৩০ গোল আর ঘুরে দাঁড়ানোর ‘বৃহস্পতিবার রাত’
যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে ‘থার্সডে নাইট’ নামের একটি রাত আছে। বৃহস্পতিবার রাতে হওয়া এনএফএলের (ন্যাশনাল ফুটবল লিগ) ম্যাচগুলো সম্প্রচারে এই নামটি ব্যবহার করা হয়। দুই মৌসুমের মধ্যে বিরতি চলায় এ সপ্তাহে ‘থার্সডে নাইটে’ কোনো ম্যাচ ছিল না।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে না হলেও বিশ্বজুড়ে ফুটবলের দর্শকেরা গত রাতকে মনে রাখবেন ‘থার্সডে ফুটবল’ নামেই। এই রাতে ঘণ্টা তিন-চারেকের মধ্যে মাঠে নেমেছিলেন বিশ্ব ফুটবলের বেশির ভাগ নামী তারকা, খেলতে নেমেছিল জনপ্রিয় ক্লাবগুলো। গুরুত্ব বা মর্যাদার বিচারে ম্যাচগুলো হয়তো ‘বড়’ ছিল না, তবে লড়াই, পাল্টা লড়াই আর প্রত্যাবর্তনের জমজমাট গল্প ছিল।
শুধু ফুটবল কেন, বৃহস্পতিবার রাতে টেনিসও দেখেছে অবিস্মরণীয় এক লড়াই। আবার দর্শক উন্মাদনার জেরে দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু দেখা ম্যাচেও ছিল উত্তেজনা। স্পেনের কোপা ডেল রেতে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার ম্যাচ থেকে শুরু করে সৌদি আরবের রাজধানীতে মেসি-রোনালদোর মর্যাদার ম্যাচ, ইংল্যান্ডে প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার সিটির দুর্দান্ত ঘুরে দাঁড়ানো থেকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অ্যান্ডি মারের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন, আর সেই সঙ্গে প্রায় তিন যুগ পর ইরাকের উপসাগরীয় কাপজয় মিলিয়ে রাতটি ছিল রোমাঞ্চকর সব মুহূর্তে ভরা।
কোপা ডেল রেতে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার ম্যাচ
গত রোববার সৌদি আরবের রাজধানীতে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনাল খেলেছে দুই দল। দেশে ফিরেই এক দিনের প্রস্তুতি নিয়ে দৌড়াতে হয়েছে প্রতিপক্ষের মাঠে। তবে কোপা ডেল রের শেষ ষোলোর নিজ নিজ ম্যাচে হাসিমুখেই মাঠ ছেড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে রিয়াল প্রথমার্ধেই হজম করেছিল দুই গোল। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখে দ্বিতীয়ার্ধে তিন গোল করে ৩-২ ব্যবধানে জিতেছে কার্লো আনচেলত্তির দল। একটি করে গোল করেন দানি সেবায়োস, এদের মিলিতাও ও ভিনিসিয়ুস জুনিয়র।
ভিয়ারিয়াল-রিয়াল ম্যাচের মতো ৫ গোল হয়েছে বার্সেলোনা-সেউতা ম্যাচেও। পার্থক্য হচ্ছে, এই ম্যাচে সব কটি গোলই করেছে বার্সা। স্প্যানিশ লিগের তৃতীয় স্তরের দলটির বিপক্ষে বার্সেলোনার হয়ে জোড়া গোল করেন রবার্ট লেভানডভস্কি। অন্য তিনটি গোল রাফিনিয়া, আনসু ফাতি ও ফ্রাঙ্ক কেসির। বার্সেলানা, রিয়াল মাদ্রিদ দুই দলই এখন কোয়ার্টার ফাইনালে। আজকের ড্রতে অন্যান্য দলের সঙ্গে তাদেরও প্রতিপক্ষ নির্ধারণ হবে।
মরুর বুকে মেসি-রোনালদোর ৯ গোলের রোমাঞ্চ
প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ ছিল না। কাতারি মালিকানাধীন পিএসজি প্রতিবছরই মধ্যপ্রাচ্যে সফর করে একটি ম্যাচ খেলে। এবার সেই ম্যাচের প্রতিপক্ষ ছিল সৌদি আরবের ক্লাব ফুটবলারদের নিয়ে গড়া দল। বছরের শুরুতে আল নাসরে যোগ দেওয়ায় যে দলের অংশ হয়ে যান ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। পিএসজি-রিয়াল অল স্টারের ম্যাচটি পরিণত হয় মেসি-রোনালদোর লড়াইয়ে।
