযোগিতায় খেলোয়াড়েরা রেফারির কোনো সিদ্ধান্তের বিরোধিতা যেভাবে করেন, তৃণমূল পর্যায়ের ফুটবলারেরা ঠিক সেভাবেই রেফারির বিরোধিতা করার চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছেন এই সভাপতি।

আরও পড়ুন
প্রশ্নোত্তরে অংশ নেওয়া মোট ৯২৭ জন রেফারির মধ্যে ৯০৮ জন জানিয়েছেন, খেলোয়াড়, কোচ ও দর্শকের কাছ থেকে তারা ভাষাগতভাবে বাজে আচরণের শিকার হয়েছেন


১৭ বছর বয়সী ১২২ জন রেফারি বিবিসির প্রশ্ন-উত্তরে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ১০৫ জন কোচের কাছে বাজে আচরণের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ১০৯ জন দর্শকের বাজে আচরণের শিকার হয়েছেন। আর খেলোয়াড়ের বাজে আচরণের শিকার হয়েছেন ১০২ জন। প্রশ্নোত্তরে অংশ নেওয়া মোট ৯২৭ জন রেফারির মধ্যে ৯০৮ জন জানিয়েছেন, খেলোয়াড়, কোচ ও দর্শকের কাছ থেকে তারা ভাষাগতভাবে বাজে আচরণের শিকার হয়েছেন। ৩২৭ জন রেফারি বর্ণবাদ এবং ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণাত্মক কথার সম্মুখীন হয়েছেন। মৃত্যুর হুমকি কিংবা পরিবারের কাউকে হুমকি—এমন কিছুর শিকার হয়েছেন ২৮৩ রেফারি।

আরও পড়ুন