ফার্গুসন–ওয়েঙ্গারও যেখানে গার্দিওলার ধারেকাছে নেই
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এবারের মৌসুমে অঘোষিত ‘ফাইনাল’তো জেতা হলো পেপ গার্দিওলার। স্প্যানিশ এই কোচের মাস্টার স্ট্রোকে কাল রাতে ৪-১ গোলে হেরেছে আর্সেনাল। এর মধ্য দিয়ে নিজের কোচিং ক্যারিয়ারে আর্সেনালকে ২০ বার হারালেন গার্দিওলা। ফুটবলের পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ‘স্কুয়াকা’ জানিয়েছে, অন্য যেকোনো প্রতিপক্ষের তুলনায় আর্সেনালকে অন্তত ৫ বার বেশি হারিয়েছেন গার্দিওলা। তবে প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচপ্রতি গড় পয়েন্ট অর্জনের হিসাবে গার্দিওলা এরই মধ্যে নিজেকে সবার ওপরে নিয়ে গেছেন।
প্রিমিয়ার লিগে কোচ হিসেবে কাল ছিল গার্দিওলার ২৫৯তম ম্যাচ। এটি তাঁর সপ্তম মৌসুম। সব মিলিয়ে এই ২৫৯ ম্যাচ থেকে ৬০৯ পয়েন্ট পেয়েছেন গার্দিওলা। কোচ হিসেবে নিজের প্রথম ২৫৯ ম্যাচে আর কোনো কোচই এত পয়েন্ট তুলতে পারেননি। এমনকি বাকি কোচদের সঙ্গে পার্থক্যটাও বেশ বড়।
লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ নিজের প্রথম ২৫৯ ম্যাচে ৫৫৭ পয়েন্ট তুলে এই তালিকায় দ্বিতীয়। চেলসির সাবেক কোচ জোসে মরিনিও ৫৫৩ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ৫৩২ পয়েন্ট নিয়ে চারে। নিজের প্রথম ২৫৯ ম্যাচে ৫১৮ পয়েন্ট তুলে পাঁচে আর্সেনালের সাবেক কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার।
এবার ম্যাচপ্রতি গড় পয়েন্টের হিসাব করা যাক। ২৫৯ ম্যাচে ৬০৯ পয়েন্ট গার্দিওলার, অর্থাৎ ম্যাচপ্রতি গড়ে ২.৩৫ পয়েন্ট করে তুলেছেন ম্যানচেস্টার সিটির এই কোচ। প্রিমিয়ার লিগে অন্তত ৫০ ম্যাচে কোচিং করিয়েছেন এই বিবেচনায় ম্যাচপ্রতি গড়ে এত বেশি পয়েন্ট নেই আর কোনো কোচের।
এই তালিকায় গার্দিওলার পর যিনি দ্বিতীয়, তাঁকে প্রিমিয়ার লিগে সেরাদের সেরা কোচ মানা হয়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ২৬ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে ৩৮ ট্রফিজয়ী স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। ইউনাইটেডকে ১৩ বার প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন বানানো ফার্গি ৮১০ ম্যাচে তুলেছেন ১,৭৫২ পয়েন্ট। ম্যাচপ্রতি তাঁর গড় পয়েন্ট ২.১৬।
২৯০ ম্যাচে গার্দিওলার সমান পয়েন্ট (৬০৯) নিয়ে তিনে লিভারপুল কোচ ক্লপ, অর্থাৎ ম্যাচপ্রতি তাঁর গড় পয়েন্ট ২.১০। এরপর যথাক্রমে রবার্তো মানচিনি, জোসে মরিনিও ও আন্তনিও কন্তে। মানচিনি সিটি কোচ হিসেবে ১৩৩ ম্যাচে ২৭৩ পয়েন্ট পেয়েছেন। ম্যাচপ্রতি তাঁর গড় পয়েন্ট ২.০৫।
মরিনিও প্রিমিয়ার লিগে তিনটি ক্লাবের কোচিং করিয়েছেন—চেলসিতে দুই মেয়াদে এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও টটেনহাম হটস্পার্স। পর্তুগিজ এই কোচ প্রিমিয়ার লিগে ৩৬২ ম্যাচে পেয়েছেন ৭৩৫ পয়েন্ট। মোট ১২ মৌসুম প্রিমিয়ার লিগে কাটিয়ে ম্যাচপ্রতি গড়ে ২.০৩ পয়েন্ট করে তুলেছেন মরিনিও।
প্রিমিয়ার লিগে চেলসি ও টটেনহামের কোচের দায়িত্বে ছিলেন ইতালিয়ান কোচ আন্তনিও কন্তে। এই প্রতিযোগিতায় চার মৌসুমে ১৩২ ম্যাচে তাঁর অর্জন ২৬৮ পয়েন্ট। ম্যাচপ্রতি গড়ে ২.০৩ পয়েন্ট করে তুলেছেন কন্তে। ম্যাচপ্রতি গড় পয়েন্টের এই হিসাবে আর্সেনালের কিংবদন্তি কোচ ওয়েঙ্গার বেশ পিছিয়ে। ২০০৩-০৪ মৌসুমে আর্সেনালকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বানানো ওয়েঙ্গার এই লিগে ২২ মৌসুমে ৮২৮ ম্যাচে কোচিং করিয়ে ১,৬২৭ পয়েন্ট পেয়েছেন। ম্যাচপ্রতি তাঁর গড় পয়েন্ট ১.৯৬।
প্রিমিয়ার লিগে যদি পয়েন্টের হিসাব করা যায়, তাহলে ফার্গুসনের ধারেকাছেও কেউ নেই। এরপরই আর্সেন ওয়েঙ্গার। তবে ম্যাচপ্রতি গড় পয়েন্টের হিসাবে গার্দিওলাই এগিয়ে। আর প্রিমিয়ার লিগ জয়ের হিসাবে গার্দিওলা দ্বিতীয়। চারবার লিগ জিতিয়েছেন সিটিকে। ফার্গুসনের রেকর্ড ১৩ বার লিগ জয়ের ধারেকাছেও নেই গার্দিওলা।
তবে এ মৌসুমে গার্দিওলার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের সংখ্যা পাঁচে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ৩৩ ম্যাচে ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে আর্সেনাল লিগ টেবিলের শীর্ষে থাকলেও সিটির সঙ্গে তাঁদের ব্যবধান মাত্র ২ পয়েন্টের। আর হাতেও আছে আর্সেনালের চেয়ে বেশিসংখ্যক ম্যাচ। ৩১ ম্যাচে ৭৩ পয়েন্ট ম্যানচেস্টার সিটির। গার্দিওলা তাই ঠিকই বলেছেন, ‘শিরোপার লাগাম এখন আমাদের হাতে।’