রিয়াদের কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামের ম্যাচটিতে গোল করেছেন দুজনই। ম্যাচের প্রথম গোলটি করেন মেসি, পরে এক পেনাল্টিসহ রোনালদো করেন দুটি। তবে ম্যাচটি মেসি-রোনালদোয় সীমাবদ্ধ থাকেনি। গোলের পর গোল হয়েছে, এক বার পিএসজি এগিয়েছে তো একবার অল স্টার টপকে গেছে।
এর মধ্যে নেইমার পেনাল্টি মিস করেছেন, কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টিতে গোল করেছেন। সব মিলিয়ে জমজমাট এক ম্যাচ। যে লড়াই শেষ হয়েছে পিএসজির ৫-৪ ব্যবধানের জয়ে।
দর্শকের দুয়োর পর প্রত্যাবর্তনের গল্প সিটির
ইতিহাদে টটেনহাম হটস্পারের বিপক্ষে হার দেখছিল ম্যানচেস্টার সিটি। প্রথমার্ধেই পিছিয়ে ছিল দুই গোলে। টানা তৃতীয় হার চোখরাঙানি দিচ্ছে দেখে দর্শকেরা দুয়ো দিলেন খেলোয়াড়দের। আর তাতেই কিনা তেতে উঠল ম্যানচেস্টার সিটি।
দ্বিতীয়ার্ধে টটেনহামকে ওই দুই গোলেই আটকে রাখলেন ডিফেন্ডাররা, আর আক্রমণভাগে একের পর গোল করে গেলেন ফরোয়ার্ডরা। হুলিয়ান আলভারেজ ও আর্লিং হলান্ড সমতা এনে দেওয়ার পর জোড়া গোলে জয় নিশ্চিত করেন রিয়াদ মাহরেজ। প্রথমার্ধে পিছিয়েও সিটি জিতেছে ৪-২ ব্যবধানে।
মেলবোর্নে মারের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
এটিপি র্যাঙ্কিংয়ে যিনি ১৫৯ নম্বরে, কখনো গ্র্যান্ড স্লামের চতুর্থ রাউন্ডেও উঠতে পারেননি, সেই থানাসি কোক্কিনাসই ভড়কে দিয়েছিলেন অ্যান্ডি মারেকে। দুবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনজয়ী ব্রিটিশ তারকাকে প্রথম ২ সেটে হারিয়ে দেন অ্যাডিলেডের ২৬ বছর বয়সী খেলোয়াড়টি। এমনকি তৃতীয় সেটেও এগিয়ে গিয়েছিলেন ৫-২ গেমে। তবে এরপরই ঘুরে দাঁড়ানোর দুর্দান্ত গল্প লেখেন ৩৫ বছর বয়সী মারে।
দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের লড়াই শেষে ম্যাচ জিতে নেন ৪-৬, ৬-৭ (৪-৭), ৭-৬ (৭-৫), ৬-৩, ৭-৫ গেমে। মাঝরাতে শুরু হওয়া ম্যাচ শেষ হয় অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় ভোররাত ৪টা ৫ মিনিটে। গ্র্যান্ড স্ল্যামের ইতিহাসে রাতে দেরিতে ম্যাচ শেষ হওয়ার তালিকায় মারের এই ম্যাচ এখন দুইয়ে। ২০০৮ সালে এই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেরই তৃতীয় রাউন্ডে মার্কোস বাগতাদিস-লেটন হিউটের ম্যাচটি শেষ হয়েছিল ভোররাত ৪টা ৩৪ মিনিটে।
বসরায় আনন্দ-বেদনার রজনী
বসরায় অ্যারাবিয়ান গালফ কাপ ফাইনাল ছিল ইরাক-ওমানের। নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখার সুযোগ না পাওয়া ইরাকিদের মধ্যে ম্যাচটি ঘিরে উন্মাদনা তৈরি হয়। আর সেই উন্মাদনায় টিকিট ছাড়াই বসরা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে হাজির হন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। গ্যালারির ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার হলেও একসঙ্গে বিপুল মানুষের হুড়োহুড়িতে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন নিহত এবং প্রায় এক শর মতো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
তবে এর মধ্যেও ম্যাচ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। গোল, পাল্টা গোলের ম্যাচটি ১২২তম মিনিটের তৃতীয় গোলে ওমানকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ইরাক। ১৯৮৮ সালের পর এটিই দেশটির প্রথম উপসাগরীয় শিরোপা।