থামল জার্মান ফুটবলের ‘ভক্সওয়াগন’
প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার সুঠাম শরীর। খেলতেন ডিফেন্ডিং পজিশনে। সেটা যেকোনো জায়গায়। লেফটব্যাক, ফুলব্যাক, সেন্টারব্যাক, সুইপার, এমনকি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডেও। কড়া ট্যাকল করতেন। খুব কমই পারফরম্যান্স ওঠানামা করত। লোকে আদর করে তাই ডেকেছে দেশের খুব জনপ্রিয় গাড়ির নামে—‘ভক্সওয়াগন’।
জার্মান ফুটবলের সেই ভক্সওয়াগনের পথচলা থামল আজ মিলানের হাসপাতালে। ৮৫ বছর বয়সে মারা গেছেন জার্মানির হয়ে চারটি বিশ্বকাপ খেলা কার্ল-হেইঞ্জ স্নেলিঙ্গার। তাঁর মেয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির সহায়ক প্রতিষ্ঠান এসআইডিকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
স্নেলিঙ্গার তাঁর সেরা সময়ে ছিলেন পরিপূর্ণ লেফটব্যাকদের একজন। ইতালির জিয়াচিন্টো ফাচেত্তি, ব্রাজিলের নিল্টন স্যান্টোস ও আর্জেন্টিনার সিলভিও মারজোলিনির সঙ্গে তাঁর তুলনা হতো। ১৯৬৬ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা সাবেক এই লেফটব্যাকের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ শোক জানিয়েছে তাঁর সাবেক ক্লাব এসি মিলান, ‘কার্ল-হেইঞ্জ স্নেলিঙ্গার, মিলানের হয়ে ইতালি, ইউরোপ ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আজতেকা স্টেডিয়ামে জিয়ান্নি রিভেরার সঙ্গে শতাব্দীর সেরা ম্যাচে মূল ভূমিকায় ছিলেন কার্লেতো দেল পারন (স্নেলিঙ্গার)। কার্ল ছিল অবিস্মরণীয়, অবিস্মরণীয়। মিলান ও মিলানের সমর্থকদের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’
১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে মিলানের হয়ে ইউরোপিয়ান কাপজয়ী স্নেলিঙ্গার ১৯৬৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলেছেন। ইংল্যান্ডের কাছে অতিরিক্ত সময়ে ৪-২ গোলে হেরেছিল তাঁর দল তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি। খেলেছেন এর আগে দুটি (১৯৫৮, ১৯৬২) এবং পরে আরও একটি বিশ্বকাপেও (১৯৭০)। জার্মানির হয়ে খেলা তাঁর ৪৭ ম্যাচের ১৭টিই বিশ্বকাপে। জাতীয় দলের হয়ে ক্যারিয়ারের একমাত্র গোলটি করেছেন ’৭০ বিশ্বকাপে ঐতিহাসিক এক ম্যাচে।
আজতেকা স্টেডিয়ামে সেমিফাইনালে ইতালির কাছে অতিরিক্ত সময়ে পশ্চিম জার্মানির ৪-৩ গোলে হেরে যাওয়া সেই ম্যাচটি ইতিহাসে ‘শতাব্দীর সেরা ম্যাচ’ খ্যাতি পেয়েছে। স্নেলিঙ্গার যোগ করা সময়ে পশ্চিম জার্মানিকে সমতাসূচক গোলটি এনে দিয়েছিলেন। নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে শেষ হওয়ার পর ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়।
১৯৫৮ সালে কোলনে স্নেলিঙ্গারের পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরু। চার বছর পর কোলনের হয়ে জেতেন জার্মান চ্যাম্পিয়নশিপ। সে বছরই জার্মানির বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জেতেন। পরের বছরই (১৯৬৩) চলে যান ইতালি। সেখানে মান্তোভা ও এএস রোমার হয়ে এক মৌসুম করে খেলে ১৯৬৫ সালে যোগ দেন মিলানে। ৯ বছর ছিলেন সান সিরোর ক্লাবটিতে। ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে মিলানের হয়ে জিতেছেন সিরি ‘আ’। কোপা ইতালিয়া তিনবার জয়ের পাশাপাশি অধুনালুপ্ত ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপ জিতেছেন দুবার। ১৯৬৯ সালে জিতেছেন অধুনালুপ্ত ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপও। ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার ক্লাবগুলো এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। ২০০৪ সালের পর থেকে প্রতিযোগিতাটির জায়গা নেয় ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ।
মিলানের হয়ে মোট ৩৩৪ ম্যাচ খেলার পর ১৯৭৪ সালে জার্মানিতে ফিরে যান স্নেলিঙ্গার। সেখানে টেনিস বরুসিয়া বার্লিনে এক মৌসুম খেলার পর অবসর নেন। ইতালিতে ‘কার্লো এল বায়োন্দো’ (কার্ল দ্য ব্লন্ড) নামে পরিচিত ছিলেন স্নেলিঙ্গার। ক্যারিয়ার শেষ করে ইতালিতেই বসবাস করতেন তিনি। গত মার্চে নিজের ৮৫তম জন্মদিনে জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএকে বলেছিলেন, ‘জার্মানিতে নিজেকে ভিনদেশি মনে হয়, ইতালিতেও।’