চ্যাম্পিয়নস লিগে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার নাটাইটা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হাতে ছিল না। কাল রাতে জার্মান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখকে হারালেও শেষ ষোলোর টিকিট পেত না ইংলিশ ক্লাবটি। গ্রুপের আরেক ম্যাচে তুরস্কের গালাতাসারাইকে হারিয়ে যে সেই টিকিট পেয়েছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন। তবে বায়ার্নকে হারিয়ে অন্তত ইউরোপা লিগের নকআউট প্লে-অফ খেলার সুযোগ পেতে পারত ইউনাইটেড। কিন্তু ১-০ গোলে হেরে গিয়ে এবার ইউরোপ থেকে পুরোপুরি ছুটি পেয়ে গেছে এরিক টেন হাগের দল।
চলতি মৌসুমে ২৪ ম্যাচে ইউনাইটেড হেরেছে ১২টিতেই। ইউরোপ থেকে ছুটি পাওয়া দলটি বিদায় নিয়েছে লিগ কাপ থেকেও। আর প্রিমিয়ার লিগে ছয়ে পড়ে আছে লিগ ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দলটি।
ইংল্যান্ডের চতুর্থ ক্লাব হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে চার দলের মধ্যে চতুর্থ হয়েছে ইউনাইটেড। ছয় ম্যাচে মাত্র ৪ পয়েন্ট পেয়েছে তারা। ইংলিশ ক্লাবগুলোর মধ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে এর চেয়ে কম পয়েন্ট পাওয়ার উদাহরণ আছে মোটে একটি। ২০১২-১৩ মৌসুমে ইউনাইটেডের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী সিটি ছয় ম্যাচে পেয়েছিল ৩ পয়েন্ট। সিটির গ্রুপসঙ্গী ছিল রিয়াল মাদ্রিদ, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ও আয়াক্স আমস্টারডামের মতো ক্লাব।
প্রতিপক্ষের মাঠে তিন ম্যাচের প্রতিটিতেই ৩ গোল করেও এত কম পয়েন্ট নিয়ে ফেরাটা রীতিমতো অপরাধ। যা প্রাপ্য, তা–ই পাবেন আপনি।
তুলনায় এবার তো সহজ গ্রুপেই পড়েছিল ইউনাইটেড। বায়ার্ন, ইউনাইটেড, কোপেনহেগেন ও গালাতাসারাই—‘এ’ গ্রুপ থেকে বায়ার্নের সঙ্গী হিসেবে শেষ ষোলোতে ইউনাইটেডকেই দেখছিলেন সবাই। কিন্তু গ্রুপ পর্বে ইংলিশ ক্লাব হিসেবে সবচেয়ে বেশি ১৫ গোল খাওয়ার রেকর্ড নিয়েই বিদায় নিল দলটি। এই ১৫ গোলের ১০টিই ইউনাইটেড খেয়েছে কোপেনহেগেন ও গালাতাসারাইয়ের বিপক্ষে। দুই দলের বিপক্ষে চার ম্যাচে মাত্র একটিতে জিতেছে দলটি। কোপেনহেগেন ও গালাতাসারাইয়ের মাঠে ২ গোলে এগিয়ে গিয়েও পুরো পয়েন্ট নিয়ে ম্যাচ শেষ করতে পারেনি টেন হাগের দল।
এবার প্রতিপক্ষের মাঠে তিন ম্যাচের প্রতিটিতেই ৩ গোল করে করেছে ইউনাইটেড। কিন্তু এই তিন ম্যাচে দলটি অর্জন মাত্র ১ পয়েন্ট। ইউনাইটেডের সাবেক তারকা রিও ফার্ডিন্যান্ড এ তথ্য তুলে ধরে ধুয়ে দিয়েছেন টেন হাগের দলকে, ‘প্রতিপক্ষের মাঠে তিন ম্যাচের প্রতিটিতেই ৩ গোল করেও এত কম পয়েন্ট নিয়ে ফেরাটা রীতিমতো অপরাধ। যা প্রাপ্য, তা–ই পাবেন আপনি। আপনি যদি ঠান্ডা মাথায় নিখুঁতভাবে কিছু করতে অক্ষম হন, তবে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ শেষ করে আসতে পারবেন না।’
তবে মঙ্গলবার রাতে রুদ্ধশ্বাস কিছু হয়নি। পুরো ম্যাচে মাত্র একবারই বায়ার্নের গোলে শট নিতে পেরেছে ইউনাইটেড। লুক শর দূরপাল্লার সেই শট আবার খুব সহজেই প্রতিহত করেছেন বায়ার্ন গোলরক্ষক মানুয়েল নয়্যার।
ইউনাইটেডের আরেক সাবেক তারকা পল স্কোলস দলের আক্রমণভাগের এমন দুর্দশায় হতাশ, ‘আমার মনে হচ্ছিল, ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়া একটা দল খেলছে। এ ছাড়া আর কী বলার আছে। গোল পাওয়ার মতো কিছুই ছিল না।’
এই হারে টেন হাগের চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যায় কি না, কে জানে! ইউনাইটেডে প্রথম মৌসুমটা খারাপ কাটেনি ডাচ কোচের। কিন্তু দ্বিতীয় মৌসুমে খাবি খাচ্ছেন আয়াক্স আমস্টারডামের সাবেক কোচ। চোটের কারণে দলের সমন্বয় ঠিক করতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। সুস্থ থাকা তারকারা আবার নামের সুবিচার করতে পারছেন না। গুজব শোনা যাচ্ছে ড্রেসিংরুমের অশান্তিরও।
গত রাতের ম্যাচে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে লুক শ ও হ্যারি ম্যাগুয়ারকে। চ্যাম্পিয়নস লিগের বেশির ভাগ ম্যাচেই লিসান্দ্রো মার্তিনেজ ও কাসেমিরোকে পাননি টেন হাগ। বাজে ফর্মের কারণে বায়ার্ন ম্যাচে ছিলেন না মার্কাস রাশফোর্ডের মতো ফরোয়ার্ডও।
আমরা এখন প্রিমিয়ার লিগে মনোযোগ দিতে পারি। আমরা তো চ্যাম্পিয়নস লিগেই খেলতে চাই। তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করব শীর্ষ চারে থেকে আগামী বছর চ্যাম্পিয়নস লিগে ফিরতে।
টেন হাগ এসবকে অন্যতম কারণ বললেও চোটকে অজুহাত হিসেবে দেখাতে চাননি, ‘কেন এমন হলো? আমরা একের পর এক খেলোয়াড় হারিয়ে ফেলছি, গুরুত্বপূর্ণ সব খেলোয়াড়কে হারাচ্ছি। এবার অনেক ম্যাচেই আমাদের (সম্ভাব্য সেরা) খেলোয়াড়েরা ছিল না। এটা একটা কারণ, তবে কোনো অজুহাত নয়।’
ইউরোপ থেকে ছুটি পেলেও লিগ তো আর শেষ হয়ে যায়নি। টেন হাগের চাওয়া সব ভুলে প্রিমিয়ার লিগে মনোযোগ দেওয়া, ‘এখনো অনেক কিছুর বাকি আছে। আমরা এখন প্রিমিয়ার লিগে মনোযোগ দিতে পারি। আমরা তো চ্যাম্পিয়নস লিগেই খেলতে চাই। তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করব শীর্ষ চারে থেকে আগামী বছর চ্যাম্পিয়নস লিগে ফিরতে।’