২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

লড়াইটা গোলাম রব্বানী–ময়মল রকিরও

বাংলাদেশের কোচ গোলাম রব্বানী ও ভারতের কোচ ময়মল রকিছবি : সংগৃহীত

ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের পর হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়ছিলেন ভারতের কোচ ময়মল রকি। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বসে ৩ ফেব্রুয়ারি ভারত-ভুটানের ম্যাচটি দেখছিলেন বাংলাদেশের কোচ গোলাম রব্বানী। ম্যাচ জয়ের পর রকিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ নারী দলের কোচ।

আজ রোববার সন্ধ্যা সাতটায় কমলাপুর স্টেডিয়ামে যখন শামসুন্নাহার-রুপনা চাকমাদের সঙ্গে লড়বেন ভারতের লিন্ডা কম, অপূর্ণা নার্জারিরা, ডাগআউটেও আছে অন্যরকম এক লড়াই। সে লড়াইটা দুই দলের কোচ গোলাম রব্বানী ও ময়মল রকির।

আরও পড়ুন

জাতীয় কিংবা বয়সভিত্তিক বাংলাদেশের ফুটবলের সব রকমের সাফল্য এনে দিয়েছেন গোলাম রব্বানী। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন করেছেন দলকে, এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে তুলেছেন। বয়সভিত্তিক সাফের একাধিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে গোলাম রব্বানীর হাত ধরে।

২০১৭ সালে জিতেছেন অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে, ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টে, একই বছর আন্তর্জাতিক জকি কাপেও হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। এরপর ২০২১ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকেও চ্যাম্পিয়ন করেন গোলাম রব্বানী। বাংলাদেশের মেয়েদের সবচেয়ে বড় সাফল্যটা তিনি এনে দেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে। কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত নারী সাফে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন শিরোপা।

নেপালের বিপক্ষে ৩–১ জয়ের ম্যাচে একটি গোল করেন শামসুন্নাহার
ছবি: প্রথম আলো

ভারতের বয়সভিত্তিক মেয়েদের অনেক সাফল্যের কারিগর আবার ময়মল রকি। কেরালা থেকে উঠে আসা রকি ২০১২ সালে বয়সভিত্তিক দলের দায়িত্ব পান। ভারতের সাবেক এই ফুটবলার প্রথমবার জাতীয় দলের দায়িত্ব পান ২০১৭ সালে। ওই সময় তিনি ভারতের নারী দলের কোচ সাজিদ ধরের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। এরপর প্রথম জাতীয় দলের কোচ হিসেবে সাফে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করেন নেপালের বিরাটনগরে, ২০১৯ সালে। ভারতের নারী দলের কোচ হিসেবে ২০১৯ সালের সাফ গেমসেও ছিলেন পোখারায়। সেখানে দলকে সোনা জিতিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

কিন্তু ২০২১ সালে হঠাৎই জাতীয় দলের কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সেই সময় সন্তানসম্ভবা রকি এরপর প্রায় দুই বছর ভারতের মেয়েদের ফুটবল থেকে দূরে ছিলেন। রকির অনুপস্থিতির প্রভাব পড়ে ভারতের নারী ফুটবলে। সাফের ইতিহাসে গত বছরই প্রথম ভারত ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টেও কোনো সাফল্য আসছিল না। শেষ পর্যন্ত অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন আবারও তাঁকে ফিরিয়ে এনেছে ভারতের কোচ হিসেবে। ৩৯ বছর বয়সী কোচ এবার এসেছেন ঢাকায় অনূর্ধ্ব-২০ দল নিয়ে।

রকির সঙ্গে গোলাম রব্বানীর দ্বৈরথটা বেশ পুরোনো। ২০১৪ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বে রকির অধীন ভারত ২-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশকে। ২০১৫ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে ভারত। ২০১৭ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে দুবারই ভারতকে হারায় বাংলাদেশ। লিগের ম্যাচে ৩-০ গোলে জয়ের পর ফাইনালে ১-০ গোলে জেতেন মারিয়া মান্দা, সানজিদা খাতুনেরা।

প্রথম ম্যাচে নেপালকে হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা
ছবি: প্রথম আলো

২০১৯ সালের সাফে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে ৪-০ গোলে হেরেছিল ভারতের কাছে। একই বছর অলিম্পিক বাছাইপর্বে ভারতের কাছে ৭-১ গোলে হারে গোলাম রব্বানীর শিষ্যরা। এরপর ২০২১ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে ভারতকে ১-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ।

আজ আবারও মুখোমুখি রকির ভারত এবং গোলাম রব্বানীর বাংলাদেশ। আজ অবশ্য জয় ছাড়া কিছু ভাবছেনই না গোলাম রব্বানী, ‘ভারত অবশ্যই শক্তিশালী দল। কিন্তু যখন থেকে সাফ বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে, ভারতের সঙ্গে অনেকবার জেতার অভিজ্ঞতা আছে আমাদের মেয়েদের। আমি মনে করি, আমাদের মেয়েরা স্বাভাবিক খেলাটা খেলবে। ওরা সেরাটাই দেবে মাঠে। জয়ের জন্য আমরা মাঠে নামব।’

আরও পড়ুন

ভারত প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ১২-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে। হ্যাটট্রিক করেছেন তিন ফুটবলার—লিন্ডা কম, অনিতা কুমারী ও নেহা। অবশ্য ভারতের চেয়ে নিজেদের খেলার দিকেই বেশি মনোযোগ রব্বানীর, ‘ভারতের খেলা আমরা গতকাল দেখেছি। অবশ্যই আমাদের পরিকল্পনা সেভাবেই সাজাব। মেয়েরা সেভাবেই খেলবে। মেয়েরা ফিট। শক্তিশালী নেপালের সঙ্গে প্রথম মিনিট থেকে ৯০ মিনিট পর্যন্ত একই ছন্দে খেলেছে। ওরা ১২টা গোল দিয়েছে। এসব নিয়ে আমাদের মেয়েদের কোনো ভাবনা নেই। আমাদের খেলা আমরা খেলব। যেহেতু শুরুতেই কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলে এসেছি। এটা আমাদের জন্য ভালো দিক। আমি মনে করি, এটাই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে আমাদের জন্য সহায়ক হবে।’

ভারতের কোচ রকি অবশ্য রব্বানীর বাংলাদেশকে সমীহই করছেন। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতেই ফাইনালে উঠতে চান তিনি, ‘এখানে যতগুলো দল খেলছে, এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে খেলবে বলে ওরা বাড়তি সুবিধা পাবে। আমরাও নিজেদের সেরাটা দিয়ে লড়ব। বাংলাদেশের চেয়ে মোটেও নিজেদের দুর্বল ভাবছি না আমরা। প্রস্তুত হয়েই এখানে খেলতে এসেছি। আশা করি, একটা উপভোগ্য লড়াই হবে এই ম্যাচে।’

নেপালে সবশেষ সাফের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ ৩-০ গোলে হারিয়েছিল ভারতকে। ওই ম্যাচের সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের মেয়েদের মনে। সেই স্মৃতিটাকেই উজ্জীবনী সুধা মেনে আজ আবারও ভারতকে হারাতে চান শামসুন্নাহাররা।