সালাহউদ্দিন–সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগ চান সাবেক ফুটবলাররা
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে আজ একত্রিত হয়েছিলেন সাবেক ফুটবলারদের অনেকে। সত্তর-আশি ও নব্বইয়ের দশকে দেশের ফুটবলের বড় বড় তারকারা এসেছিলেন নিজেদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরতে। তাঁদের মতে, এ দেশের ফুটবলে এখন চলছে ‘ঘোর অমানিশা’।
ফিফার তদন্তে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তাদের বড় ধরনের আর্থিক জালিয়াতি ধরা পড়েছিল গত বছরই। সেই তদন্তে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। এক বছর পর অধিকতর তদন্তের জালে ফেঁসেছেন সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। আবু নাঈম সোহাগ যে জালিয়াতিতে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন, সেটিতেই বাফুফের অর্থ কমিটির প্রধান হিসেবে ফিফা দায় দেখছে সালাম মুর্শেদীরও। তাঁকে দায়িত্ব অবহেলার জন্য ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সাবেক সাধারণ সম্পাদকের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও বেড়েছে, বেড়েছে জরিমানাও।
নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানা গুনছেন আরও দুই কর্মকর্তা। একজনকে করা হয়েছে সতর্ক। এক সপ্তাহ ধরে এ নিয়েই তোলপাড় চলছে ফুটবল অঙ্গনে। সাবেক ফুটবলাররা মনে করেন, এমন ঘটনার পর সালাম মুর্শেদীর আর বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি পদে থাকার কোনো অধিকার নেই। তাঁরা এ ঘটনায় দায় দেখছেন সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনেরও। সাবেক ফুটবলাররা মনে করেন, শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের প্রশ্রয় ছাড়া এমন দুর্নীতি কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
সাবেক ফুটবলার আবদুল গাফফারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, শামসুল আলম মঞ্জু, আবু ইউসুফ, কাজী আনোয়ার, মোহাম্মদ সুলতান, রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বির, আরমান মিয়া, মাহবুব হোসেন রক্সি, বিপ্লব ভট্টাচার্য, মাহফুজুল আলম মামুন বাবুসহ আরও কয়েকজন জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার। অনুষ্ঠানে শেখ মোহাম্মদ আসলাম, কায়সার হামিদ, হাসানুজ্জামান বাবলু ও খুরশিদ আলম বাবুলের উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা শেষ পর্যন্ত আসেননি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ফুটবলাররা বাফুফের নানা অসংগতি ও সালাম মুর্শেদীর জরিমানা–সংক্রান্ত বিষয়ে প্রকাশিত ফিফা প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের অভিযোগ, গত ১৬ বছরে কাজী সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে বাফুফে দেশের ফুটবলকে নিয়ে গেছে খাদের কিনারায়।
আবদুল গাফফার এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন সম্পর্কে বলেন, ‘দেশের ফুটবল ফেডারেশনের দুই প্রধান কর্তা সাবেক তারকা ফুটবলার। তাঁদেরই অপকর্মের কারণে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের স্টাফরা ফিফার তদন্তে নিষিদ্ধ হচ্ছেন, জরিমানা গুনছেন। দুর্নীতির আখড়া বাফুফে। দেশের ফুটবল ঠিকমতো চলছে না, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে আমরা তলানিতে। এসব দেখলে সাবেক ফুটবলার হিসেবে আমরা লজ্জিত হই। এসবের প্রতিবাদ করতেই আমরা সাবেক ফুটবলাররা এখানে একত্রিত হয়েছি।’
গাফফার বলেন, ‘এমন ঘটনার পর বাফুফে সভাপতি ও সিনিয়র সহসভাপতি দায়িত্ব পালনের নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছেন। ফুটবলের স্বার্থেই তাঁদের সরে যাওয়া উচিত।’
ফিফার অনুদানের অর্থে বাফুফের বিভিন্ন কেনাকাটা নিয়েই ছিল এই তদন্ত। যে ঘটনায় এক বছর আগে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। নতুন তদন্তে সেই নিষেধাজ্ঞা আরও বেড়েছে। সাবেক ফুটবলাররা এ ঘটনায় অর্থ কমিটির প্রধান হিসেবে সালাম মুর্শেদীর শুধু জরিমানা হওয়াতেও বিস্মিত। তাঁদের মতে, সালাম মুর্শেদীকেও এই ঘটনায় নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল। দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল বলেন, ‘প্রায় একই ঘটনায় দুজনের একই শাস্তি হওয়ার কথা। সেখানে একজনকে শুধু জরিমানা করেছে।’
আশরাফউদ্দিন চুন্নু কাঠগড়ায় তুলেছেন সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনকেই, ‘এই ঘটনার দায় সভাপতিকেও নিতে হবে। তাঁর অবশ্যই পদত্যাগ করা উচিত।’
রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বির বলেন, ‘আবাহনী-মোহামেডান খেলা হয়েছে। অথচ এই ম্যাচ নিয়ে ফুটবল-সংশ্লিষ্ট ছাড়া কারও কোনো আগ্রহ নেই। খুব খারাপ লাগে। দেশের ফুটবলের এই অবস্থার জন্য দায়ী বাফুফের ব্যর্থ এই কমিটির সবাইকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।’ আরমান মিয়া ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘এত দিন আমরা সাবেক ফুটবলারদের অনেকেই বাফুফের নানা অসংগতির কথা বলেছি, এবার বলল ফিফা। ফুটবলাররা বাফুফেতে বসে দুর্নীতি করছে, এটা ফুটবলার হিসেবে আমার জন্য লজ্জার।’
সাবেক ফুটবলাররা এ নিয়ে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসানের কাছে যাবেন বলেও জানালেন। শফিউল আরেফিন টুটুলের কথা, ‘সাদেক হোসেন খোকার পর আমরা আরেকজন মন্ত্রী পেলাম, যিনি ক্রীড়াঙ্গনের লোক। তিনি আবাহনীর সঙ্গে যুক্ত ও ক্রিকেট বোর্ডে আছেন অনেক দিন। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও বেশ কাছের। তিনি জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের গুরুত্ব ও ফুটবল ফেডারেশনের সমস্যার বিষয়টি অনুধাবন করবেন নিশ্চয়ই।’