সিটি মামলায় জিতলে খরচ দিতে হবে প্রিমিয়ার লিগের সব ক্লাবকে

ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে আর্থিক নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে শুনানি চলছেএএফপি

শুরু হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি বনাম প্রিমিয়ার লিগের মধ্যকার বহুল আলোচিত মামলার আইনি লড়াই। দীর্ঘ ছয় বছরের তদন্ত শেষে আজ লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ডিসপিউট রেজ্যুলেশন সেন্টারে প্রথম দিনের শুনানিতে অংশ নিয়েছে দুই পক্ষ। এ মামলায় যে পক্ষই জিতুক, প্রতিপক্ষের কাছে মামলার খরচ দাবি করতে পারে তারা।

আর তেমনটি ঘটলে সিটি-লিগ কর্তৃপক্ষের মামলার খরচের বোঝা চাপতে পারে প্রিমিয়ার লিগের সব কটি ক্লাবের কাঁধে। ম্যানচেস্টার সিটি যদি মামলায় জেতে এবং খরচ দাবি করে, প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষকে ২০ ক্লাবের কাছ থেকে অর্থ জোগাড় করে দিতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, মামলায় ম্যানচেস্টার সিটির খরচ হতে পারে কয়েক শ কোটি পাউন্ড।

সিটির বিরুদ্ধে প্রিমিয়ার লিগের অভিযোগ আর্থিক নীতিমালা ভঙ্গের। ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ম্যানচেস্টার সিটি স্পনসর থেকে আয় ও পরিচালন ব্যয়ে ৮০ বার নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে—এমন অভিযোগ প্রিমিয়ার লিগের। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব অভিযোগের তদন্ত চলাকালে অসহযোগিতায় আরও ৩৫টি অভিযোগ যোগ হয়।

সব মিলিয়ে ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে ১১৫টি অভিযোগ প্রিমিয়ার লিগের। দ্য টাইমসের হিসাব অনুসারে, সিটির বিরুদ্ধে মোট ১৩০টি অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে (অভিযোগের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির কারণ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ তালিকাভুক্তকরণের ভিন্নতা)।

নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছে ম্যানচেস্টার সিটি কর্তৃপক্ষ। বিবিসির খবরে বলা হয়, আজ ইন্টারন্যাশনাল ডিসপিউট রেজ্যুলেশন সেন্টারে একটি স্বাধীন কমিশনে সিটির বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি শুরু হয়েছে। এ মামলায় বিচারক হিসেবে কারা আছেন, জানা যায়নি। তবে দুই পক্ষই আইনজীবী হিসেবে অভিজ্ঞদের দ্বারস্থ হয়েছে।

প্রিমিয়ার লিগের আইনজীবী দলের নেতৃত্বে আছেন অ্যাডাম লুইস, ক্রীড়া আইনের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে যাঁর সুনাম আছে। আর ম্যানচেস্টার সিটির আইনি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন লর্ড প্যানিক। যুক্তরাজ্যে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ থেকে শুরু করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের হয়ে আইনি লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। এ ছাড়া ২০২০ সালে সিটির বিরুদ্ধে দেওয়া উয়েফার ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞার মামলায়ও লড়াই করেছিলেন প্যানিক। ক্রীড়া ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ আদালতে সে মামলায় সিটিই জিতেছিল।

প্রিমিয়ার লিগের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ম্যানচেস্টার সিটি
রয়টার্স

বিবিসির খবরে বলা হয়, প্যানিক তাঁর প্রতি ঘণ্টা সেবার জন্য পাঁচ হাজার পাউন্ড করে নিয়ে থাকেন। আইনজীবী দলের পাশাপাশি পুরো মামলায় বেশ বড় অঙ্কের অর্থ খরচ হচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটির। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত শেষে শুনানিতে আসা প্রিমিয়ার লিগের খরচও বড় অঙ্কেরই। শুনানি শুরুর আগে দুই পক্ষের যা প্রাক্কলন, তাতে পুরো মামলার খরচ কয়েক শ কোটি পাউন্ড ছাড়িয়ে যাবে।

আরও পড়ুন

আইন অনুযায়ী, মামলায় জিতে যাওয়া পক্ষ অপর পক্ষের কাছ থেকে মামলার খরচ দাবি করতে পারে। বিবিসি বলছে, এই বিপুল অর্থ খরচের এ মামলায়ও সেটি ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ জিতে গেলে সিটির কাছ থেকে খরচ দাবি করা হতে পারে। যা বহন করতে হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মনসুরের নেতৃত্বাধীন ক্লাবটিকে।

কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের বদলে যদি ম্যানচেস্টার সিটি জেতে এবং খরচ দাবি করে, তখন সিটির জন্য অর্থ দিতে হবে প্রিমিয়ার লিগের সব ক্লাবকেই। প্রিমিয়ার লিগে খেলে ২০টি ক্লাব, এর মধ্যে সিটিও আছে। প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষের যা খরচ হবে, ভাগ করে দিতে হবে সব দলকে।

সিটি-প্রিমিয়ার লিগের মামলাটির রায় কবে হবে, এখনই সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে নভেম্বরে শুনানি শেষ হয়ে ২০২৫ সালের প্রথম দিকে রায় হতে পারে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। এ মামলার রায়ে অসন্তুষ্ট পক্ষ আপিল করতে পারবে। তবে সেই আপিল শুনানি হবে ভিন্ন বিচারকদের প্যানেলে।

আরও পড়ুন