সরকারি জমি পেয়েও মন খারাপ ঋতুপর্ণার
সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য ঋতুপর্ণা চাকমা। পাহাড়ি কন্যা ঋতু–রূপনাদের কল্যাণে দু–দুবার আনন্দে ভেসেছে দেশ। পিছিয়ে পড়া পার্বত্য চট্টগ্রামও যে জাতীয় অর্জনে অবদান রাখতে পারে, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পাহাড়ের এই নারী ফুটবলাররা। শিরোপা জয়ের পর দুবারই রাঙামাটিতে বিশাল সংবর্ধনা পেয়েছেন ঋতু–রূপনারা। প্রশাসনসহ অনেকের অনেক প্রতিশ্রুতিও মিলেছিল।
সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঋতুপর্ণাকে ঘর নির্মাণের জন্য ১২ শতক জমি বরাদ্দ দিয়েছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। শুধু জমি নয়, ঘর তোলার জন্য প্রাথমিকভাবে ৪ লাখ টাকাও দিয়েছে তারা। এতে দারুণ উচ্ছ্বসিত ঋতুপর্ণা। বৃহস্পতিবার রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিকুর রহমানের সঙ্গে গিয়ে জমি দেখেও এসেছেন ঋতু। সেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। সঙ্গে ঋতুর স্বজনেরাও ছিলেন।
কিন্তু এই উচ্ছ্বাস বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। জানা গেছে, ঋতুকে ওই জমিতে ঘর নির্মাণ না করতে নানাভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এমনকি ওই জমি পাওয়ার জন্য অন্য একটি পক্ষ তদবির করে যাচ্ছে বলেও শোনা গেছে। ঋতুপর্ণা এতে মর্মাহত হয়ে পড়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন মন খারাপ করে।
প্রথম আলোকে ঋতুপর্ণা বলেন, ‘আমাকে ঘর নির্মাণের জন্য জমি দিয়েছে প্রশাসন। চার লাখ টাকাও বরাদ্দ দিয়েছে। এটাতে সত্যি আনন্দিত। খুবই খুশি হয়েছি। আমার মা–বোনেরাও খুশি। কিন্তু একটা মহল বিষয়টাতে বাধা সৃষ্টি করছে।’
কাউখালী উপজেলার মগাছড়ি এলাকার বাসিন্দা ঋতুপর্ণা। সে কারণে ওই উপজেলায় তাঁর জন্য সরকারি খাসজমি বরাদ্দ দিয়েছে প্রশাসন। জমি বরাদ্দের পর ১৬ মার্চ জেলা প্রশাসন ঘর নির্মাণের জন্য চার লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ঋতুপর্ণারা চার বোন, এক ভাই। ভাই মারা গেছেন। বোনদের মধ্যে সবার ছোট ঋতু। এখন মা–সহ থাকেন নিজেদের পুরোনো ভিটায়।
ঘাগড়ায় সড়কের পাশে অবস্থিত এই জমির এখন কোনো দখলদার নেই। তবে জমি পাওয়ার জন্য উপজাতীয় কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি আগে থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য তারা হেডম্যানের প্রতিবেদন নিয়ে তা জেলা প্রশাসনে বরাদ্দের জন্য আগেই জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। ঋতুকে দেওয়ার পর ব্যবসায়ীরা নতুন করে তৎপর হয়েছেন জমির জন্য। এ জন্যই মূলত জটিলতা দেখা দিয়েছে।
রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘ঋতু আমাদের দেশের গর্ব। তাই জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় তাঁকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ে ২০০১ সাল থেকে বন্দোবস্তি প্রদান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ঋতুর বিষয়টা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল অবগত। যে জটিলতা দেখা দিয়েছে, তা আশা করি কেটে যাবে। তাঁকে আমরা ঘর নির্মাণ করে দিতে পারব।’
আগামী সোমবার বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বৈঠক হবে। সেখানে বিষয়টার একটা মীমাংসা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপজাতীয় কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য অর্জুন মণি চাকমা নিজে ঘাগড়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তিনি আবার ঋতুপর্ণার প্রতিবেশীও।
অর্জুন মণি চাকমা বলেন, ‘ঋতুকে একটা জমি দিয়েছে, তাতে আমরা আনন্দিত। যে জমি দিয়েছে, তা উপজাতীয় কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য হেডম্যানের স্বাক্ষরসহ আবেদন করেছিল আগে। এ জন্য হয়তো একটু কথা হচ্ছে এটা নিয়ে। তবে সোমবার বৈঠকে সমাধান হয়ে যাবে আশা করি। ঋতু নতুন জমিতে ঘর করলে আমরা অবশ্যই খুশি।’
‘সড়কটি এত দিন পর অনুমোদন হয়েছে। আশা করি কাজ শুরু হবে। আমরা খুবই খুশি। বাড়িটাও যেন ঠিকমতো হয়, এটাই প্রত্যাশা।
এর আগে ২০২২ সালে প্রথম সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গোলরক্ষক রূপনা চাকমাকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। সেবার ঋতুপর্ণাদের মগাছড়ির বাড়ির সড়কটি পাকাকরণের জন্যও আবেদন করেছিলেন ঋতু। ওই সড়কটি এত দিন হয়নি। তবে এবার ওই সড়ক নির্মাণের বরাদ্দও হয়ে গেছে।
ঋতুপর্ণা বলেন, ‘সড়কটি এত দিন পর অনুমোদন হয়েছে। আশা করি কাজ শুরু হবে। আমরা খুবই খুশি। বাড়িটাও যেন ঠিকমতো হয়, এটাই প্রত্যাশা। আমরা পাহাড়ের মেয়েরা পাঁচজন শুরু থেকে জাতীয় দলে ছিলাম। এখনো কয়েকজন আছি। দেশের মুখ আরও উজ্জ্বল করতে চাই।’