জয় দিয়েই বুসকেতস–আলবাকে বিদায় জানাল ক্যাম্প ন্যু
জর্দি আলবার চোখের জল বাঁধ মানছিল না। সের্হিও বুসকেতস আবার হাসিই থামাতে পারছিলেন না। দুজনের বিদায়ের ধরন দুই রকম হলেও ক্যাম্প ন্যুতে আসা প্রায় ৯০ হাজার দর্শক দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে তাঁদের সম্মান জানিয়েছে। ক্যাম্প ন্যু কাল রাতে আক্ষরিক অর্থেই আবেগ প্রদর্শনের মঞ্চ হয়ে উঠেছিল, বেজেছিল করুণ সুর। বুসকেতস, আলবা আর ক্যাম্প ন্যু মিলে গিয়েছিল এক বিন্দুতে। উপলক্ষ—তিন আইকনের একসঙ্গে বিদায়।
লা লিগায় ১০ জনের মায়োর্কাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে সেটা জয়ের রঙেই রাঙিয়েছে বার্সেলোনা। প্রথমার্ধে আনসু ফাতি জোড়া গোল করার পর দ্বিতীয়ার্ধে জাল কাঁপান গাভি। তবে ফল ছাপিয়ে আলোচনায় তিনটি নাম। বার্সার পরম আপন হয়ে ওঠা বুসকেতস ও আলবা যে প্রিয় ক্লাবের জার্সিতে ঘরের মাঠে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলেছেন। আর সংস্কারের জন্য কিছুদিনের বন্ধ হতে যাওয়া ক্যাম্প ন্যু জায়গা করে নিয়েছে মানুষের স্মৃতিতে।
ম্যাচ শেষ হতেই মাঠে নেমে আসেন বার্সার সব খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সদস্যরা। ক্রাচে ভর করে নেমে আসেন এ ম্যাচেই ভয়ংকর ট্যাকলের শিকার হওয়া আলেহান্দ্রো বালদে। ক্যাম্প ন্যুর জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হয় কাতালান ক্লাবটির স্মরণীয় কিছু পারফরম্যান্স। দুই ক্লাব কিংবদন্তির নানা কারিকুরি। এরপর এ মৌসুমে বার্সার জেতা দুটি ট্রফি (লা লিগা ও কোপা দেল রে) নিয়ে আসেন বুসকেতস ও আলবা। সে সময় দুজনকে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। পরে তাঁদের শূন্যে ভাসিয়ে বিদায়ী মুহূর্তও আনন্দঘন করে তোলেন সতীর্থেরা।
২০০৮ সালে বার্সার মূল দলে যোগ দেন বুসকেতস। আলবা আসেন ২০১২ সালে। বার্সার সোনালি সময়ের শেষ দুই প্রতিনিধির ক্লাবটির হয়ে খেলা ম্যাচ যোগ করলে সংখ্যাটা ১১৮১! জিতেছেন সম্ভাব্য সব শিরোপা। গত এক যুগে বার্সার সব আনন্দ-বেদনার সাক্ষী তাঁরা। বিদায়বেলায় তাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়াই স্বাভাবিক।
বিদায়ী বক্তব্যে বুসকেতস বলেছেন, ‘ছোটবেলাতেই স্বপ্ন দেখেছি, একদিন আমি এই স্টেডিয়ামে (ক্যাম্প ন্যু) খেলব। আজ (কাল) এখানে দাঁড়ি পড়ে গেল। এখন আমি চলে যাচ্ছি। তবে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, সে পূরণ করেই যাচ্ছি। যেখানেই গিয়েছি, মনে হয়েছে এটা বিশ্বসেরা ক্লাব। এই গৌরব পৃথিবীর কেউ আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’
যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে পাশে ছিলেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ বুসকেতস, ‘এই দীর্ঘ ভ্রমণে যেসব খেলোয়াড়, কোচ, কর্মীরা আমাকে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। আর আপনাদের (ভক্তদের উদ্দেশে) তো অবশ্যই। আমার পরিবারকেও ধন্যবাদ। মাঠে সেরাটা দেওয়ার জন্য আমাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য। আপনাদের সবাইকে ভালোবাসি। আমি সত্যিই খুব খুশি।’
ভবিষ্যতে ক্যাম্প ন্যুতে ফিরবেন বলেও জানিয়েছেন বুসকেতস, ‘এটা আমার প্রাণের ক্লাব। এখানে থেকেই অনেক শিরোপা জিতেছি। তবে এটাকে আমি শুভ বিদায় বলছি না, শিগগিরই আবার দেখা হবে। বার্সা দীর্ঘজীবী হোক, কাতালোনিয়া দীর্ঘজীবী হোক।’
আলবা বলেছেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ। এই জার্সি পরে এতগুলো বছর ডিফেন্ডারের দায়িত্ব পালন করতে পারা সম্মানের। আজ আমি তাঁদের স্মরণ করছি, যাঁরা আমার ক্যারিয়ারে বড় ভূমিকা রেখেছেন।’
বার্সার হয়ে ১৭টি ট্রফি জিতলেও বিদায়ের রাতটাকেই সেরা মনে করেন আলবা, ‘এত মানুষের ভালোবাসা পাব, ভাবিনি। সত্যি বলছি, এটাই আমার জীবনের সেরা দিন। আমি বিশেষ একজনের নাম বলতে চাই, যিনি ২০১২ সালে আমাকে এখানে এনেছিলেন। তিনি তিতো ভিলানোভা (বার্সার প্রয়াত কোচ)।’
আলহান্দ্রো বালদে আসার পর শুরুর একাদশে আর নিয়মিত হতে পারেননি আলবা। তবে নিজেকে বার্সার গুরুত্বপূর্ণ অংশই মনে করতেন এই ডিফেন্ডার, ‘আমি এ মৌসুমে খুব বেশি ম্যাচ পাইনি। তবে নিজেকে কখনো কম গুরুত্বপূর্ণ ভাবিনি। আমি সবাইকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। এটার জন্য আমি গর্বিত।’