২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

আর্সেনালে যাওয়া ইউরোর ইতালিয়ান–চমক কে এই কালাফিওরি

ইতালিয়ান ডিফেন্ডার রিকার্ডো কালাফিওরিএক্স

ইউরোতে ইতালি বনাম ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচে যোগ করা সময়ের খেলা চলছিল তখন। ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা ইতালি কাঁপছিল বিদায়ের শঙ্কায়। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে সেটি ছিল ইতালির সম্ভাব্য শেষ আক্রমণ। মাঝমাঠ থেকে দৌড় শুরু করেন রিকার্ডো কালাফিওরি

এই সেন্টার-ব্যাক যখন প্রতিপক্ষ বক্সের কাছাকাছি আসেন, তখন ক্রোয়েশিয়ার বেশির ভাগ খেলোয়াড় তাঁকে ঘিরে তৈরি করেন দুর্গ। কালাফিওরি চাইলে তখনই পাস দিতে পারতেন। সামনে তিন খেলোয়াড় অপেক্ষাতেও ছিলেন। কিন্তু এই ডিফেন্ডার তা না করে আরও একটু এগিয়ে বক্সের লাইনে চলে আসেন।

আরও পড়ুন

ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়েরাও তাঁকে আটকাতে আরও ঘন হয়ে আসেন। কালাফিওরি অপেক্ষায় ছিলেন এমন একটি মুহূর্তের। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের কাছে টেনে নিয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে তিনি বল বাড়িয়ে দেন মাতিয়া জাকাগনিকে। বল পাওয়ার গোলরক্ষককে ফাঁকি দেওয়ার কাজটাই শুধু করতে হতো জাকাগনিকে। সেটি ঠিকঠাকভাবে করে ম্যাচ ড্র করার পাশাপাশি ইতালিকে শেষ ষোলোতে নিয়ে যান জাকাগনি।

তবে গোলদাতা জাকাগনির চেয়ে এই গোলের পর বেশি আলোচনায় আসেন কালাফিওরি। যেন এই গোল বানিয়ে দিয়েই ফুটবল দুনিয়ায় নিজের আগমনী বার্তাটা দেন বোলোনিয়োর এই সেন্টার-ব্যাক। তবে এই গোলটি বাদ দিলেও ইউরোতে তিন ম্যাচ খেলে নিজেকে চিনিয়ে দেন কালাফিওরি। এরপর থেকেই তাঁকে ঘিরে তৈরি হয় আলোচনা। ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোও হাত বাড়ায় তাঁর দিকে, যা তাঁকে এবার নিয়ে এসেছে আর্সেনালে। বোলোনিয়া থেকে ৪ কোটি ২০ লাখ পাউন্ডে ৫ বছরের জন্য আর্সেনালে এসেছেন এই ইতালিয়ান।

ইতালির তরুণ ডিফেন্ডার কালাফিওরি
ফেসবুক

গোলে সহায়তা করে আলোচনা আসলেও কালাফিওরির মূল কাজ গোল বাঁচানো। আর সেই কাজেও নিজের সামর্থ্যের দুর্দান্ত প্রমাণ দিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের কথাই ধরা যাক। সেদিন অ্যারিয়েল ডুয়েলে (হাওয়ায় বল দখলের দ্বৈরথ) জিতেছেন  শতভাগ, সঠিক ক্রস দিয়েছেন শতভাগ, সঠিক পাস ৯৩ শতাংশ, পাস সম্পন্ন করেছেন ৫৭টি। সুযোগ তৈরি করেছেন ৪টি (দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি), বড় সুযোগ সৃষ্টি করেছেন ১টি এবং অ্যাসিস্ট ১টি।

অর্থাৎ রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি আক্রমণেও সমানতালে অবদান রেখেছেন তিনি। আর এমন পারফরম্যান্সের পর ২২ বছর বয়সেই তাঁর মাঝে খোঁজা হচ্ছে পাওলো মালদিনি-আলেসান্দ্রো নেস্তাদের ছায়া। বলে রাখা ভালো, ইতালি ইউরোর দ্বিতীয় রাউন্ডে সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিলেও সেদিন নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি কালাফিওরি।

আরও পড়ুন

আর্সেনালে ৩৩ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামার অপেক্ষায় থাকা কালাফিওরি নিজের নতুন ঠিকানা বলেছেন, ‘এটা অসাধারণ অনুভূতি। বিষয়টা ঘটার আগপর্যন্ত কঠিনই মনে হচ্ছিল। তবে শেষ আমি এখানে। এখন দলের হয়ে অনুশীলনে নামার এবং সমর্থকদের জন্য খেলার অপেক্ষায় আছি। আমি কোচ এবং অন্যদের সঙ্গে অনেক কথা বলেছি। তারা আমাকে রাজি করিয়েছে। অবশ্য আমি এরই মধ্যে রাজিই ছিলাম। আমি মনে করি এটা আগামী কয়েক বছরের জন্য আমার সেরা প্রজেক্ট হতে যাচ্ছে।’

কালাফিওরির এত দূর পর্যন্ত আসাটা অবশ্য সহজ ছিল না। ক্যারিয়ার শুরু হতে না হতেই বড় ধাক্কা খেয়েছিলেন তিনি। ৬ বছর আগে মারাত্মক এক হাঁটুর চোটে পড়েন ২২ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার। এই চোটে ক্যারিয়ারই শেষ হওয়ার আশঙ্কায় পড়েছিল। সে সময় চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, এমন চোট সাধারণ ফুটবলে নয়, দেখা যায় মোটোক্রসে (একধরনের মোটরসাইকেল প্রতিযোগিতা, যা মূলত বিশেষভাবে তৈরি করা জটিল রাস্তায় খেলা হয়।)

এমনকি প্রতি ১০ বছরে সাধারণ একজন মানুষ এ ধরনের চোটের শিকার হন বলেও মন্তব্য করেন এক চিকিৎসক। এমনকি প্রতি ১০ বছরে সাধারণত একজন মানুষ এই চোটের শিকার হন বলেও মন্তব্য করেন এক চিকিৎসক। তবে ভয়াবহ এই চোট সামলে ঠিকই ফিরে এসেছেন কালাফিওরি। আর এখন দৃষ্টি বিশ্বসেরা ডিফেন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করায়।